সোমবার (২৯ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় খুবির কবি জীবনানন্দ দাস একাডেমিক ভবনের মাল্টিপারপাস কক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইনস্টিটিউটের প্রিন্টমেকিং ডিসিপ্লিনের উদ্যোগে এ কর্মশালা উদ্বোধন করা হয়।
প্রিন্টমেকিং ডিসিপ্লিন প্রধান ড. নিহার রঞ্জন সিংহের সভাপতিত্বে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ ফায়েক উজ্জামান।
উপাচার্য বলেন, প্রিন্টমেকিং ডিসিপ্লিন এই কর্মশালার মধ্যদিয়ে দেশ বরণ্যে শিল্পীকে কাছে পেয়েছে এতে করে শিক্ষার্থীরা খুবই উপকৃত হবে। প্রকৃতপক্ষে বড় মানুষের সংস্পর্শে আসলে নতুন নতুন প্রেরণার সৃষ্টি হয়। শিল্পের সৃজনে আবহ ও পরিবেশ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। শিল্পীর জন্য নির্জনতা ও পরিবেশ দরকার হয়। শিল্পীর কাজ সমাজে রুচিবোধ পরিবর্তন। চারুকলা ও সাহিত্য চর্চা রুচিবোধ ও বিবেককে জাগ্রত করে, পরির্বতন ঘটায়।
তিনি বলেন, একটি আদর্শ সমাজ নিরুপিত হয় সেই সমাজের মানুষ কতোটা সাহিত্য ও শিল্প চর্চা করে, তারা কতোটা শিল্পীত তার ওপর নির্ভর করে। যে সমাজের মানুষ শিল্পীত, সেই শিল্পীত মানুষের রাষ্ট্রই শিল্পীত রাষ্ট্র, যেখানে প্রত্যেক মানুষ নিজেই নিজের কাজ বাঁধাহীনভাবে, দায়িত্ববোধের সঙ্গে করতে পারে।
উপাচার্য খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলার সব ডিসিপ্লিনের বিকাশের মাধ্যমে এখান থেকে ভবিষ্যতে খ্যাতিমান শিল্পী তৈরি হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
বরেণ্য অগ্রজ শিল্পী শশিভুষণের সংগৃহীত ছবি নিয়ে একটি প্রদশর্নীর আয়োজন করা এবং প্রিন্টমেকিং ডিসিপ্লিনের সঙ্গে সময়ের চাহিদা লক্ষ্য করে গ্রাফিক্স ডিজাইন যুক্ত করার ওপর গুরুত্বারোপ করেন উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ ফায়েক উজ্জামান।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন চারুকলা ইনস্টিটিউটের পরিচালক প্রফেসর ড. আহমেদ আহসানুজ্জামান।
তিনি বলেন, একজন শিল্পী নানা ঘাত-প্রতিঘাতের মধ্যদিয়ে সামনে দিকে এগিয়ে যান, প্রতিকূলতাকে জয় করেন। একজন প্রকৃত শিল্পীর অবসর হওয়ার সুযোগ নেই। শিল্পীর ক্ষুধা কখনো শেষ হয় না। খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা সমৃদ্ধির সোপানে এগিয়ে যাবে এবং যারা এ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ভবিষ্যতে তারা বরেণ্য শিল্পী হবে বলে তিনি প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন।
রিসোর্স পারসন হিসেবে অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রিন্টমেকিং বিভাগের শিক্ষক দেশবরেণ্য চিত্রশিল্পী অধ্যাপক মাহমুদুল হক।
তিনি বলেন, চিত্রকলা দিয়ে মনের ভাব প্রকাশ করা যায়, বাস্তব অভিজ্ঞতা প্রতিফলিত করা যায়। চিত্রকলা যেনো আরও মানুষকে কাছে টানে শিল্পীদের সে প্রচেষ্টা করতে হবে। ছবি এঁকে জীবন ধারণ করা যায়, দেশ-বিদেশে যাওয়া যায়, সম্মানিত হওয়া যায়। শিল্পকর্ম একটি নান্দনিক কাজ, টেকনিক্যাল কাজ। এ শিক্ষা লাভ করে কেউ আমাদের দেশে বেকার নেই।
তিনি খুলনাঞ্চলের মানুষ হিসেবে খুলনায় চারুকলা শিক্ষার বিকাশে সবসময়ই নিজেকে সম্পৃক্ত রেখেছেন, প্রচেষ্টা চালিয়েছেন উল্লেখ করে অধ্যাপক মাহমুদুল হক বলেন, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলার বিকাশ তাকে আশাবাদী করে তুলেছে। সম্মিলিত প্রচেষ্টায় এ প্রতিষ্ঠানকে সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। এ শিক্ষার প্রসারে তিনি তার সম্ভব সহায়তার আশ্বাস দেন।
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন- ডিসিপ্লিনের শিক্ষক বেবী সুলতানা।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন- কলা ও মানবিক স্কুলের ডিন অধ্যাপক ড. সাবিহা হক, চারুকলা ইনস্টিটিটের সব ডিসিপ্লিনের শিক্ষক ও প্রিন্টমেকিং ডিসিপ্লিনের শিক্ষার্থীরা।
অনুষ্ঠান শেষে বরেণ্য চিত্রশিল্পী অধ্যাপক মাহমুদুল হকের জীবন ও কর্ম নিয়ে পাওয়ার পয়েন্টে একটি ডকুমেন্টরি প্রদর্শন করা হয়। খ্যাতনামা এ চিত্রশিল্পী সানুগ্রহে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রিন্টমেকিং ডিসিপ্লিনে পাঁচদিনের এ কর্মশালায় সময় দিচ্ছেন। এই কর্মশালার মাধ্যমে তার নিজের এবং নবীন শিল্পীদের যে শিল্পকর্মগুলো পাওয়া যাবে তা নিয়ে ভবিষ্যতে একটি প্রদর্শনীর আয়োজন করা হবে বলে ডিসিপ্লিন প্রধান আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
বাংলাদেশ সময়: ২১১৩ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৯, ২০১৮
এমআরএম/জিপি