প্রশ্ন ফাঁসের অভিযোগ সংক্রান্ত তথ্য যাচাই-বাছাই কমিটির দ্বিতীয় সভা শেষে কমিটির প্রধান কারিগরি ও মাদরাসা শিক্ষা বিভাগের সচিব মো. আলমগীর এ কথা জানান।
রোববার (১৮ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে কমিটির দ্বিতীয় সভা শেষে মো. আলমগীর বলেন, প্রশ্নপত্র কখন আউট হয়েছে, পত্র-পত্রিকায় এসেছে- সেটা আমাদের মেলাতে হবে।
প্রশ্ন ফাঁস হয়েছে কিনা- প্রশ্নে সচিব বলেন, আমরা মিলিয়ে দেখবো। ২৫ তারিখে বসে বাকি যে কয়টা আছে সেগুলো দেখে ফাঁস হওয়ার যে অভিযোগ আছে সে প্রশ্নগুলো নেবো এবং আমাদের পরীক্ষায় যে প্রশ্ন হয়েছে সেটা দেখবো। দেখে তখন ঠিক করবো।
‘যেমন অংক দেখলাম, ফেসবুকে তারা বলেছে চার সেটই ফাঁস করলাম। আমরা মিলিয়ে দেখলাম একটিও মেলেনি। কিন্তু আবার ইংরেজির দেখলাম কিছু মিল পেয়েছি। এজন্য আমরা আরো দেখবো, দেখে সিদ্ধান্ত নেবো। ’
এ পর্যন্ত ফাঁসের প্রমাণ পাওয়া গেছে কিনা- জানতে চাইলে সচিব বলেন, না পাবো কেন? আছে তো, আংশিক তো আছেই। কিছু কিছু আংশিক আছে, কিছু কিছু পুরোপুরি আছে।
সেটা কি সাজেশন না প্রশ্ন- সচিব বলেন, না, কিছু কিছু তো সরাসরি, হুবহু মিলে গেছে। সেটা কেন আমরা সাজেশন মনে করবো?
এটা কোন বিষয়- সচিব বলেন, এটা তো এখন বলবো না। যখন সুপারিশ করবো তখন বলবো।
ওই পরীক্ষা কি বাতিলের সুপারিশ করবেন- প্রশ্নে সচিব মো. আলমগীর বলেন, হ্যাঁ। যদি দেখা যায় যে কোনো প্রশ্ন হুবহু মিলে গেছে এবং সেটা যদি দেখা যায় যে পরীক্ষার দিন। যেমন মনে করেন, অবজেকটিভ টাইপের প্রশ্ন যদি ফাঁস হয়ে থাকে তাহলে বাকি পরীক্ষা নতুন করে নেবো না। শুধু অবজেকটিভের জন্য পরীক্ষা হবে, যদি পরীক্ষা চলার এক’দুঘণ্টা আগে বা তিন ঘণ্টা আগে বা আগের দিন ফাঁস হয়ে থাকে। আর যদি দেখা যায় পরীক্ষা চলাকালীন ফাঁস হয়েছে, তাহলে তো পরীক্ষা চলাকালীন বা আধা ঘণ্টা আগে তখন তো পরীক্ষার্থীরা ঢুকে গেছে। তখন হয়তো ৫শ ছেলেমেয়ে এটার সঙ্গে জড়িত। তখন তো ২০ লাখ ছেলেমেয়ের পরীক্ষা বাতিল করা ঠিক হবে না।
কোনো বিষয়ে পুরোপুরি প্রশ্ন মিলেছে কিনা- প্রশ্নে সচিব বলেন, একটা পেয়েছি আমরা। তবে সেটির নাম বলছি না।
ওটা বাতিলের সম্ভাবনা আছে কিনা- প্রশ্নে সচিব বলেন, হতে পারে। আমরা সুপারিশ করবো। কিন্তু বাতিল করবে কিনা, এটা তো অথরিটি জানে।
এমসিকিউ না গোটা পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁস হয়েছে সেটি না জানিয়ে সচিব বলেন, ২৫ বা ২৬ তারিখ জানতে পারবেন। আগামী ২৬ তারিখে প্রতিবেদন দেওয়া হবে।
‘আমরা ২৫ তারিখে বসে পরীক্ষা করবো কতজন প্রশ্ন ফাঁসের সঙ্গে জড়িত ছিল, আর কতক্ষণ আগে ফাঁস হয়েছে বা কত নম্বরের ফাঁস হয়েছে, কত নম্বরের মিলেছে। ’
আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে তথ্য দিয়েছে জানিয়ে সচিব বলেন, ফেসবুক গ্রুপগুলো কখন প্রশ্ন বেচাকেনা করেছে, গ্রেফতারদের কাছে কী প্রশ্ন পাওয়া গেছে। যেমন ফরিদপুরে একজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে, তার কাছে যে প্রশ্ন তা হুবহু মিলে গেছে। তারা এটা বলেছে।
তিনি বলেন, যে ৩০০ নম্বরের বিষয়ে বলেছে সেগুলোর সঙ্গে প্রতিদিন নতুন নতুন নম্বর পাচ্ছে। সেখানে অনেক ভিআইপির নম্বরও আসছে। এখন পর্যন্ত সারা দেশে ৬০-৭০ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
প্রশ্ন ফাঁসের মূল হোতার নাম আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এখনই প্রকাশ করতে চায় না বলে উল্লেখ করে সচিব বলেন, তারা তো কেয়ারফুল হয়ে যাবে।
ফাঁসকারীকে ধরিয়ে দিলে পাঁচ লাখ টাকার ঘোষণায় এখনও কেউ সাড়া দেয়নি বলে জনান সচিব।
প্রশ্ন ফাঁসের অভিযোগের মধ্যে গত ৪ ফেব্রুয়ারি শিক্ষা মন্ত্রণালয় ১১ সদস্যের কমিটি গঠন করে। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, পুলিশ ও বিটিআরসি প্রতিনিধি, আট সাধারণ শিক্ষা বোর্ড, কারিগরি এবং মাদরাসা শিক্ষা বোর্ডের প্রতিনিধি কমিটিতে রয়েছেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৮১৪ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৮, ২০১৮
এমআইএইচ/এএ