ঢাকা, রবিবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিক্ষা

পাস কমলেও ফল ‘সন্তোষজক’

ইসমাইল হোসেন, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩৪৯ ঘণ্টা, জুলাই ১৯, ২০১৮
পাস কমলেও ফল ‘সন্তোষজক’ পাসের খবর পেয়ে শিক্ষার্থীদের উল্লাস/ছবি: শাকিল

ঢাকা: প্রশ্ন ফাঁস রুখে দিয়ে গুণগত মান বজায় রাখতেই এবারের এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় পাসের হার কিছুটা কমে এসেছে বলে জানিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং শিক্ষা বোর্ড। পাশাপাশি ইংরেজি এবং বিজ্ঞানে উচ্চতর গণিতে পাস কম হওয়ায় সার্বিক পাসের হারে প্রভাব পড়েছে বলে ধারণা সংশ্লিষ্টদের।

শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং সংশ্লিষ্টরা বলছেন, গুণগত মান বজায় রাখার পাশাপাশি আগামীতে পাসের হার বাড়াতে ত্রুটিগুলো খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেবে কর্তৃপক্ষ।

বৃহস্পতিবার (১৯ জুলাই) প্রকাশিত ফলাফলে দেখা যায়, এবার অংশগ্রহণকারী পরীক্ষার্থী সংখ্যা ১২ লাখ ৮৮ হাজার ৭৫৭ জন, গত বছর ছিল ১১ লাখ ৬৩ হাজার ৩৭০ জন; বেড়েছে ১ লাখ ২৫ হাজার ৩৮৭ জন।

এরমধ্যে পাস করেছে ৮ লাখ ৫৮ হাজার ৮০১ জন, গত বছর ছিল ৮ লাখ ১ হাজার ১১ জন; বেড়েছে ৫৭ হাজার ৯০ জন।

‍এবছর ১০ শিক্ষ‍া বোর্ডে পাসের হার ৬৬ দশমিক ৬৪ শতাংশ, গত বছর ছিল ৬৮ দশমিক ৯১ শতাংশ। অর্থাৎ পাসের হার কমেছে ২ দশমিক ২৭ শতাংশ। এবছর মোট জিপিএ-৫ পেয়েছে ২৯ হাজার ২৬২ জন, গত বছর ছিল ৩৭ হাজার ৯৬৯ জন, কমেছে ৮ হাজার ৭০৭ জন।

এবছর শতভাগ পাস করা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ৪০০টি, গত বছর ছিল ৫৩২টি, কমেছে ১৩২টি। শূন্য পাস করা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ৫৫টি, গত বছর ছিল ৭২টি; কমেছে ১৭টি।

ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর মু. জিয়াউল হক বলেন, বিজ্ঞানে উচ্চতর গণিতে গতবারের থেকে খারাপ ফল হয়েছে। ২০১৭ সালে পাসের হার ৯৫ দশমিক ৮৯ শতাংশ, এবার তা কমে হয়েছে ৮৭ দশমিক ০৫ শতাংশ।

উচ্চতর গণিতের মতো ইংরেজিতেও পাসের হার কমে যাওয়ায় ফলাফলে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে।  

বিষয়ভিত্তিক ফলাফল বিশ্লেষণে দেখা যায়, প্রায় প্রতিটি বিষয়ে পাসের হার ৮০ শতাংশের উপরে থাকলেও এবছর ইংরেজিতে সিলেট বোর্ড ছাড়া পাস ৮০ শতাংশের নিচে।

ইংরেজিতে পাসের হার কম হওয়ায় এবার ফল খারাপ হয়েছে বলে জানিয়েছেন আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় সাব-কমিটির সভাপতি ও ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান জিয়াউল হক।

গত কয়েকটি পাবলিক পরীক্ষায় প্রশ্নফাঁসের বিস্তর অভিযোগের মুখে এবছর কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ায় এইচএসসিতে প্রশ্ন ফাঁসের অভিযোগ শোনা যায়নি। আর প্রশ্ন ফাঁসের অভিযোগ না থাকায় পাসের হারে হেরফের হয়েছে।

জিয়াউল হক বাংলানিউজকে বলেন, প্রশ্ন ফাঁস বন্ধসহ বিভিন্ন গুণগত পরিবর্তনের কারণে এবার পাসের হার ২ শতাংশ কমেছে। এছাড়া বিজ্ঞানের ফল খারাপ হওয়ায় সার্বিক ফলে তার প্রভাব পড়েছে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশকালে পরীক্ষার সময় গ্যাপ কমিয়ে আনার পরামর্শ দিয়েছেন।

সে বিষয়ে ঢাকা শিক্ষা বোর্ড চেয়ারম্যান বলেন, প্রধানমন্ত্রী যুগান্তকারী পদক্ষেপের কথা বলেছেন, গ্যাপ কমানো হলে সবাই লাভবান হবে। জেএসসি, এসএসসি এবং এইচএসসি পরীক্ষার রুটিন করার সময়ে এ বিষয়ে আমরা চিন্তা করছি।

প্রশ্নফাঁস মুক্ত পরীক্ষায় এবারের ফলকে ‘সন্তোষজনক’ মনে করছেন ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক তপন কুমার সরকার।

তিনি বাংলানিউজকে বলেন, পাসের হার কিছু কমেছে, তবে যেভাবে সঠিক ব্যবস্থাপনায় পরীক্ষা হয়েছে তাতে ফল ঠিক আছে।

উত্তরপত্র মূল্যায়নে গত দু’বছর থেকে যে পদ্ধতি ব্যবহার করা হচ্ছে তাতে সঠিক মূল্যায়ন হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, পরীক্ষদের প্রশিক্ষণ এবং নমুনা উত্তরপত্র দিয়ে মূল্যায়ন করা হচ্ছে। এতে সঠিক ফল পাচ্ছে শিক্ষার্থীরা।

এবারের পরীক্ষাকে নিয়ে যাতে কোনো বিতর্ক সৃষ্টি না হয় সে জন্য আগে থেকেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সার্বিক নির্দেশনা ও পরামর্শে পাবলিক পরীক্ষার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সব পক্ষকে অন্তর্ভুক্ত করে একটি সমন্বিত কর্মকৌশল প্রয়োগ করা হয় বলে জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ।

সচিবালয়ে সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, পরীক্ষার প্রশ্নপত্র প্রণয়ন, পরিশোধন, মুদ্রণ, প্যাকেটজাতকরণ, ট্রাংকজাতকরণ, কেন্দ্রে পাঠানোসহ প্রতিটি স্তরেই কঠোর নজরদারি, সতর্কতা ও বেশ কিছু কৌশল অবলম্বন করা হয়। ফলে এবার প্রশ্ন ফাঁস নিয়ে প্রশ্ন উঠেনি। আর পরীক্ষার উত্তরপত্র মূল্যায়নে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি অবলম্বন করায় সঠিকভাবে মূল্যায়ন হয়েছে। এতে ফলের প্রভাব পড়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ১৯৪৪ ঘণ্টা, জুলাই ১৯, ২০১৮
এমআইএইচ/এসএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।