পানছড়ি উপজেলায় ৩৯টি আনন্দ স্কুলে রয়েছে ৪শ’ ৯৪ জন শিক্ষার্থী। প্রাথমিক শিক্ষায় সরকারের চলমান ইতিবাচক উদ্যোগের ফলে ঝরে পড়ার হার একদমই কমে গেছে।
চলমান প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষায় (পিইসি) আনন্দ স্কুলের হয়ে অংশ নিয়েছে বিভিন্ন স্কুল-কলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থীরা। পরীক্ষায় কাগজে-কলমে অংশগ্রহণকারী দেখালেও কোন কোন কেন্দ্রে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি হতাশজনক। সরেজমিন পানছড়ির তিনটি পরীক্ষা কেন্দ্র পরিদর্শনে গিয়ে এমন চিত্র ধরা পড়ে। তবে এসব বিষয়ে সুনির্দিষ্ট জবাব দিতে পারেননি সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। অন্যদিকে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলছেন শিক্ষা কর্মকর্তারা।
প্রাপ্ত তথ্য মতে, সরকার হতদরিদ্র ও ঝরেপড়া শিশুদের স্কুলগামী করতে বিশ্ব ব্যাংকের সহযোগিতায় ‘রিচিং আউট অব স্কুল চিলড্রেন’ (রস্ক) প্রকল্প-২ এর আওতায় ২০১৪ সালে ৫ বছরের জন্য খাগড়াছড়ির পানছড়ি ও লক্ষ্মীছড়ি উপজেলায় চালু করে আনন্দ স্কুল।
প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে ঝরেপড়া শিক্ষার্থীদের বিশেষ সুবিধা দিয়ে স্কুলগামী করা এবং পড়াশোনায় পুনরায় নিয়ে আসতেই সরকার দেশের প্রত্যন্ত ও ঝরেপড়া প্রবণ এলাকাগুলোতে এ প্রকল্প নেয়। শুধু পানছড়ি উপজেলাতে ৩৯টি স্কুলে কাগজে-কলমে রয়েছে ৪শ’ ৯৪ জন শিক্ষার্থী। স্কুলগুলোতে শিক্ষার্থীদের পোশাকের জন্য বছরে মাথাপিছু ৫শ’ টাকা, পরীক্ষা বাবদ ১শ’ টাকা, শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তি বাবদ ১শ’ ২০ টাকা করে দেওয়া হয়।
সরেজমিন প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষায় তৃতীয় দিন সূতকর্মাপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায় অন্য শিক্ষার্থীদের সাথে ১৭টি আনন্দ স্কুলের মোট ২শ’ ২৭ জন শিক্ষার্থী অংশ নেয়ার কথা ছিল। তবে অংশ নিচ্ছে ১শ’ ৬৮ জন। অনুপস্থিত রয়েছে ৫৯ জন। মূলত সরকারি স্কুলের পিএসসি পরিক্ষার্থীকে আনন্দ স্কুলের শিক্ষার্থী হিসেবেও তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। এতে করে ওই শিক্ষার্থী সরকারি স্কুল থেকে পিএসসিতে অংশ নেওয়ায় আনন্দ স্কুলের শিক্ষার্থীর অনুপস্থিতি বেড়েছে। এছাড়া বিভিন্ন স্কুলের উচ্চ শ্রেণিতে অধ্যায়নরত কেউ কেউ অংশ না নেওয়ায় অনুপস্থিতি বেড়েছে।
এসব বিষয়ে বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা জানালেও নাম প্রকাশে অনিচ্ছার কথা জানান। তারা বলেন, পিইসি পরীক্ষায় অংশ নেওয়া আনন্দ স্কুলের অধিকাংশ শিক্ষার্থীই একদম ভুয়া। কারণ, বর্তমানে ঝরেপড়ার সংখ্যা এতটা নেই।
এদিকে রস্ক প্রকল্পের পানছড়ি উপজেলা ট্রেনিং কো-অর্ডিনেটর স্বপ্না চাকমা তৃতীয় দিনের সমাপনী পরীক্ষায় আনন্দ স্কুলের শিক্ষার্থীদের অনুপস্থিতির সংখ্যা ৬৫ জন বলে জানালেও প্রকৃত অর্থে পানছড়ি বাজার মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, সূতকর্মাপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং পাইলট ফার্ম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে অনুপস্থিতির সংখ্যা ৭৮ জন।
এদিকে পানছড়ি বাজার মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে আনন্দ স্কুলের হয়ে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীদের দেখে সন্দেহ হলে তাদের কাজ থেকে পরিবার ও লেখাপড়া সম্পর্কে জানতে চাইলে কেউ কথা বলতে রাজি হয়নি। এমনকি পরিবারের কারো মোবাইল ফোন নম্বর দিতেও অপারগতা জানায়। শিক্ষকরাও বিষয়টি সন্দেহ করলেও কেউ কথা বলতে রাজি হননি।
এদিকে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা গেছে, এবার প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষায় খাগড়াছড়ির ৮টি উপজেলায় পানছড়ি ও লক্ষ্মীছড়িতে শিক্ষার্থীদের অনুপস্থিতির সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। এরমধ্যে লক্ষ্মীছড়িতে ১শ’ ৬০ জন এবং পানছড়িতে ১শ’ ৪৩ জন। মূলত দুই উপজেলায় রস্ক প্রকল্পের আওতায় পরিচালিত আনন্দ স্কুলের শিক্ষার্থীরা চলমান পরীক্ষায় অংশ না নেওয়ায় এ সংখ্যা বেড়েছে। শিক্ষার্থীদের অনুপস্থিতি উপজেলায় ফল বিপর্যয় আনবে বলে মনে করেন স্থানীয় শিক্ষকরা।
সূতকর্মাপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বৃন্দা দেবী চাকমা এবং পানছড়ি বাজার মডেল বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বিপাশা সরকার বলেন, আনন্দ স্কুল প্রকল্পে বেশ কিছু অসঙ্গতি রয়েছে। বিগত সময়ে অন্য স্কুলের শিক্ষার্থী আনন্দ স্কুলের হয়ে পরীক্ষা দেওয়ার বিষয়টি নজরে এলে অভিভাবক ডেকে বিষয়টি জানানো হয়। গেল মডেল টেস্টেও অসঙ্গতি ছিল। তবে এবার এখনো কেউ অভিযোগ করেনি।
এ বিষয়ে পানছড়ি উপজেলা সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা কনিকা খীসা বলেন, আগে শিক্ষা বিভাগই প্রকল্পটির মনিটরিং করলেও এখন রস্ক প্রকল্প কর্মকর্তা নিজেরাই দেখেন। তবুও অভিযোগ পেলে খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
অভিযোগের ব্যাপারে আনন্দ স্কুলের সমন্বয়কারী স্বপ্না চাকমা বলেন, অভিযোগ সঠিক নয়। অনুপস্থিতি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, কোন শিক্ষার্থীর বিয়ে হয়ে যাওয়ার কারণেও অনুপস্থিতি বেশি হতে পারে।
বাংলাদেশ সময়: ১১৪৭ ঘণ্টা, নভেম্বর ২২, ২০১৮
এডি/এমজেএফ