ঢাকা, মঙ্গলবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিক্ষা

শিক্ষক সংকটে পর্যুদস্ত সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়

এম আব্দুল্লাহ আল মামুন খান, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩২৬ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ৪, ২০১৯
শিক্ষক সংকটে পর্যুদস্ত সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় শ্রেণিকক্ষে শিক্ষার্থীরা। ছবি: বাংলানিউজ

উন্নত সমৃদ্ধ দেশ গঠনে মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করার কোনো বিকল্প নেই। তবে বাংলাদেশে শিক্ষাখাতে রয়েছে নানাবিধ সমস্যা। বিশেষ করে প্রাক-প্রাথমিক ও প্রাথমিক শিক্ষায় বিদ্যমান বাস্তবতায় রয়েছে ব্যাপক সমস্যা, সংকট ও বৈষম্য। 

ময়মনসিংহে প্রাথমিক শিক্ষার হালহকিকত নিয়ে ৫ পর্বের ধারাবাহিক প্রতিবেদন লিখেছেন বাংলানিউজের সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট এম. আব্দুল্লাহ আল মামুন খান। ছবি তুলেছেন ডিস্ট্রিক্ট ফটো করেসপন্ডেন্ট অনিক খান। আজ পড়ুন ধারাবাহিক প্রতিবেদনের চতুর্থ কিস্তি।

ময়মনসিংহের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে পর্যাপ্ত শিক্ষক নেই। শিক্ষক স্বল্পতায় পাঠদান কার্যক্রমে চলছে নাজুক অবস্থা।

জেলার ১৩ উপজেলায় ২ হাজার ১৪২টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। এর ১ হাজার ১৪৫টি শিক্ষকের পদ শূন্য হয়ে আছে।  

প্রধান শিক্ষক পদে সরাসরি নিয়োগ এবং পদোন্নতি বন্ধ থাকায় দিন দিন এই সংখ্যা বাড়ছে। সর্বশেষ হিসাব মতে, এই সংখ্যাটা ২৩২-এ গিয়ে ঠেকেছে। অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসেবে ভারপ্রাপ্তরা প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করায় তারাও ক্লাস নিতে পারছেন না। দাপ্তরিক সব কার্যক্রমেই তাকে সময় দিতে হচ্ছে।  

এর চেয়েও ভয়াবহ অবস্থা সহকারী শিক্ষকের বেলাতে। এখানে পদ শুন্য আছে ৯১৩টি। তবে সব উপজেলার মধ্যে ভালুকায় সর্বোচ্চ ৪২ জন প্রধান শিক্ষক এবং গফরগাঁওয়ে ১৪৪ জন সহকারী শিক্ষক পদে শিক্ষক নেই। শিক্ষক সংকটের কারণে সরকারি এসব প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে।

ময়মনসিংহ জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোহাম্মদ মোফাজ্জল হোসেন বাংলানিউজকে জানান, জেলার শিক্ষকের শূন্য পদের তালিকা প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরে পাঠানো হয়েছে। যথাসময়ে এসব শূন্য পদে শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হবে।

মুক্তাগাছা উপজেলার মনতলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৯ জন শিক্ষকের মধ্যে ৩ জন সহকারী শিক্ষকের পদ শূন্য রয়েছে। ২০১৮ সালের এপ্রিল থেকে এই পদগুলো খালি। বিদ্যালয়টির প্রাক প্রথম শ্রেণিতে শিক্ষার্থী ৩৫ জন।  

সকাল ৯টা থেকে ১২টা পর্যন্ত টানা তিন ঘণ্টা সুমন পাল নামে একজন শিক্ষক একাই সব বিষয়ে পড়ান। এরপর অন্যান্য শ্রেণিতেও ক্লাস নিতে হয় তাকে। সহকারী এই শিক্ষকের প্রশ্ন, একজন শিক্ষকের জন্য প্রাক-প্রাথমিক শ্রেণি সামলে আরো ৭ থেকে ৮টি ক্লাসের পাঠটিকা প্রস্তুত করা কষ্টকর।  

জানা যায়, ময়মনসিংহের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষক সংকটে ত্রাহি অবস্থা। প্রধান শিক্ষক এবং সহকারী শিক্ষকের বিপুলসংখ্যক পদ খালি থাকায় পাঠদান কার্যক্রম চালাতে রীতিমতো হিমশিম খেতে হচ্ছে শিক্ষকদের। এতে করে সন্তানদের পড়াশোনা নিয়েও উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন অভিভাবকরা।

ময়মনসিংহ জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্র জানায়, জেলার ২ হাজার ১৪২টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ১ হাজার ১৪৫টি শিক্ষকের পদ এখনো শূন্য রয়েছে।

সদর উপজেলার অনুমোদিত ১ হাজার ১১১টি শিক্ষক পদের বিপরীতে কর্মরত শিক্ষক রয়েছেন ১ হাজার ১৪ জন। এখানে শূন্য রয়েছে ৯৭টি। মুক্তাগাছা উপজেলায় ১ হাজার ২৩টি পদের বিপরীতে কর্মরত ৯৫১ আর শূন্য ৭২টি।

ত্রিশাল উপজেলায় ১ হাজার ১৬৪টি অনুমোদিত পদের মধ্যে কর্মরত ১ হাজার ৭৫ এবং ফাঁকা ৮৯। ভালুকা উপজেলায় ১ হাজার ২৭টি অনুমোদিত পদের মধ্যে কর্মরত ৯২৪ আর ফাঁকা ১০৩। এর মধ্যে ৪২টি প্রাথমিক বিদ্যালয়েই প্রধান শিক্ষক নেই।

প্রাথমিক বিদ্যারয়ের শিক্ষকগফরগাঁওয়ে ১ হাজার ৪৬৬টি পদের বিপরীতে কর্মরত ১ হাজার ২৪৮ আর ফাঁকা ১৭২ জন। নান্দাইল উপজেলায় অনুমোদিত পদ ১ হাজার ৯১টি। এর মধ্যে কর্মরত শিক্ষকের সংখ্যা ৯৯০, শূন্য পদ ১০১। ঈশ্বরগঞ্জে ৮৯৭টি অনুমোদিত পদে কর্মরত শিক্ষক রয়েছেন ৮৩৭ আর ফাঁকা ৬০টি।  

হালুয়াঘাট উপজেলায় অনুমোদিত ৯৬২টি পদের মধ্যে শূন্য রয়েছে ৮৩ শিক্ষকের পদ। ফুলবাড়ীয়া উপজেলায় ১ হাজার ২১৪ টি অনুমোদিত পদে শিক্ষক কেবল ১ হাজার ১৩৫ জন। শূন্য রয়েছে ৭৯ শিক্ষকের পদ। গৌরীপুর, ফুলপুর, ধোবাউড়া ও তারাকান্দা উপজেলায় যথাক্রমে ১০২০ অনুমোদিত পদে শিক্ষক নেই ২৯ জন, ৭২৩ অনুমোদিত পদে শিক্ষক সংকট রয়েছে ৯৯ জন, ৫০৩ অনুমোদিত পদে শিক্ষক নেই ৬৫ জন এবং ৮০৭ অনুমোদিত পদে শিক্ষক সংকট রয়েছে ৫০ জন।  

ভালুকা উপজেলার পশ্চিম পাড়াগাঁও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের এক শিক্ষক বাংলানিউজকে জানান, ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক দিয়ে বিদ্যালয়টি পরিচালিত হচ্ছে। অথচ ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষককে চলতি দায়িত্ব দেওয়া হলে সহকারী শিক্ষকের পদ শূন্য হতো। তখন বিদ্যালয়ে পাঠদান ও দাপ্তরিক কার্যক্রম পরিচালনাও সহজ হতো।

ত্রিশাল উপজেলার চিকনা মনোহর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক সাদিয়া আক্তার জানান, প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন ও পাঠদান দুটিই করতে হয়। এতে করে বেশ বেগ পেতে হচ্ছে।

সদর উপজেলার মাইজবাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একাধিক অভিভাবক অভিযোগ করে বলেন, শিক্ষার্থী অনুপাতে শিক্ষক নেই। ফলে ঠিকমতো ক্লাসও হয় না। এভাবে একটি বিদ্যালয় চলবে কীভাবে?

জানতে চাইলে প্রাথমিক শিক্ষা ময়মনসিংহ বিভাগের বিভাগীয় উপ-পরিচালক মো. আনোয়ার হোসেন বাংলানিউজকে জানান, প্রতি বছরই শিক্ষক নিয়োগ হয়েছে। ময়মনসিংহ জেলায় শিক্ষক স্বল্পতার বিষয়টি ডিজি মহোদয় জানেন। আশা করি শিগগির পর্যায়ক্রমে এই শূন্যতা পূরণ হবে।

পড়ুন অন্যান্য কিস্তি
** সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় শুধুই গরিবের স্কুল!
** কিন্ডারগার্টেন স্কুলের কাছে মার খাচ্ছে সরকারি প্রাথমিক
** নেই অফিস সহকারী, সব কাজই করেন শিক্ষকরা

বাংলাদেশ সময়: ০৮২০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০, ২০১৯ 
এমএএএম/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।