ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিক্ষা

শিক্ষালাভের অদম্য ইচ্ছায় পরাজিত প্রতিকূলতা

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১০৬ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ৪, ২০১৯
শিক্ষালাভের অদম্য ইচ্ছায় পরাজিত প্রতিকূলতা

জালালপুর, কেন্দুয়া (নেত্রকোণা) থেকে ফিরে: শ্রেণি কক্ষের ছাদ থেকে শিশু শিক্ষার্থীদের মাথায় খসে পড়ছে পলেস্তারা। বর্ষাকালে বৃষ্টিতে ছাদ ছুঁইয়ে শরীরে ঝরে পড়ছে পানি। আর এই পানিতে কাক ভেজা হয়ে ক্লাস করছে শিক্ষার্থীরা। টিউবওয়েল থেকেও না থাকার কারণে বিদ্যালয়ে নেই সুপেয় পানি খাওয়ার ব্যবস্থা। 

তারপরও শিক্ষালাভের অদম্য ইচ্ছায় যাবতীয় প্রতিকূলতাকে পরাজিত করেছে নেত্রকোণার কেন্দুয়া উপজেলার হাওর বেষ্টিত জালালপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কোমলমতি শিক্ষার্থীরা।

বিদ্যালয় ও জালালপুর গ্রাম ঘুরে দেখা যায়, বিচ্ছিন্ন যোগাযোগ ব্যবস্থায় শুষ্ক মৌসুমে মাত্রাতিরিক্ত ধুলাবালি আর বর্ষায় কাদামাখা পথের সঙ্গে সংগ্রাম করেই শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয়ে পৌঁছতে হয়।

একটি সাবমারসিবল ও তিনটি টিউবওয়েল রয়েছে বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে। কিন্তু সাবমারসিবল থেকে বের হয় খাওয়ার অযোগ্য আইরন পানি। অপরদিকে, টিউবওয়েলগুলো অকেজো হয়ে পড়ে রয়েছে দীর্ঘদিন ধরে। খাওয়ার পানির অভাব পূরণ করতে বিদ্যালয়ের শিশুরা নিজ উদ্যোগে ও স্বেচ্ছাশ্রমে সম্প্রতি একটি টিউবওয়েল মেরামতের মাধ্যমে সচল করে।

সবাই এক সঙ্গে হয়ে নষ্ট হওয়া টিউবওয়লেটি ঠিক করছে।  ছবি: বাংলানিউজ

তমাল হোসেন, নাদিরা বেগম, অর্ণব মল্লিক (পঞ্চম শ্রেণি), নাদিম হোসেন (চতুর্থ শ্রেণি) ও শান্তা মনি (দ্বিতীয় শ্রেণি)। বিদ্যালয়ের এই শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ক্লাস সবসময় নোংড়া হয়ে থাকে ছাদ থেকে পলস্তারা খসে পড়ে। সেক্ষেত্রে ভয় আর আতঙ্কও কাজ করে মনের ভেতরে। কখন যেন কি দুর্ঘটনার শিকার হতে হয় তাদের।

বিদ্যালয়ে কোনো দপ্তরি না থাকায় পরিচ্ছন্নতার কাজ শিক্ষার্থীদের করতে হয়। ক্লাস রুম ঝাড়ু দেওয়া থেকে শুরু করে দূর থেকে খাওয়ার পানি টেনে আনতে হয়। শিক্ষককরাও কখনো কখনো তাদের সাহায্য করেন পানি আনতে।

শিক্ষার্থীদের সঙ্গে স্বর মিলিয়ে কথা বলেন বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. আব্দুল হক, সহকারী শিক্ষক মাহফুজা আক্তার রিপা ও শারমিন আক্তারসহ অন্যান্যরা। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বিদ্যালয়ের সমস্যাগুলোর সমাধান দিয়ে শিক্ষাগ্রহণে বিদ্যালয়ে সুন্দর একটি পরিবেশ ফিরিয়ে আনবেন বলেও জোর দাবি তাদের।

প্রধান শিক্ষক আব্দুল বাংলানিউজকে জানান, মাসিক সমন্বয় সভায় এসব সমস্যার কথা বারবার তুলে ধরেও কোনো লাভ হচ্ছেনা। এভাবে শিক্ষার্থীদের পাঠদান রীতিমতো চ্যালেঞ্জ হয়ে পড়েছে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বিদ্যালয়টি যদি একবার পরিদর্শন করতেন তবে নিশ্চয় সমস্যাগুলো অনুধাবন করতে পারতেন। অবকাঠামোগত সমস্যাই শুধুই নয় নিরাপত্তা নিয়েও শঙ্কা বোধ করছেন শিক্ষকরা।

এছাড়াও সরকার বিদ্যালয়ের জন্য মূল ভবন থেকে বাইরে আলাদাভাবে উন্নত বাথরুম বা টয়লেটের ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। কিন্তু সেখানে ঠিকাদারের গাফিলতিতে কাজ হয়েছে অত্যন্ত নিম্মমানের। নির্মাণের কয়েক মাস যেতে না যেতেই দেয়াল থেকে ভেঙে আলাদা হয়ে মেঝেতে পড়ে আছে বেসিন! বসানো সাবমারসেবল থেকে বের হয় আইরন পানি, অভিযোগ শিক্ষকদের।

এলাকাবাসী ওয়াহেদ, আব্দুল ও হালিম বাংলানিউজকে জানান, জালালপুর গ্রামের এই বিদ্যালয়টি শিক্ষার আলো ছড়াচ্ছে। এতসব প্রতিকূলতা পেরিয়েও প্রতিবছর শতভাগ রেজাল্ট অর্জন করছে শিক্ষার্থীরা। অতএব সরকারের উচিত হবে বিদ্যালয়টির সমস্যা সমাধানে কার্যকরী পদক্ষেপ নেয়া।

বাংলাদেশ সময়: ১৫৪৯ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৪, ২০১৯
এনটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।