ঢাকা, রবিবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিক্ষা

অধ্যাপক শফিউল হত্যার রায়ে বিভাগের ক্ষোভ

রাবি করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯১৫ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৫, ২০১৯
অধ্যাপক শফিউল হত্যার রায়ে বিভাগের ক্ষোভ অধ্যাপক ড. একেএম শফিউল ইসলাম লিলন

রাবি: রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. একেএম শফিউল ইসলাম লিলন হত্যা মামলার রায়ে অসন্তোষ ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন তার সহকর্মী শিক্ষক ও বিভাগের শিক্ষার্থীরা। 

সোমবার (১৫ এপ্রিল) দুপুরে রাজশাহীর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে চাঞ্চল্যকর এ মামলার রায় ঘোষণা করা হয়।  

রায়ে হত্যা মামলার ১১ আসামির মধ্যে ৩ জনের ফাঁসির আদেশ দেওয়া হয়েছে।

এছাড়া দণ্ডপ্রাপ্ত প্রত্যেককে ১০ হাজার টাকা করে জরিমানা করা হয়েছে। বাকি ৮ জন আসামিকে বেকসুর খালাস দেওয়া হয়েছে।
 
মামলার রায়ে অসন্তোষ প্রকাশ করে সমাজবিজ্ঞান বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক এম. জুলফিকার আলী ইসলাম বলেন, 'সহকর্মী শফিউল ইসলাম হত্যাকাণ্ডের ন্যায়বিচার ও আসামিদের সর্বোচ্চ শাস্তির আশা করেছিলাম। কিন্তু রায়ে আমরা চরমভাবে আশাহত। এ মামলায় আমরা ন্যায়বিচার পাইনি। '

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক আনন্দ কুমার সাহা বলেন, ‘চাঞ্চল্যকর হত্যা মামলার এমন রায় অত্যন্ত হতাশাজনক। ১১ জন আসামির মধ্যে ৮ জনের বেকসুর খালাস পাওয়া আশ্চর্যজনক। এ রায়ে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত হয়নি। ’

বিভাগের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী শিশির মাহমুদ বলেন, ‘স্যারের প্রতি যে নৃশংসতা চালানো হয়েছে, এ রায়ের মাধ্যমে তার সঠিক বিচার হয়নি। এ রায়ে আমরা মর্মাহত। মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের মধ্যে একজন পলাতক। তাকে দ্রুত গ্রেফতার ও মামলা পুনঃবিচারের দাবি জানাচ্ছি। ’

সোমবার (১৫ এপ্রিল) বেলা সোয়া ১২টার দিকে রাজশাহী দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক অনুপ কুমার রায় এ রায় ঘোষণা করেন। দণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন- আব্দুস সামাদ পিন্টু, আরিফুল ইসলাম মানিক ও লুৎফুল ইসলাম সবুজ। এর মধ্যে সবুজ পলাতক রয়েছেন।  

আর খালাসপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন- আনোয়ার হোসেন উজ্জ্বল, পিন্টুর স্ত্রী নাসরিন আক্তার রেশমা, সিরাজুল ইসলাম কালু, আল-মামুন, সাগর, জিন্নাত আলী, ইব্রাহীম খলীল ও আরিফ।  

২০১৪ সালের ১৫ নভেম্বর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন চৌদ্দপাই এলাকায় নিজ বাড়ির সামনে নৃশংসভাবে কুপিয়ে হত্যা করা হয় ড. শফিউল ইসলাম লিলনকে। পরদিন বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার অধ্যাপক মুহাম্মদ এন্তাজুল হক বাদী হয়ে অজ্ঞাত কয়েকজনকে আসামি করে মতিহার থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন।  

তদন্ত শেষে দেশজুড়ে চাঞ্চল্য সৃষ্টিকারী এ মামলার চার্জশিটে বলা হয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাব শাখায় কর্মরত নাসরিন আখতার রেশমার সঙ্গে শফিউল ইসলামের দ্বন্দ্বের জের ধরেই তার স্বামী যুবদল নেতা আব্দুস সালাম পিন্টু অন্যদের নিয়ে এ হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছেন। পরে রেশমাও বিষয়টি স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দেন।  

হত্যাকাণ্ডে জড়িত সন্দেহে ওই বছরের ২৩ নভেম্বর যুবদল নেতা আব্দুস সালাম পিন্টুসহ ছয়জনকে ঢাকা থেকে আটক করে র‌্যাব। পরে পিন্টুর স্ত্রী নাসরিন আখতার রেশমাকে আটক করে গোয়েন্দা শাখা পুলিশ। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে হত্যাকাণ্ডের দায় স্বীকার করে রেশমা আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন।  

ঘটনার এক বছর পর ২০১৫ সালের ৩০ নভেম্বর মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মহানগর গোয়েন্দা শাখা পুলিশের তৎকালীন পরিদর্শক রেজাউস সাদিক আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন। এতে রাজশাহী জেলা যুবদলের তৎকালীন আহ্বায়ক জেলা বিএনপির বর্তমান যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার হোসেন উজ্জলসহ ১১ জনকে অভিযুক্ত করা হয়।  

মামলার একজন ছাড়া বাকি ১০ আসামি জামিনে ছিলেন। চার্জশিটে অভিযুক্ত আসামিরা হলেন- আনোয়ার হোসেন উজ্জ্বল, আব্দুস সামাদ পিন্টু, পিন্টুর স্ত্রী নাসরিন আক্তার রেশমা, যুবদল নেতা আরিফুল ইসলাম মানিক, লুৎফুল ইসলাম সবুজ, সিরাজুল ইসলাম কালু, আল-মামুন, সাগর, জিন্নাত আলী, ইব্রাহীম খলীল ও আরিফ।  

গত ১৩ মার্চ মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয়। মামলায় মোট ৩৩ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ করা হয়। উভয়পক্ষের যুক্তিতর্ক শেষে ১৫ এপ্রিল চাঞ্চল্যকর এ মামলার রায়ের জন্য দিন ধার্য করেন রাজশাহী দ্রুতবিচার ট্রাব্যুনাল আদালতের বিচারক। পরে আসামিদের বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হওয়ায় সোমবার (১৫ এপ্রিল) এ রায় ঘোষণা করা হয়।

বাংলাদেশ সময়: ১৫১২ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৫, ২০১৯
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।