ঢাকা, রবিবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিক্ষা

ভিসির বক্তব্যকে মিথ্যাচার দাবি ববি শিক্ষার্থীদের

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫০১ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৩, ২০১৯
ভিসির বক্তব্যকে মিথ্যাচার দাবি ববি শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে ববি শিক্ষার্থীরা, ছবি: বাংলানিউজ

বরিশাল: বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (ববি) শিক্ষার্থীদের প্রতি উপাচার্য প্রফেসর ড. এস এম ইমামুল হকের লিখিত আবেদনকে মিথ্যাচার বলে দাবি করেছেন শিক্ষার্থীরা। পাশাপাশি এ আবেদনের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের চলমান আন্দোলনকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতে চাওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন শিক্ষার্থীরা।

সরকারি ছুটি ও পবিত্র শবে-বরাতের জন্য দু’দিন কর্মসূচি স্থগিত থাকার পরে মঙ্গলবার (২৩ এপ্রিল) সকালে উপাচার্যের পদত্যাগ দাবিতে গণস্বাক্ষর ও অবস্থান কর্মসূচির মধ্যদিয়ে কর্মসূচি শুরু হয়।

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী লোকমান হোসেন ও শফিকুল ইসলাম জানান, উপাচার্য লিখিত আবেদনে বলেছেন ৫ শতাংশ শিক্ষার্থীর আন্দোলন এটি, বাকিরা না-কি তার পক্ষে।

যা সম্পূর্ণ মিথ্যাচার। যদি তাই হয়, তাহলে তিনি কেন বিশ্ববিদ্যালয়ে আসেন না?

শিক্ষার্থীদের দাবি বরং তিনি ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবসে শিক্ষার্থীদের রাজাকারের বাচ্চা বলে গালি দিয়েছেন এবং ঠিক এর ২৭ দিনের মাথায় লিখিতভাবে আবার শিক্ষার্থীদের সন্ত্রাসী বলেছেন। তাই এ ভিসির পদত্যাগ না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে।  

এদিকে, ভিসির এমন বক্তব্যে হতাশ হয়েছেন শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবু জাফর মিয়াসহ শিক্ষকরা। তারা জানান, গত ১৯ এপ্রিল শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারী ও শিক্ষার্থীদের আয়োজনে মানববন্ধনে ৫০ জনের মতো শিক্ষকই ছিলেন। তাহলে সেখানে ৫ শতাংশ শিক্ষক-শিক্ষার্থীর উপস্থিতি ভিসি কিভাবে হিসাব করলেন।

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীবৃন্দের ব্যানারে এবং প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, বরিশাল বিশ্বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা গত ২৬ মার্চ থেকে আন্দোলন করে আসছি এবং গত ১৮ এপ্রিল বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান শিক্ষক সমিতি প্যানেল, সাবেক শিক্ষক সমিতি প্যানেল, কর্মকর্তা, কর্মচারীরা একাট্টা হয়ে উপাচার্য পদত্যাগের এক দফা দাবিতে মানববন্ধন করে।  শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারী এমন কোন ব্যক্তি নাই যিনি উপাচার্যের পদত্যাগ চান না।  অথচ এ স্বৈরাচার উপাচার্য ছুটিতে থাকা সত্ত্বেও রোববার (২১ এপ্রিল) বিশ্ববিদ্যালয় ওয়েবসাইটে’ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের প্রতি আমার আবেদন’ নামে একটি বিবৃতি প্রকাশ করেন। সেখানে তিনি ৮ হাজার শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক আন্দোলনকে ‘অহেতুক আন্দোলন’ ও ‘কল্পিত সন্ত্রাস’ বলে অভিহিত করেছেন। যে শিক্ষার্থীরা শান্তিপূর্ণভাবে কর্মসূচি পালন করেছে, রোদে পুড়েছে, বৃষ্টিতে ভিজেছে, অনশন করেছে। তারপরও কোন দুঃসাহসে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের আন্দোলনকে ‘কল্পিত সন্ত্রাস’ বলে অভিহিত করেন?

প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, উপাচার্যের মিথ্যাচার মীরজাফরকেও হার মানায়। তিনি শুরু থেকেই মিথ্যার আশ্রয় নিয়ে আন্দোলনকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতে চেয়েছেন এবং সেই লক্ষ্যেই তিনি বারবার মিথ্যাচার করে আসছে। আমরা শিক্ষার্থীরা তার এ মিথ্যাচারের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই এবং সেই সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থীদের আন্দোলনকে ‘কল্পিত সন্ত্রাস’ বলায় অবিলম্বে তার এ কথা প্রত্যাহার করতে হবে। এ স্বৈরাচার, মিথ্যুক, স্বাধীনতাবিরোধী, শিক্ষক-শিক্ষার্থী বিরোধী উপাচার্য ছাত্র-ছাত্রীদের শিক্ষাজীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলছেন এবং এ অযোগ্য উপাচার্য তার চেয়ার আকড়ে ধরে শিক্ষার্থীদের শিক্ষাজীবন ধ্বংসের পায়তারা শুরু করেছেন।

বিগত ৩ বছর ১০ মাসে তিনি শিক্ষার্থীদের ওপর নির্যাতনের স্টিম রোলার চালিয়েছেন। সবাই তার স্বৈরাচারী শাসন থেকে মুক্তি হতে চায়। তিনি পদত্যাগ না করা পর্যন্ত শিক্ষক-শিক্ষার্থী কেউ ক্লাসে ফিরে যাবেন না এবং আমাদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলন অব্যাহত থাকবে।

রোববার (২১ এপ্রিল) দুপুরে শিক্ষার্থীদের প্রতি লিখিত আবেদনে ভিসি বলেন, আমার মেয়াদকালের শেষ সময়ে একটি স্বার্থান্বেষী মহলের স্বার্থসিদ্ধির জন্য চিহ্নত গোষ্ঠী আমার পদত্যাগের দাবিতে প্রায় একমাস ধরে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রবেশদ্বারগুলোতে তালা লাগিয়ে অবৈধভাবে কর্মকাণ্ড চালিয়ে আসছে। এ অহেতুক আন্দোলনের কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ের সব শিক্ষার্থীর শিক্ষাজীবন বিপর্যন্ত হয়ে পড়েছে। তারা এক কল্পিত সন্ত্রাসের ভয়ে ভীত হয়ে এর প্রতিবাদ করে সাহস নিয়ে এগিয়ে আসছে না। এ অবস্থা থেকে আমাদের উত্তরণ অবশ্যম্ভাবী, অন্যথায় জাতির জনকের স্বপ্নের দক্ষিণ বাংলার এ বাতিঘর, যেটি প্রধানমন্ত্রীর হাত ধরে বাস্তবায়িত হয়েছে, তা অপূরণীয়ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

তিনি আরও উল্লেখ করেছেন, যারা মহান স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠান পণ্ড করার উদ্যোগ নিয়েছিলো, তাদের উদ্দেশ্যেই আমি বক্তব্য রেখেছিলাম। সেই বক্তব্যে কেউ আহত হয়ে থাকলে তাদের উদ্দেশ্যে দুঃখ প্রকাশও করেছিলাম। কিন্তু বিষয়টি সেখানেই থেকে থাকেনি, কোনো এক অদৃশ্য ও অশুভ শক্তির প্রয়াসে এতদূর গড়িয়েছে। দুঃখ প্রকাশের পরও কেন এ আন্দোলন? কেন সাধারণ ছাত্র-ছাত্রীদের শিক্ষাজীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলা হচ্ছে? এ আন্দোলনে অংশগ্রহণকারীর সংখ্যা ছাত্র-শিক্ষক-কর্মচারী মিলিয়ে সমগ্র বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারের ৫ শতাংশের বেশি হবে না।  এরা কার স্বার্থ হাসিলে বাকি ৯৫ শতাংশের বেশি শিক্ষার্থীর শিক্ষাজীবন ধ্বংস করার জন্য নেমেছে, এটা আমার প্রশ্ন।

শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে বলেন, পরবর্তী কর্মদিবসে তোমরা বিশ্ববিদ্যালয়ে আসো। তোমাদের শিক্ষকদের সঙ্গে যোগাযোগ করে ক্লাসে যাও। মুষ্টিমেয় কিছু মানুষের হাতে তোমাদের শিক্ষাজীবন জিম্মি হয়ে থাকতে পারে না।

একইসঙ্গে তিনি বরিশালের বিদ্যোৎসাহী, শিক্ষানুরাগী মুক্তিযোদ্ধা, রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব, বিশিষ্টজনসহ সবার প্রতি আকুল আবেদন জানাচ্ছি। কারও ব্যক্তিগত স্বার্থ চরিতার্থে দক্ষিণবঙ্গের আলোকবর্তিকা বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়কে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিতে না দেওয়ার জন্য আহ্বান জানান।  

বাংলাদেশ সময়: ১০৫৫ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৩, ২০১৯
এমএস/ওএইচ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।