বেঁচে থাকার জন্য যাকে সারাক্ষণ দারিদ্রের সঙ্গে লড়াই করতে হচ্ছে সেই ছেলেটির এ অভাবনীয় সাফল্যে উচ্ছ্বসিত তার বিদ্যালয়ের শিক্ষকমণ্ডলীসহ দোকানের মালিক, সহপাঠী ও প্রতিবেশীরা।
বুলবুল ভবিষ্যতে ডাক্তার (চিকিৎসক) হতে চায়।
বুলবুল গৌরনদী উপজেলা সদরের একটি ভাড়া বাসায় বসবাসরত খলিলুর রহমান ও আলেয়া বেগম দম্পত্তির ছেলে। সে উপজেলা সদরের সরকারি গৌরনদী পাইলট মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে এবারের এসএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে বিজ্ঞান বিভাগ থেকে জিপিএ-৫ পেয়েছে।
বুলবুলের বাবা খলিল এক সময় একটি ক্লিনিকের সিরিয়াল লেখার চাকরি করতেন। পরবর্তী সময়ে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে অসুস্থ হন। মা আলেয়া বেগম সেলাইয়ের কাজ করেন। সংসারে অভাব অনটন লেগেই রয়েছে। পরিবারের আর্থিক অবস্থার কারণে নবম শ্রেণিতে পড়ার সময়ই গৌরনদী বাসস্ট্যান্ডে একটি মোবাইলের দোকানে সেলসম্যানের চাকরি নেয় বুলবুল।
বুলবুল জানায়, তার বাবা খলিলুর রহমান সরদার, হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ায় এখন আর কোনো ভারী কাজ করতে পারেন না। মা আলেয়া বেগমও ডায়াবেটিস-ব্লাড প্রেসারসহ নানা রোগে আক্রান্ত। ফলে তিনিও এখন আর কোনো কাজ করতে পারেন না। এ কারণে নবম শ্রেণিতে ওঠার পর অভাবের তাড়নায় ব্যবসায়ী মামুনুর রশীদ মান্নার মোবাইল বিক্রেতা প্রতিষ্ঠানে সেলসম্যানের কাজ নেন।
প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত দোকানে থাকতে হয় তাকে। এর মাঝে বেলা ১১টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত দুই ঘণ্টার ছুটি পায় সে। ওই সময়টুকু প্রাইভেট পড়া ও দুপুরের খাওয়ার কাজে ব্যয় হয় বুলবুল।
প্রাইভেট পড়া সম্পর্কে বুলবুল জানায়, কোনো শিক্ষককে বেতন দিয়ে সে প্রাইভেট পড়তে পারেনি। সে সক্ষমতাও তার পরিবারের নেই।
এ ছাড়া রাত ৯টার পরে বাসায় ফিরে ৩ থেকে ৪ ঘণ্টা পড়াশোনা ও সকালে ঘুম থেকে ওঠে ১ থেকে ২ ঘণ্টা পড়াশোনা করে এ সাফল্য অর্জন করেছে সে। বুলবুল অষ্টম শ্রেণিতেও একই বিদ্যালয় থেকে জিপিএ-৫ পেয়েছিলো। সে ভবিষ্যতে চিকিৎসক হতে চায়।
সরকারি গৌরনদী পাইলট মাধ্যমিক বিদ্যায়ের প্রধান শিক্ষক অলিউল ইসলাম বলেন, ‘সারাদিন কঠোর পরিশ্রমের পরও বুলবুলকে কোনো সময় লেখাপড়া থেকে মনোযোগ হারাতে দেখিনি। এ কারণে অষ্টম শ্রেণিতেও সে বৃত্তি পেয়েছে। বুলবুলের ভালো দিক হলো বুঝেশুনে উত্তর দেওয়া। এজন্য প্রতি ক্লাসে ভালো ফল করতো। ’
বুলবুলের স্বপ্ন বাস্তবায়নে বিত্তবানদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানান তিনি।
বাংলাদেশ সময়: ২০৩০ ঘণ্টা, মে ৯, ২০১৯
এমএস/ওএইচ/