তেমনি এক শিক্ষার্থী বৃহস্পতিবার (০৯ মে) সামজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আত্মহত্যা করার কথা তুলে ধরেছেন। যা বেরোবি ও রংপুরে ভাইরাল হয়ে পড়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের ২১ বিভাগের যেসব বিভাগে সেশনজট রয়েছে তাদের মধ্যে উইমেন অ্যান্ড জেন্ডার স্টাডিজ বিভাগ অন্যতম। ওই বিভাগের প্রত্যেকটি ব্যাচই জটে পড়েছে। তবে সবচেয়ে বেশি জটে পড়েছেন ২০১৩-১৪ সেশনে ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীরা। ভর্তি হওয়ার সাড়ে পাঁচ বছর অতিক্রম হলেও এখনও তাদের স্নাতক শেষ হয়নি। এমনকি কবে শেষ হবে তারও নির্ধারিত সময় জানা নেই শিক্ষার্থীদের। অথচ ওই ব্যাচে ভর্তি হওয়া অর্থনীতি, মার্কেটিং, ফিনান্স, ম্যানেজমেন্ট, অ্যাকাউন্টিং, রাষ্ট্রবিজ্ঞান ও পরিসংখ্যান বিভাগের শিক্ষার্থীদের মাস্টার্স শেষ হয়েছে। আর অন্য বিভাগগুলোর মাস্টার্স শেষের দিকে।
উপাচার্যের ক্যাম্পাসে না থাকা, শিক্ষক স্বল্পতা, শ্রেণিকক্ষ সংকট, শিক্ষকদের অন্তর্দ্বন্দ্ব, সমন্বয়হীনতা, শিক্ষকদের আদর্শিক দ্বন্দ্ব, দায়িত্বহীনতা, জবাবদিহিতা না থাকাসহ বিভিন্ন কারণে সেশনজট দীর্ঘ হচ্ছে বলে অভিযোগ সাধারণ শিক্ষার্থীদের। অতিদ্রুত এসব সমস্যা সমাধান করা না হলে মুখ থুবড়ে পড়তে পারে উত্তরাঞ্চলের সর্বোচ্চ এই বিদ্যাপীঠের পড়াশোনা।
এদিকে, সেশনজটকে কেন্দ্র করে নিয়মিতই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নিজেদের অসহায়ত্বের কথা তুলে ধরছেন বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীরা। গতকাল তেমনি একটি আবেগঘন স্ট্যাটাস দেন উইমেন অ্যান্ড জেন্ডার স্ট্যাডিজ বিভাগের ২০১৩-১৪ সেশনে ভর্তি হয়ে সেশনজটে আটকে থাকা শিক্ষার্থী আব্দুল মোমিন। আব্দুল মোমিন সিরাজগঞ্জ জেলার মধ্যবিত্ত এক পরিবারের সন্তান। বর্তমানে পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি তার বাবার অসুস্থতার সঙ্গে লড়াই করছেন। তার মা’ও ভুগছেন জটিল সব রোগে। এমন অবস্থায় পরিবারের জন্য কিছুই করতে না পারার যন্ত্রণা তাড়া করছে মেধাবী মোমিনকে।
পাঠকদের সুবিধার্থে আব্দুল মোমিনের পোস্টটি হুবহু তুলে ধরা হলো…
‘মাঝে মাঝে খুব সুইসাইড করতে ইচ্ছে করে, কিন্তু ভয় আর কাফের হয়ে মরে যাওয়ার ভয়ে আর কিছু করা হয় না। এমন একটা সময়ে উপনিত, এখন আমার পরিবারকে সাপোর্ট করা খুবই প্রয়োজন। বাবা-মা দু’জনই অসুস্থ (বিশেষ করে বাবা, ঠিকমত হাঁটতে পারেন না)। একমাত্র উপার্জনকারী বাবার চাকরির বাকি আর কয়েক মাস। বাড়িতে ফোন দিয়ে মেস ভাড়া আর মিলের টাকা চাইতেও লজ্জা লাগে। বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০১৩-২০১৪ সেশনে ভর্তি হয়েছি কিন্তু এখনো অনার্স শেষ করতে ৫-৬ মাস লেগে যাবে। যেখানে আমার সব বন্ধুরা মাস্টার্স শেষ করে এখন কেউ চাকরি করছে বা কেউ চাকরি খুঁজছে। এই ৫-৬ মাসের মধ্যে বাবার চাকরি শেষ হয়ে যাবে। যে রেজাল্ট তাতে কেউ ফেস দেখে যে চাকরি দেবে সে ভরসা, মেয়েদের ভ্রুকুঁচকে তাকানো, বন্ধুমহলে কম প্রাধান্য পাওয়া, কালো আর খাটো হওয়াতে বাবা, মুরুব্বিদের টিটকারী, টিচারদের অবহেলা দেখেই বাদ দিয়েছি। বাড়ির অর্থনৈতিক মন্দা, বাবার অসুস্থতা, দীর্ঘ সেশনজট, চাকরির দুর্লভতা সব মিলিয়ে খুব বড় একটা হতাশার মধ্য দিয়ে দিনানিপাত করছি, যা অনেক সময় আত্মাহুতির জন্য অনুপ্রেরণা যোগায়। আমার এই পোস্ট দেখে অনেকের গা জ্বলবে, অনেকেই তেলবাজি করবে, অনেকেই অনুগ্রহ দেখাবে যা আমার একটুও পছন্দ নয়। পারলে কিছু করে দেখান যাতে করে আমার মত কেউ আত্নাহুতির চিন্তাভাবনা মাথায় না নেয়। আমার জীবনের সবচেয়ে বড় পাপ মনে হয় বেরোবিতে ভর্তি হওয়া। ’
বাংলাদেশ সময়: ১৯১৪ ঘণ্টা, মে ১০, ২০১৯
জেডএস