হিসাব বলছে, ভর্তি পরীক্ষা নিতে প্রতি শিক্ষার্থীর পেছনে সর্বোচ্চ ১০০ টাকা ব্যয় হলেও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ রেজিস্ট্রেশন ফি বাবদ নিচ্ছেন ৩০০ থেকে ৬০০ টাকা পর্যন্ত। এ কারণে উদ্বৃত্ত টাকা ভাগ-বাটোয়ারা না করে রেজিস্ট্রেশন ফি কমানোর দাবি শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের।
বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্টার দফতর ও বিভিন্ন সূত্রে প্রকাশিত হিসেবে দেখা যায়, চলতি ২০১৮-১৯ সেশনে প্রথমবর্ষে ভর্তি পরীক্ষার ফরম বিক্রি বাবদ ৩ কোটি ৪২ লাখ ৭০৫ টাকা আয় করে বেরোবি কর্তৃপক্ষ। সেখান থেকে ৮ শতাংশ হারে সার্ভিস চার্জ কেটে নেয় টেলিটক। টেলিটক কেটে নেওয়ার পর বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে থাকে ৩ কোটি ১৬ লাখ ৮৭ হাজার টাকা। এ অর্থ থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ফান্ডে ৪০ শতাংশ হারে ১ কোটি ২৬ লাখ টাকা জমা দেয় কেন্দ্রীয় ভর্তি কমিটি। এছাড়া ভর্তি পরীক্ষা চলাকালীন পরীক্ষার খরচ বাবদ ৭৪ লাখ ৮৪ হাজার টাকা ব্যয় দেখায় ভর্তি কমিটি। এরপর ওই টাকা থেকে উদ্বৃত্ত থাকে ১ কোটি ১৫ লাখ ২৭ হাজার টাকা।
সোমবার (১৩ মে) ওই সোয়া কোটি টাকা সই করে নিজেদের মধ্যে ভাগবাটোয়ারা করে নেন ভিসিসহ শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা। পজেশন অনুযায়ী বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে এ বাটোয়ারা করা হয়। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনা আইন অনুযায়ী উদ্বৃত্ত টাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল তহিবেল জমা হওয়ার কথা ছিলো।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিশ্ববিদ্যালয়ের এক কর্মকর্তা বাংলানিউজকে জানান, উদ্বৃত্ত সোয়া কোটি টাকার মধ্যে সবচেয়ে বেশি পেয়েছেন উপাচার্য। ভিসি কেন্দ্রীয় ভর্তি কমিটির আহ্বায়ক, ডিন ও বিভাগীয় প্রধান হিসেবে সম্মানি বাবদ তিন লাখ টাকা নিয়েছেন। ভর্তি কমিটির সদস্য সচিব রেজিস্ট্রার আবু হেনা মোস্তফা কামাল পেয়েছেন ১০ হাজার টাকা।
আর, বাকি অর্থ অনুষদভিত্তিক ভাগ করে দেওয়া হয়েছে। যে অনুষদে বেশি ফরম বিক্রি হয়েছে সে অনুষদ বেশি পরিমাণ অর্থ পেয়েছে। প্রাপ্ত তথ্যমতে, কলা অনুষদভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীরা নিয়েছেন ২১ লাখ ৪২ হাজার ১৪১ টাকা, সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীরা ৪১ লাখ ২৭ হাজার ২০৯ টাকা, বিজনেস অনুষদভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীরা নিয়েছেন ১১ লাখ ৯৯ হাজার ২৯ টাকা, বিজ্ঞান অনুষদভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীরা নিয়েছেন ১৩ লাখ ১৩ হাজার ৮৬৮ টাকা, প্রকৌশল ও প্রযুক্তি অনুষদভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীরা ৬ লাখ ৫ হাজার ২৬৯ টাকা এবং জীব ও ভূ-বিজ্ঞান অনুষদভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীরা নিয়েছেন ৭ লাখ ৪৬ হাজার ৮৯৯ টাকা।
সূত্র জানায়, পরীক্ষার হলেই দায়িত্বরত প্রত্যেক শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীকে নগদ মোটা অংকের সম্মানি দেওয়া হয়। এছাড়া প্রত্যেক অনুষদকে খরচ বাবদ অগ্রিম দুই থেকে আড়াই লাখ টাকা দেওয়া হয়। তারপর ভর্তি পরীক্ষার উদ্বৃত্ত টাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন কাজে ব্যবহার না করে এভাবে ভাগাভাগি করে নেওয়া হচ্ছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক আব্দুর রহমান জানান, এভাবে টাকা ভাগ-বাটোয়ারা করে নেওয়া সম্পূর্ণ বেআইনি ও অনৈতিক। এটি না করে ভর্তি পরীক্ষার রেজিস্ট্রেশন ফি কমালে অভিভাবকদের ওপর আর্থিক চাপ কমবে।
বিষয়টি নিয়ে রংপুর মহানগর সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সভাপতি ফখরুল আনাম বেঞ্জু বাংলানিউজকে বলেন, বিষয়টি দুঃখজনক। উত্তরাঞ্চলের পিছিয়ে পড়া শিক্ষার্থীদের কল্যাণে এ বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা হলেও বারবার তার বিচ্যুতি ঘটছে। নিয়মের তোয়াক্কা না করে এভাবে টাকা ভাগ-বাটোয়ারা করা কোনোভাবেই উচিৎ না। ক্যাম্পাসের উন্নয়নে এসব টাকা ব্যবহার করা যেতো।
এবিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক তুহিন ওয়াদুদ বলেন, সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষা হলে এধরনের প্রশ্ন উঠবে না।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের মুখপাত্র তাবিউর রহমান বলেন, বিভিন্ন অনুষদের কমিটিগুলোর খরচ বাবদ টাকা দেওয়া হয়েছে। এছাড়া সংশ্লিষ্ট সবাই রেমুনারেশন নিয়েছে। এটাকে ভাগ-বাটোয়ারা মানতে নারাজ তিনি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার আবু হেনা মোস্তফাকে কয়েকবার কল করা হলেও তিনি রিসিভ না করে কেটে দেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহর মোবাইলে একাধিকবার ফোন করলেও তিনি রিসিভ করেননি । তার কার্যালয়ে গেলে তিনি ঢাকায় বলে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
বাংলাদেশ সময়: ১২১১ ঘণ্টা, মে ১৫, ২০১৯
ওএইচ/