খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সিটি করপোরেশনের অধীন ৬০টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও ১৫০টি কিন্ডারগার্টেন স্কুলে কোনো খেলার মাঠ নেই।
মহানগরীর রেলস্টেশন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও গৌরহাঙ্গা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, কাদিরগঞ্জ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, লক্ষ্মীপুর ভাটাপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, মাঠ তো দূরে থাক স্কুলগুলোই যেন পাখির খাঁচা।
প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের বিভাগীয় কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, রাজশাহী বিভাগের অনেক বিদ্যালয়ের খেলার মাঠ ছিলো। কিন্তু ধীরে ধীরে সব দখল হয়ে গেছে। অনেক প্রতিষ্ঠানে খেলার মাঠেই গড়ে উঠেছে বিদ্যালয়ের স্থাপনা। যেটুকু রয়েছে, তাতে খেলাধুলার কোনো পরিবেশ নেই।
সূত্র মতে, রাজশাহী জেলায় ছয়টি, নওগাঁয় ৬০টি, নাটোরে ৩৫টি, বগুড়ায় ২৪টি, সিরাজগঞ্জে একটি এবং চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলায় ২১টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের খেলার মাঠ দখল হয়ে গেছে। এর মধ্যে মহানগরীর গৌরহাঙ্গা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রাঙ্গণে গড়ে উঠেছে স্টিল ওয়ার্কশপ। সারাক্ষণ উচ্চ শব্দে কাজ চলে সেখানে। রেলস্টেশন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনের রাস্তায় সারাক্ষণ বাস দাঁড়িয়ে থাকে। চলমান বাস-ট্রাকের উচ্চ শব্দে লেখাপড়ায় মন বসাতে পারে না স্কুলের কোমলমতি শিশুরা। এছাড়া মহানগরীর উপকণ্ঠ কাটাখালী পৌর এলাকার মাসকাটাদিঘি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠ দখল করে বসানো হয়েছে সবজির হাট। শুক্রবার ও সোমবার নিয়ম করে স্কুল মাঠে হাট বসে। স্কুল চলাকালীন হাট বসায় বিঘ্নিত হয় শিক্ষার পরিবেশ।
প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের রাজশাহী বিভাগীয় উপ-পরিচালক আবুল কালাম আজাদ বলেন, গ্রাম পর্যায়ের প্রতিটি বিদ্যালয়েই খেলার মাঠ রয়েছে। তবে নানান কারণে মহানগরীর বিদ্যালয়গুলোতে খেলার মাঠ নেই। এর কারণ হচ্ছে গ্রামের প্রতিটি স্কুল ৩৩ শতাংশ জায়গার ওপর প্রতিষ্ঠিত।
আর মহানগরীর স্কুলগুলো প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে ৬ শতাংশ জমির ওপর। ফলে মহানগরীর বিদ্যালয়গুলোতে খেলার মাঠ অবহেলিত থেকে গেছে। জেলা পর্যায়ের শহর এলাকাগুলোতেও একই অবস্থা। এর মধ্যে কোথাও কোথাও বিদ্যালয়ের খেলার মাঠ দখল হয়ে গেছে। তবে নতুন করে ভবন নির্মাণ হলে বহুতল ভবনের নিচতলায় শিশুদের জন্য খেলার জায়গা রাখার বিষয়টি ভাবনায় রয়েছে বলে জানান তিনি।
এছাড়া বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুননেছা বার্ষিক ক্রীড়াসহ বছরে দু’টি খেলা তাদের জন্য আয়োজন করা হচ্ছিলও বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
এদিকে সংস্কৃতিকর্মী আফজাল হোসেন বলেন, বিদ্যালয়গুলোতে শিশুদের জন্য খেলার মাঠ থাকবে না, এ কথা ভাবাই যায় না। আমাদের শৈশবের স্মৃতিতে এখনও গেঁথে আছে বিদ্যালয়ের খেলার মাঠ। অথচ আমাদের শিশুদের তা বোঝানোই যায় না। কারণ তারা খেলার মাঠই পায়নি৷ পড়ালেখা শেষে সারাক্ষণ স্মার্টফোন নিয়েই ডুবে থাকে।
অথচ শিশুদের মূল বিকাশই হয় খেলাধুলার মাধ্যমে। পড়ালেখার বাইরে মাঠে শিশুরা দৌড়াবে, খেলবে। তবেই না শিশুরা ভালো থাকবে। আনন্দে থাকবে। আর আনন্দের মাধ্যমে শেখাটাই প্রকৃত শেখা। এজন্য বিষয়টি বল নিয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান এই সংস্কৃতিকর্মী।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক মজিবুল হক আজাদ খান বলেন, শিশুর মানসিক বিকাশের জন্য খেলাধুলা অপরিহার্য। খেলাধুলা না করলে শিশুর শারীরিক এবং মানসিক বিকাশ বাধাগ্রস্ত হয়। সে এক সময় ঘরের ভেতর বন্দী থেকে আত্মকেন্দ্রিক হয়ে ওঠে। খেলাধুলা না করায় অনেক সময় তারা সামাজিকতাও হারিয়ে ফেলে। জড়িয়ে পড়ে অপরাধ কর্মকাণ্ডে। খেলাধুলা না করায় তারা এখন সারাক্ষণ ডুবে থাকে কম্পিউটার, ট্যাব, মোবাইল আর ল্যাপটবের মধ্যে। এতে ঘরে ঘরে শিশুরা জটিল সমস্যায় ভুগছে।
তিনি আরও বলেন, খেলাধুলার অভাবে শিশুরা অমনযোগী হয়ে পড়ছে পড়াশোনায়। হীনমন্যতায় ভোগার পাশাপাশি বাধাগ্রস্ত হচ্ছে তাদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশ। তাই ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে ভালোভাবে গড়ে তুলতে খেলার মাঠ অপরিহার্য বলেও মন্তব্য করেন এই মনোবিজ্ঞানী।
বাংলাদেশ সময়: ১০১৪ ঘণ্টা, জুন ২০, ২০১৯
এসএস/এএটি