বৃহস্পতিবার (২১ নভেম্বর) আন্দোলনকারীদের দেওয়া আলটিমেটাম শেষ হলেও চিত্র পাল্টায়নি বিশ্ববিদ্যালয়ের। তবে, শিক্ষা কার্যক্রম ও আবাসিক হল বন্ধ থাকলেও চলছে প্রশাসনিক কার্যক্রম।
অ্যাকাডেমিক কার্যক্রম বন্ধ থাকায় অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে স্নাতক প্রথম ও দ্বিতীয় বর্ষের সমাপনী পরীক্ষা। এছাড়া, অধিকাংশ বিভাগের পূর্বনির্ধারিত স্নাতকোত্তর পরীক্ষাও আটকে গেছে অনির্দিষ্টকালের জন্য। ফলে, তীব্র সেশনজটের আশংকায় পড়েছেন শিক্ষার্থীরা।
এদিকে, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে প্রশাসনের কাছে হল খুলে দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন অসংখ্য শিক্ষার্থী।
প্রাণরসায়ন ও অনুপ্রাণ বিভাগে ৪৩ ব্যাচের নরত্তম বিশ্বাস লিখেছেন, ক্যাম্পাসের আশপাশে গেরুয়া, ইসলামনগর, বটতলা বাজার প্রতিটি জায়গা একেকটি শরণার্থী শিবিরে পরিণত হয়েছে। ক্যাম্পাসের আশপাশে যেসব বড় ভাই-আপু থাকেন, পড়াশোনার জন্য লাইব্রেরিটাই তাদের সম্বল। সামনে বিসিএসের রিটেন (লিখিত পরীক্ষা)। দয়া করে হলগুলো আর লাইব্রেরিটা খুলে দেন।
সুলতান আজিজুল নামের এক শিক্ষার্থী লিখেছেন, আপনারা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বার্থে দ্রুত একটা সমাধানে আসেন, হলগুলো খুলে দেন। অনেক ছেলেকে দেখি একটা ব্যাগ কাঁধে নিয়ে গেরুয়ায় সারাদিন ঘোরাঘুরি করে। ব্যাগের মধ্যে থাকে একটা লুঙ্গি আর একটা গামছা, রাত হলে কোনো এক ভাইয়ের রুমে গিয়ে ঘুমায়, আবার সকাল হলে ব্যাগ নিয়ে বের হয়ে যায়। বাড়ি যেতে পারে না, কারণ বাড়ি গেলে একমাত্র টিউশনিটা হারাবে। আর এই টিউশনিটা হারালে তার পড়াশোনাটাও শেষ হয়ে যেতে পারে।
শিক্ষার্থীদের ভোগান্তির বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রোক্টর আ স ম ফিরোজ-উল-হাসান বাংলানিউজকে বলেন, যেকোনো আন্দোলনেই ভোগান্তিতে পড়তে হয় সাধারণ শিক্ষার্থীদের। এটা দীর্ঘদিন ধরে হয়ে আসছে। শিক্ষার্থীদের ভোগান্তির বিষয়টি আমাদের মাথায় রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এই সংকট নিরসনে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালাচ্ছে।
এদিকে, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ ফেরাতে দেওয়া আলটিমেটামের শেষ দিন বৃহস্পতিবার (২১ নভেম্বর) বিকেলে নতুন কলা ভবনের শিক্ষক লাউঞ্জে সংবাদ সম্মেলন করে প্রশাসনের উদাসীনতার প্রতিবাদ জানিয়েছেন ‘দুর্নীতির বিরুদ্ধে জাহাঙ্গীরনগর’ ব্যানারের আন্দোলনকারীরা।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্ট জাবি শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক শোভন রহমান বলেন, গত ১৩ নভেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার স্বাভাবিক পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে প্রশাসনকে আটদিনের আলটিমেটাম দিয়েছিলাম। কিন্তু, প্রশাসন বিশ্ববিদ্যালয় সচল করার বিষয়ে উদ্যোগী না হয়ে ফাঁকা ক্যাম্পাসের সুযোগ কাজে লাগিয়ে মাস্টাররোল ও দৈনিক ভিত্তিতে একের পর এক কর্মচারী নিয়োগ করে যাচ্ছে। উপাচার্যসহ বর্তমান প্রশাসন ছাত্রদের স্বার্থরক্ষায় যতটা আন্তরিক, তার চেয়ে নিজের স্বার্থরক্ষায় বেশি মরিয়া।
এর আগে, গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরনো প্রশাসনিক ভবনে ক্লাস-পরীক্ষা ও হল চালু রাখতে উপাচার্য অধ্যাপক ফারজানা ইসলামের কাছে লিখিত আবেদন জানিয়েছে ‘সাধারণ শিক্ষার্থীরা’। এসময় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের ১৩ শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিলেন, যারা চলমান উপাচার্যবিরোধী আন্দোলনের পক্ষ-বিপক্ষের কোনো অবস্থানে নন বলে জানিয়েছেন।
কবে নাগাদ হল খুলে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম স্বাভাবিক করা হতে পারে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রভোস্ট কমিটির সভাপতি অধ্যাপক বশির আহমেদ বাংলানিউজকে বলেন, অভিযোগ যেহেতু বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে গেছে, তাই তদন্ত হওয়া পর্যন্ত আন্দোলনকারীদের কর্মসূচি থেকে বিরত থাকা উচিত। আন্দোলনকারীরা তাদের কর্মসূচি থেকে সরে আসলে আমাদের জন্য হল খোলার সিদ্ধান্ত নিতে সুবিধা হয়।
বাংলাদেশ সময়: ২১০৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ২১, ২০১৯
একে