ইউরোপের চারটি গুরুত্বপূর্ণ ভৌগোলিক অঞ্চল যথা- আল্পস পর্বতমালা, প্যানোনিয়ান প্লেট, ভূ-মধ্যসাগর এবং ডিনারেইডসের মিলন ঘটেছে এ স্লোভেনিয়াতে এসে। লুবলিয়ানা দেশটির রাজধানী এবং বৃহত্তম শহর।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর এটি ছিলো ইউরোপ মহাদেশের ইতিহাসে প্রথম কোনও সংঘটিত যুদ্ধ, যেখানে ৭৬ জন মানুষের প্রাণহানি ঘটেছিলো। তাই স্লোভেনিয়াকে অপেক্ষাকৃতভাবে নতুন একটি রাষ্ট্র হিসেবে আখ্যা দিলেও ভুল হবে না। তবে স্বাধীনতার পর থেকেই দেশটি অর্থনৈতিক, সামাজিকসহ যাবতীয় ক্ষেত্রে দ্রুত অগ্রগতি অর্জন করতে থাকে। ২০০৪ সালে স্লোভেনিয়া ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের সদস্যপদ লাভ করে এবং ২০০৭ সালে টোলারের বদলে ইউরো দেশটির জাতীয় মুদ্রা হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করে। এক সময় কমিউনিজম শাসনের প্রচলন ছিলো এমন রাষ্ট্রের মধ্যে স্লোভেনিয়াই সর্বপ্রথম ইউরোর ব্যবহার শুরু করে। ব্রাউন বিয়ার, বিভিন্ন ধরণের সুউচ্চ পর্বতমালা বিশেষ করে আল্পস পর্বতমালা ও বিভিন্ন হৃদ ও স্কি রিসোর্টের জন্য স্লোভেনিয়া পর্যটকদের কাছে একটি জনপ্রিয় গন্তব্যস্থল।
যদিও দেশটি বলতে গেলে নতুন একটি রাষ্ট্র তবুও শিক্ষাক্ষেত্রে দেশটির অগগ্রতি চোখে পড়ার মতো। স্লোভিন দেশটির মানুষের প্রধান ভাষা হলেও দেশটির সর্বত্র প্রায় সবাই ইংরেজি বলতে পারেন। ইফ ইংলিশ প্রফিসিয়েন্সি ইনডেক্স অনুযায়ী স্লোভেনিয়ার স্কোর ৬৪.৪৮ যা সারা পৃথিবীর মধ্যে নবম এবং এক সময় কমিউনিজম শাসন ব্যবস্থার প্রচলন ছিলো এমন দেশগুলোর মধ্যে প্রথম। নেদারল্যান্ডস, সুইডেন, নরওয়ে, ডেনমার্ক, ফিনল্যান্ড, অস্ট্রিয়ার পরপরই স্লোভেনিয়ার অবস্থান।
ইউনিভার্সিটি অব লুবলিয়ানা, ইউনিভার্সিটি অব মারিবোর, ইউনিভার্সিটি অব নোভা গোরিছা, ইউনিভার্সিটি অব প্রিমরস্কা দেশটির উল্লেখযোগ্য কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম। এদের মধ্যে ইউনিভার্সিটি অব লুবলিয়ানা এবং ইউনিভার্সিটি অব মারিবোর আন্তর্জাতিক যে কোনও সূচকে সারা পৃথিবীর প্রথম পাঁচশোটি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে বিভিন্ন সময়ে স্থান পেয়েছে। আমাদের দেশ থেকে যখন কেউ বাইরের কোনও দেশে আসার জন্য পরিকল্পনা গ্রহণ করে প্রথমে তার মাথায় যে জিনিসটি কাজ করে সেটি হচ্ছে ল্যাঙ্গুয়েজ ব্যারিয়ার এবং এ ক্ষেত্রে স্লোভেনিয়া অনেকটাই নমনীয়। কেননা স্লোভেনিয়ার প্রায় সকল বিশ্ববিদ্যালয়ে ব্যাচেলর, মাস্টার্স কিংবা পি.এইচ.ডি সকল ক্ষেত্রেই উল্লেখযোগ্য সংখ্যক ডিগ্রি প্রোগ্রাম পাওয়া যায় ইংরেজিতে এবং এখনও ইউরোপের অন্যান্য দেশগুলোর তুলনায় স্লোভেনিয়াতে অনেক কম খরচে পড়াশুনা করা যায়।
স্লোভেনিয়ার একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ব্যাচেলর কিংবা মাস্টার্সসহ যে কোনও লেভেলে পড়াশুনা করতে হলে এক বছরে ২,৮০০ ইউরো থেকে ৪,০০০ ইউরোর মতো টিউশন ফির প্রয়োজন এবং দেশটির জীবন-যাত্রার ব্যয়ও ইউরোপের অন্যান্য দেশ থেকে অনেক কম। কিছু কিছু ইউনিভারসিটিতে কিছু নির্দিষ্ট সাবজেক্টের ক্ষেত্রে এক বছরে ৮০০০ ইউরো টিউশন ফির প্রয়োজন হতে পারে। আবার আমাদের দেশ থেকে যারা উচ্চশিক্ষার জন্য বাইরে আসতে চান, অনেকের মাঝেই পার্ট-টাইম চাকরির চিন্তা-ভাবনা কাজ করে এবং এ ক্ষেত্রেও স্লোভেনিয়া অনেকটা নমনীয়। ‘এম জব সার্ভিস’ এবং ‘ই-স্টুডেন্টস্কি সার্ভিস’ নামে দুইটি অর্গানাইজেশন রয়েছে যারা শিক্ষার্থীদের পার্টটাইম চাকরির ব্যাপারে সর্বোতভাবে সহযোগিতা করে থাকে এবং এ দুইটি অর্গানাইজেশন স্লোভেনিয়ার প্রায় সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান দ্বারা স্বীকৃত। এছাড়া শিক্ষার্থীদের জন্য আরও রয়েছে ‘বনি বা সাবসিডাইজড মিল’ এবং ‘সাবসিডাইজসড বাস সার্ভিস’ নামে দুইটি বিশেষ পরিষেবা, যেখানে আপনি একজন স্টুডেন্ট হিসেবে অনেকটা সাশ্রয়ী মূল্যে খাবার কিংবা গণপরিবহন ব্যবহারের সুবিধা উপভোগ করতে পারবেন।
স্লোভেনিয়ার বেশিরভাগ ইউনিভার্সিটিতে আবেদন করতে হলে আপনাকে নিচের লিঙ্কে গিয়ে অ্যাকাউন্ট খুলে আবেদন শুরু করতে হবে। প্রত্যেক বছর ফেব্রুয়ারি থেকে অ্যাডমিশনের জন্য আবেদন গ্রহণ করা শুরু হয় এবং জুন মাস পর্যন্ত আবেদনের সময়সীমা থাকে। সাধারণত প্রত্যেক বছরের সেপ্টেম্বর-অক্টোবর সেশনের জন্য আবেদন গ্রহণ করা হয়; তবে কদাচিৎ কিছু কিছু ইউনিভার্সিটিতে কিছু নির্দিষ্ট সাবজেক্টের জন্য ফেব্রুয়ারি-মার্চ সেশনের জন্যও আবেদন নেওয়া হয়।
প্রত্যেক বছরের অক্টোবর মাস থেকে স্লোভেনিয়ার বেশিরভাগ বিশ্ববিদ্যালয়ে অ্যাকাডেমিক কার্যক্রম শুরু হয়। অ্যাকাউন্ট চালু হয়ে যাওয়ার পর আপনাকে ‘Academic Year’ এবং আপনার পছন্দের ইউনিভার্সিটি ও পছন্দের সাবজেক্ট সিলেক্ট করে একটা অনলাইন আবেদন ফরম পূরণ করতে হবে। সেখানে আপনার পার্সোনাল ডিটেইলস চাওয়া হবে। স্লোভেনিয়ার ইউনিভার্সিটিগুলোতে আবেদন করার ক্ষেত্রে সাধারণত কোনও ধরনের ফি নেওয়া হয় না।
https://portal.evs.gov.si/prijava/?locale=en
অনলাইন অ্যাপ্লিকেশন ফরম পূরণ করা হয়ে গেলে আবেদনকারী শিক্ষার্থীর কাছে একটি ই-মেইল পাঠানো হয় এবং এ ই-মেইলে অ্যাটাচমেন্ট হিসেবে একটি পিডিএফ ফাইল দেখতে পাওয়া যায়। এ পিডিএফ ফাইল ডাউনলোড করতে হবে এবং পরে সেটাকে প্রিন্ট আউট করে আবেদনকারী শিক্ষার্থীর একটি স্বাক্ষর প্রদান করতে হয়। অনলাইন অ্যাপ্লিকেশন ফরম পূরণ করার কয়েক দিনের মধ্যে অ্যাপ্লিকেশন পূরণ করার সময় যে ঠিকানা উল্লেখ করা হয়েছিলো সে ঠিকানায় ইউনিভার্সিটির ইন্টারন্যাশনাল অ্যাডমিশন অফিসের পক্ষ থেকে একটি চিঠি পাঠানো হবে। এরপর সে চিঠিতে উল্লেখিত ঠিকানায় প্রিন্ট আউট করা উক্ত পিডিএফ ফাইলের কপি যেটিতে একটু আগে সিগনেচার করার কথা বলেছিলাম সেটি কুরিয়ার সহযোগে ইউনিভার্সিটির ইন্টারন্যাশনাল অ্যাডমিশন অফিসে পাঠানোর ব্যবস্থা করতে হবে। সাথে আরও যে সকল ডকুমেন্ট সংযুক্ত করতে হবে:
১. যাবতীয় অ্যাকাডেমিক সার্টিফিকেট এবং ট্রান্সক্রিপ্টের অরিজিনাল কপি;
২. যাবতীয় অ্যাকাডেমিক সার্টিফিকেট এবং ট্রান্সক্রিপ্টের এক সেট সত্যায়িত কপি;
৩. যে কোনও ইংলিশ প্রফিসিয়েন্সি সার্টিফিকেটের কপি;
এছাড়া মাস্টার্স প্রোগ্রামের জন্য যদি কেউ আবেদন করে থাকেন, তার ক্ষেত্রে অনেক সময় সিভি, মোটিভেশনাল লেটার এমনকি ব্যাচেলরের কোর্স ডিসক্রিপশনও চাওয়া হতে পারে।
বাংলাদেশের সার্টিফিকেট কিংবা মার্কশিটের কিংবা অন্য কোনও ধরণের ডকুমেন্টের ক্ষেত্রে অনেক সময় স্লোভেনিয়ার মিনিস্ট্রি অব ফরেন অ্যাফেয়ার্স থেকে লিগালাইজেশন করতে বলা হয়। স্লোভেনিয়ার মিনিস্ট্রি অব ফরেন অ্যাফেয়ার্স থেকে বাংলাদেশি কোনও ডকুমেন্ট লিগালাইজেশন করার শর্ত হচ্ছে- প্রথমে অস্ট্রিয়ার রাজধানী ভিয়েনাতে অবস্থিত বাংলাদেশের অ্যাম্বাসি থেকে সেগুলোকে অ্যাটাস্টেশন করা।
স্লোভেনিয়ার ইউনিভার্সিটি আপনার ডকুমেন্ট ততোক্ষণ পর্যন্ত গ্রহণ করবে না যতোক্ষণ পর্যন্ত না আপনার যাবতীয় অ্যাকাডেমিক সার্টিফিকেট এবং ট্রান্সক্রিপ্টের কপি স্লোভেনিয়ার মিনিস্ট্রি অব ফরেন অ্যাফেয়ার্স থেকে লিগালাইজেশন করানো হয়। আর স্লোভেনিয়ার মিনিস্ট্রি অব ফরেন অ্যাফেয়ার্স বাংলাদেশের কোনও ডকুমেন্ট ততোক্ষণ পর্যন্ত গ্রহণ করে না যতোক্ষণ পর্যন্ত না আপনি আপনার ডকুমেন্ট অস্ট্রিয়ার রাজধানী ভিয়েনাতে অবস্থিত বাংলাদেশের দূতাবাস থেকে সত্যায়িত করাতে পারছেন এবং তাদের ওয়েবসাইটে এটা সুনির্দিষ্টভাবে বলা আছে। একমাত্র ভিয়েনাতে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাস থেকে কোনও ডকুমেন্ট অ্যাটেস্টেড করা হলেই কেবলমাত্র স্লোভেনিয়ার মিনিস্ট্রি অব ফরেন অ্যাফেয়ার্স আপনার ডকুমেন্ট লিগালাইজেশনের জন্য গ্রহণ করবে। স্লোভেনিয়ার মিনিস্ট্রি অব ফরেন অ্যাফেয়ার্স কোনো ডকুমেন্ট লিগালাইজেশনের জন্য পৃষ্ঠা প্রতি তিন ইউরো করে রাখে এবং দুর্ভাগ্যবশত তারা কোনও কুরিয়ার কপি গ্রহণ করে না। অনেক সময় ইউনিভার্সিটিকে অনুরোধ করলে ইউনিভার্সিটি কর্তৃপক্ষ লিগালাইজেশনের ব্যবস্থা করে দেয়।
ভিয়েনাতে অবস্থিত বাংলাদেশ অ্যাম্বাসি থেকে কোনও ডকুমেন্ট অ্যাটাস্টেশন করার শর্ত হচ্ছে, প্রথমে সেটিকে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় দ্বারা সত্যায়িত হতে হবে এবং ভিয়েনার বাংলাদেশ অ্যাম্বাসি যে কোনও ডকুমেন্ট অ্যাটাস্টেশন করতে পৃষ্ঠা প্রতি দশ ইউরো করে রাখে।
সাধারণত স্লোভেনিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়গুলো আগস্ট মাসের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত সময় দেয় যাবতীয় ডকুমেন্ট পাঠানোর জন্য তবে এ সময়ের মধ্যে পাঠাতে না পারলে আপনি অতিরিক্ত সময়সীমার জন্য আবেদন করতে পারেন এবং আপনাকে এর জন্য নির্ধারত তারিখের আগে ইউনিভার্সিটিকে ই-মেইল দিতে হবে।
অ্যাডমিশন কনফার্ম হয়ে গেলে আপনি ইউনিভার্সিটি থেকে লেটার অব অ্যাকসেপ্টেন্স পাবেন এবং আপনাকে কুরিয়ারের মাধ্যমে লেটার অব অ্যাকসেপ্টেন্স পাঠানো হবে। যদি লেটার অব অ্যাকসেপ্টেন্সে এ সময় টিউশন ফি প্রদানের কথা উল্লেখ থাকে তাহলে যে কোনও ব্যাংকে গিয়ে স্টুডেন্ট ফাইল ওপেন করে টিউশন ফি পাঠানোর ব্যবস্থা করতে হবে। সেক্ষেত্রে ইউনিভার্সিটি টিউশন ফি গ্রহণ করার পর আপনাকে চূড়ান্ত "লেটার অব ইনরোলমেন্ট" পাঠাবে।
ইউনিভার্সিটিতে ইনরোলমেন্ট নিশ্চিত হয়ে গেলে আপনাকে ভিসা কিংবা টেম্পোরারি রেসিডেন্স পারমিটের জন্য অ্যাপ্লিকেশন করতে হবে।
স্লোভেনিয়ার কোনও অ্যাম্বাসি বাংলাদেশে না থাকায় আপনাকে ভিসা অথবা টেম্পোরারি রেসিডেন্স পারমিটের এর জন্য আবেদন করার ক্ষেত্রে দিল্লিতে যেতে হবে। আমি আপনাদেরকে দিল্লিতে অবস্থিত স্লোভেনিয়ার অ্যাম্বাসির ওয়েবসাইট নিচে উল্লেখ করে দিচ্ছি।
http://www.newdelhi.embassy.si
ঠিকানা:
Embassy of the Republic of Slovenia;
New Delhi; A - 5/4,
Vasant Vihar;
New Delhi 110 057;
India.
বিস্তারিত তথ্যের জন্যঃ-
http://www.newdelhi.embassy.si/index.php?id=37&L=1
ই-মেইলের মাধ্যমে আপনি স্লোভেনিয়ার অ্যাম্বাসিতে ভিসার জন্য অ্যাপোয়েনমেন্ট পেতে পারেন। অ্যাম্বাসিতে ই-মেইল করার ঠিকানা: [email protected]
অ্যাম্বাসি ফি এ বছর থেকে ৭৭ ইউরো করা হয়েছে, অ্যাম্বাসির ওয়েবসাইটে গেলে আপনি ব্যাংক ডিটেইলস পাবেন যেখানে এ ফি জমা দিতে হবে। এরপর তাদের ওয়েবসাইট থেকে ভিসা কিংবা টেম্পোরারি রেসিডেন্ট পারমিট অ্যাপ্লিকেশনের ফরম ডাউনলোড করে সেটা পূরণ করতে হবে। ভিসা কিংবা টেম্পোরারি রেসিডেন্ট পারমিট অ্যাপ্লিকেশনের জন্য প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট:
১. ইউনিভার্সিটি কর্তৃক প্রদত্ত লেটার অব ইনরোলমেন্ট;
২. স্লোভেনিয়ার মিনিস্ট্রি অব ফরেন অ্যাফেয়ার্স কর্তৃক প্রদত্ত একটি অবজারভেশন লেটার যা ইউনিভার্সিটি আপনাকে লেটার অব ইনরোলমেন্টের সাথে প্রেরণ করবে;
৩. পাসপোর্ট, উল্লেখ্য যে পাসপোর্টের মেয়াদ কমপক্ষে তিন মাস থাকতে হবে (তবে ছয় মাস হলে উত্তম) এবং পাসপোর্টে অন্ততপক্ষে দুইটি ফাঁকা পৃষ্ঠা থাকতে হবে এবং সেই সাথে পুরো পাসপোর্টের ফটোকপি এবং ভিসা অ্যাপ্লিকেশনের সময় সীমা থেকে শুরু করে তিন বছরের মধ্যে যদি কোনও দেশে যাতায়াতের অভিজ্ঞতা থাকে তাহলে সে দেশের ভিসা, অ্যারাইভাল ও ডিপার্চার সীলের ফটোকপি;
৪. মেডিকেল ইন্সুরেন্স;
৫. পুলিশ ক্লিয়ারেন্সের কপি (পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট কোনোভাবেই যেন তিন মাসের অধিক পুরাতন না হয় সে দিকে খেয়াল রাখতে হবে);
৬. সেলফ ফাইনান্সিং স্টুডেন্ট হলে ব্যাংক স্টেটমেন্ট এবং ব্যাংক সলভেন্সি সার্টিফিকেটের অরিজিনাল কপি। ব্যাংক স্টেটমেন্ট কমপক্ষে ছয় মাসের হতে হবে এবং এক বছরের টিউশন ফি, থাকা-খাওয়া এবং আনুসাঙ্গিক খরচ মিলিয়ে যে পরিমাণ খরচ দাঁড়ায় তার সমপরিমাণ অর্থ ব্যাংকে থাকতে হবে। ফাইন্যান্সিয়াল স্পন্সরের অ্যাফিডেভিট অত্যাবশ্যক। স্পন্সর যদি অন্য কেউ হয় সেক্ষেত্রে একটা লিখিত স্টেটমেন্ট অত্যাবশ্যক যেখানে উল্লেখ থাকতে হবে যে স্লোভেনিয়াতে থাকাকালীন সময়ে তিনি আপনার লেখাপড়া এবং থাকা-খাওয়া সহ যাবতীয় ব্য্যভার বহন করতে চলেছেন এবং এ লিখিত স্টেটমেন্ট নোটারাইজড করতে হবে কিংবা প্রথম শ্রেণীর কোনও ম্যাজিস্ট্রেট দ্বারা সত্যায়িত করতে হবে;
৭. স্কলারশিপ হোল্ডার হলে স্কলারশিপ লেটার;
৮. ফ্লাইটের রিজার্ভেশনের কপি;
৯. দুই কপি ছবি (৪.৫ সেমি. X ৩.৫ সেমি)
১০. অ্যাকোমডেশনের কনফার্মেশন. ইউনিভার্সিটির সাথে যোগাযোগ করে তাদের নির্দেশনা অনুযায়ী আপনি এ কনফার্মেশন পেতে পারেন;
১১. সমস্ত সার্টিফিকেট এবং ট্রান্সক্রিপ্টের এক সেট অরিজিনাল এবং এক সেট অ্যাটাস্টেড কপি। অ্যাম্বাসির জন্য সার্টিফিকেট এবং ট্রান্সক্রিপ্টের কপিগুলো বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে সত্যায়িত করে নিলেই হবে;
১২. ইংলিশ প্রফিসিয়েন্সি টেস্টের সার্টিফিকেট
১৩. বার্থ সার্টিফিকেটের কপি, বার্থ সার্টিফিকেট অবশ্যই আইন ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় যারা সত্যায়িত হতে হবে;
অ্যাপোয়েমেন্টের তারিখে এ সকল ডকুমেন্ট অ্যাম্বাসিতে গিয়ে জমা দিয়ে আসতে হবে। অ্যাম্বাসি ডকুমেন্ট জমা নেওয়ার পাশাপাশি ইন্টারভিউ এবং বায়োম্যাট্রিক নিবে।
ভিসার সিদ্ধান্ত আসতে কমপক্ষে চার থেকে ছয় সপ্তাহ সময় লাগে; এজন্য ভালো হয় যদি অ্যাম্বাসির যাবতীয় আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করার পর দিল্লি থেকে পাসপোর্ট উইথড্রল করে আপনি দেশে চলে আসেন এবং পরবর্তীতে আবার যখন ভিসার সিদ্ধান্ত আসার পর আপনি আবার দিল্লিতে গেলেন অ্যাম্বাসির উদ্দেশ্যে।
স্লোভেনিয়াতে বাইরের দেশের শিক্ষার্থীদের জন্য স্কলারশিপের সুযোগ সীমাবদ্ধ। তবে বিশ্ববিদ্যালয় ভেদে অ্যাকাডেমিক রেজাল্টের ভিত্তিতে অনেক সময় ইউনিভার্সিটির সাথে যোগাযোগ করে হয় তো বা কিছু স্কলারশিপ বা স্টাইপেন্ডের ব্যবস্থা করা যায়। এজন্য সরাসরি সংশ্লিষ্ট ইউনিভার্সিটির সাথে যোগাযোগ করতে হবে। সম্প্রতি দিল্লিতে অবস্থিত স্লোভেনিয় দূতাবাস স্টুডেন্ট ভিসার অ্যাপ্লিকেশনের ক্ষেত্রে বিশেষ করে যারা ব্যাচেলর প্রোগ্রামর জন্য আবেদন করবেন তাদের ক্ষেত্রে English Proficiency Test বিশেষ করে IELTS (Minimum Level CEFR B2) বাধ্যতামূলক করে দিয়েছে।
(রেফারেন্স:-http://www.newdelhi.embassy.si/index.php?id=919&L=1)
লং টার্ম রেসিডেন্ট পারমিট অ্যাপ্লিকেশনের ক্ষেত্রে সাধারণত কোনও ধরনের স্টিকার ভিসার পরিবর্তে সরাসরি টেম্পোরারি রেসিডেন্স পারমিট প্রদান করা হয়।
এবার আসা যাক স্লোভেনিয়াতে অভিবাসন বিষয়ে। আমাদের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলো থেকে যারা বিদেশের মাটিতে পাড়ি জমান তাদের সকলের চিন্তা থাকে কীভাবে ইউরোপ, নর্থ আমেরিকা কিংবা ওশেনিয়ার কোনও একটি উন্নত রাষ্ট্রে স্থায়ী হওয়া যায়। স্লোভেনিয়া এ ক্ষেত্রে আমাদের অনেকের কাছে একটি পছন্দের ডেসটিনেশন হতে পারে এবং স্লোভেনিয়ার ক্ষেত্রে আরও একটি বড় প্লাস পয়েন্ট হচ্ছে এখনও এখানে খুব বেশি বাইরের মানুষ নেই। স্লোভেনিয়ার ইমিগ্রেশন পলিসি দীর্ঘ মেয়াদে যারা দেশটিতে বসবাস করতে চান তাদের জন্য এখনও মোটামুটি আশানুরূপ বলা চলে। দেশটির সরকারি ওয়েবসাইটে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী পার্মানেন্ট রেসিডেন্স প্রাপ্তির শর্ত হিসেবে কারও যদি একটানা পাঁচ বছর বৈধভাবে বসবাস করার এবং সেই সাথে যদি এ পাঁচ বছর ফুলটাইম কাজ করার অভিজ্ঞতা থাকে তাহলে তিনি স্লোভেনিয়ার পার্মানেন্ট রেসিডেন্স প্রাপ্তির জন্য আবেদন করতে পারবেন। আর যদি আপনি শিক্ষার্থী হন, তাহলে একটানা দশ বছর বৈধভাবে স্লোভেনিয়াতে বসবাস করতে হবে। অর্থাৎ শিক্ষার্থী অবস্থায় পার্মানেন্ট রেসিডেন্স প্রাপ্তির ক্ষেত্রে দুই বছরকে এক বছর হিসেবে বিবেচনা হয়। উদাহরণস্বরূপ- কেউ যদি তিন বছরের ব্যাচেলর কোর্স সম্পন্ন করে স্লোভেনিয়া থেকে তাহলে এ তিন বছরকে অর্ধেক অর্থাৎ দেড় বছর এবং সেই সাথে আরও সাড়ে তিন বছর ফুলটাইম কাজ করার অভিজ্ঞটা দেখাতে পারলেই তিনি স্লোভেনিয়ার পার্মানেন্ট রেসিডেন্স পাওয়ার জন্য আবেদন করতে পারবেন। পার্মানেন্ট রেসিডেন্স প্রাপ্তির ক্ষেত্রে এখন পর্যন্ত স্থানীয় ভাষা জানার কোনও বাধ্যবাধকতা নেই। প্রত্যক বছর শেষে টেম্পোরারি রেসিডেন্স পারমিট বর্ধিত করার ক্ষেত্রেও এখন পর্যন্ত সে রকম ঝামেলা নেই এখন পর্যন্ত বিশেষ করে যারা স্টুডেন্ট তাদের জন্য।
ইউনিভার্সিটির স্টুডেন্ট অফিস থেকে শুধু একটি সার্টিফাইড লেটার যেটা আপনার স্টুডেন্ট স্ট্যাটাসকে ইঙ্গিত করবে সে ধরনের একটি লেটার স্থানীয় ইমিগ্রেশন অফিস স্লোভেনিয়ার ভাষায় বলা হয় উপরাভনা এনোতা, উপরাভনা এনোতাতে গিয়ে জমা দিলেই তারা টিআরপি এক্সটেনশনের ব্যবস্থা করে দেয়।
স্লোভেনিয়াতে আসার পূর্বে আমি প্রায় দেড় বছরের মতো হাঙ্গেরিতে ছিলাম এবং হাঙ্গেরির পেচ শহরে অবস্থিত ইউনিভার্সিটি অব পেচে আমি লেখাপড়া করেছি। একই বিষয়ে, ব্যাচেলর অব সায়েন্স ইন ফিজিক্স। ইউনিভার্সিটি অব পেচ থেকে আমি স্লোভেনিয়ার ইউনিভার্সিটি অব নোভা গোরিছাতে ক্রেডিট ট্রান্সফার করেছি। আমাকে দিল্লিতে যেতে হয়নি নতুন করে আবার স্লোভেনিয়াতে ভিসার জন্য আবেদন করতে। স্লোভেনিয়াতে এসেই আমি সরাসরি স্থানীয় ইমিগ্রেশন অফিসে গিয়ে টেম্পোরারি রেসিডেন্স পারমিটের জন্য আবেদন করেছি। আমাকে প্রথম বার টেম্পোরারি রেসিডেন্স পারমিটের জন্য আবেদন করার সময় পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট এবং জন্ম নিবন্ধন সার্রটিফিকেটের কপির প্রয়োজন হয়েছিলো। পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট এবং জন্ম নিবন্ধন সার্টিফিকেটের কপি অবশ্যই বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে সত্যায়িত করার পর অস্ট্রিয়ার রাজধানী ভিয়েনাতে অবস্থিত বাংলাদেশের অ্যাম্বাসি থেকে প্রি-লিগালাইজ বা অ্যাটাস্টেশন করে সর্বশেষ এদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে লিগালাইজ করে স্থানীয় ইমিগ্রেশন অফিসে (স্লোভেনিয়ার স্থানীয় ভাষায় উপরাভনা এনোতা) জমা দিতে হয়েছিলো।
স্লোভেনিয়াতে আসার পরপরই কিংবা এখানে আসার পর প্রথমবার টেম্পোরারি রেসিডেন্স পারমিট ইস্যু হওয়ার পর পাওয়ার পর সেটি বাড়ির মালিক কিংবা হোস্টেলের কর্তৃপক্ষের কাছে জমা দিতে হয় এবং স্থানীয় পুলিশের থেকে অথবা স্থানীয় ইমিগ্রেশন অফিসের থেকে একটি সার্টিফিকেট নিতে হয় যে এ ঠিকানায় আমি বৈধভাবে বসবাস করছি। সাধারণত হোস্টেল কর্তৃপক্ষ কিংবা আপনার বাড়ির মালিক স্থানীয় পুলিশ প্রশাসনের সাথে কিংবা স্থানীয় মিউনিসিপ্যালিটি অফিস বা অবচিনার সাথে যোগাযোগ করে এ রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে দেবে। পার্মানেন্ট রেসিডেন্স পাওয়ার জন্য স্লোভেনিয়ার স্থানীয় ভাষা, সংস্কৃতি এবং ইতিহাসের ওপর দক্ষতা প্রয়োজন না হলেও যদি কেউ এখানে সিটিজেনশিপের জন্য আবেদন করতে আগ্রহী হন তাহলে তাকে স্লোভেনিয়ার স্থানীয় ভাষা, সংস্কৃতি এবং ইতিহাসের ওপর দক্ষতা অর্জন করতে হবে। পার্মানেন্ট রেসিডেন্স পাওয়ার পর পাঁচ বছরের মধ্যে নির্দিষ্ট কিছু শর্তপূরণ সাপেক্ষে স্লোভেনিয়ার সিটিজেনশিপের জন্য আবেদন করা যায়। একটানা দশ বছর বৈধভাবে স্লোভেনিয়াতে বসবাস করার পর সিটিজেনশিপের জন্য আবেদন করা যায়।
পশ্চিম ইউরোপের দেশ জার্মানি, ফ্রান্স, নেদারল্যান্ডস এমনকি পার্শ্ববর্তী রাষ্ট্র অস্ট্রিয়ার সাথেও তুলনা করলে ঘণ্টা হিসেবে স্লোভেনিয়াতে মজুরি খুব বেশি একটা উচ্চ নয়। এমনকি অর্থনৈতিকভাবে এ সকল দেশ থেকেও স্লোভেনিয়া অনেক দুর্বল। দেশটির জীবনযাত্রার ব্যয়ও খুব বেশি একটা উচ্চ এমনটা বলা যাবে না। সাধারণ দুইশো বিশ ইউরো হলে আমার এক মাসে ভালো মতো চলে যায়। তবে গড়পড়তা হিসেবে একজন স্টুডেন্টের এক মাসে থাকা এবং খাওয়া ও অন্যান্য আনুসাঙ্গিক খরচ মিলিয়ে খরচ আড়াইশো থেকে তিনশো ইউরো পর্যন্ত প্রয়োজন হয়। যারা রাজধানী শহরে বসবাস করেন তাদের ক্ষেত্রে থাকা-খাওয়া মিলিয়ে এক মাসে সাড়ে চারশো ইউরোর মতো খরচের প্রয়োজন হতে পারে। এখনও দেশটির সাধারণ মানুষের আয়ের সাথে জীবনযাত্রার ব্যয় অনেকখানি সামঞ্জস্যপূর্ণ। তবে এক সময় সমাজতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থার প্রচলন ছিলও এমন দেশগুলোতো বটেই এমনকি মাল্টা, গ্রীস কিংবা পর্তুগালের মতো ইউরোপের দেশগুলো থেকেও অর্থনৈতিক ভাবে স্লোভেনিয়া শক্তিশালী। এমনটি বলছে ইন্টারন্যাশনাল মানিটারি ফান্ড বা আইএমএফ, ওয়ার্ল্ড ব্যাংকসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো।
সম্প্রতি দেশটির পার্লামেন্টে মাসিক ন্যূনতম মজুরি সাড়ে নয়শো ইউরো করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। মাসিক ন্যূনতম মজুরি হিসেবে বর্তমানে স্লোভেনিয়া স্পেন থেকে এর দিক থেকে সামান্য পিছিয়ে। পার্টটাইম চাকুরি করে ভালোমতো থাকা এবং খাওয়ার খরচ আপনি তুলতে পারলেও আপনি টিউশন ফি তুলতে পারবেন না পার্টটাইম কাজ করে। তবে অস্ট্রেলিয়া, গ্রেট ব্রিটেন, নিউ জিল্যান্ড এ সকল দেশে যে রকম নিয়ম আছে যে স্টুডেন্ট অবস্থায় একজন ব্যক্তি এক সপ্তাহে বৈধভাবে বিশ ঘণ্টার বেশি কাজ করতে পারবেন না, স্লোভেনিয়ার আইনে এ রকম কিছু সুনির্দিষ্ট করে এখনও তেমন কিছু উল্লেখ করা হয়নি। তাই এখানে চাইলে একজন স্টুডেন্ট ফুলটাইম কাজ করতে পারেন।
ভিসা এবং অভিবাসন সংক্রান্ত বিভিন্ন নিয়মের মাঝে-মধ্যে পরিবর্তন আসে, তাই সকলেরই উচিৎ নিয়মিত অ্যাম্বাসি অথবা ইমিগ্রেশনের সাথে সম্পর্কিত ওয়েব-সাইটগুলো মাঝে-মধ্যে অনুসন্ধান করা।
লেখক: শিক্ষার্থী, ব্যাচেলর অব সায়েন্স ইন ফিজিক্স অ্যান্ড অ্যাস্ট্রোফিজিক্স, ইউনিভার্সিটি অব নোভা গোরিছা, স্লোভেনিয়া!
[email protected]