রাবি: রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ সুখরঞ্জন সমাদ্দার ছাত্র-শিক্ষক সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের (টিএসসিসি) উপ-পরিচালক রাকিবুল হাসান রবিনের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ পাওয়া গেছে।
ভুক্তভোগী ছাত্রী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক এম আব্দুস সোবহান বরাবর লিখিত অভিযোগ জমা দিয়েছেন।
মঙ্গলবার (২৫ আগস্ট) সকালে উপাচার্যের দফতরের কর্মকর্তা মীর শাহজাহান আলী অভিযোগপত্র গ্রহণ করেছেন বলে নিশ্চিত করেন।
তিনি বাংলানিউকে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিসির উপ-পরিচালক রাকিবুল হাসানের বিরুদ্ধে এক তরুণী ও তার বাবা-মা লিখিত অভিযোগ করেছেন। উপাচার্যের সচিব হিসেবে আমি অভিযোগপত্র গ্রহণ করেছি। বিষয়টি উপাচার্যকে জানানো হয়েছে।
অভিযোগপত্রে ভুক্তভোগী ছাত্রী দাবি করেন, ১২ বছর বয়সে প্রথম তিনি রাকিবুল হাসান রবিনের নিপীড়নের স্বীকার হন। এরপর ভয় দেখিয়ে একাধিকবার তাকে ধর্ষণ করা হয়। কিন্তু সে সময় ন্যায়-অন্যায় বোঝার জ্ঞান ও সাহস না থাকায় তিনি কাউকে বিষয়টি বলতে পারেননি। সামাজিকভাবে সমর্থন না পাওয়ার শঙ্কায় চুপ থাকলেও তিনি মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েন। উচ্চ শিক্ষার জন্য বিদেশ গিয়েও স্বাভাবিক হতে তার অনেক সময় লেগেছে বলেও তিনি অভিযোগ করেন।
লিখিত অভিযোগে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী উল্লেখ করেন, করোনা পরিস্থিতিতে দেশে এসে তিনি জানতে পারেন আরও অনেকেই রবিনের দ্বারা যৌন হয়রানির শিকার হয়েছেন। অনেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তাদের অভিজ্ঞতা শেয়ার করেছেন। মেয়েদের এসব অভিযোগ শুনে তার মানসিক অবস্থার অবনতি ঘটে এবং ট্রমা ফিরে আসে। পরিস্থিতি সামলে ওঠতে না পেরে তিনি মুখ খোলার সাহস সঞ্চয় করেছেন। তার মতো আর কাউকে যেন ট্রমা বয়ে বেড়াতে না হয় সেজন্য রবিনকে অপরাধী হিসেবে চিহ্নিত করে তার বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান ওই শিক্ষার্থী।
অভিযোগপত্রে আরও উল্লেখ করেন, রাকিবুল হাসান রবিনের বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময় বিচ্ছিন্নভাবে আরও অনেক যৌন হয়রানির অভিযোগ রয়েছে। ছোট মেয়েদের উত্ত্যক্ত করার অভিযোগে ইলামিত্র শিল্পী সংঘ থেকে দু বছর আগে তাকে বের করে দেওয়া হয়। কিন্তু অনেকে এসব অভিযোগ করতে চায় না।
জানতে চাইলে ভুক্তভোগী ছাত্রী বাংলানিউজকে বলেন, রাজশাহী শহরে একটি সংগঠনে রাকিবুল হাসানের কাছে সঙ্গীত চর্চা করতাম। তখন ছোট ছিলাম। তাই নিপীড়নের শিকার হয়েও অভিযোগ করতে ভয় পেয়েছি, প্রতিবাদ জানাতে পারিনি। মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছি, যে মানসিক যন্ত্রণা এখনো আমাকে বয়ে বেড়াতে হচ্ছে। এখনো তার বিরুদ্ধে অনেকের অভিযোগ আছে কিন্তু মুখ ফুটে কেউ বলে না। আমি চাই আমার মতো যেন অন্য কেউ ভুক্তভোগী না হয়। সেজন্য অন্য মেয়েদের হয়ে তার বিচার চাইছি।
এ বিষয়ে ভুক্তভোগীর মা (রাবি শিক্ষক) বলেন, রবিন বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত, আমিও এখানকার শিক্ষক। তাই আমরা চাই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রচলিত নিয়মে তার বিচার হোক, সেজন্য উপাচার্য বরাবর অভিযোগ দিয়েছি। আশাকরি সঠিক বিচার হবে।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে অভিযুক্ত রাকিবুল হাসান রবিনের মোবাইল ফোন নম্বরে কল করলে তিনি ফোন রিসিভ করে কোনো কথা বলেননি। পরে একাধিকবার ফোন করলেও তিনি আর কল রিসিভ করেননি। সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে এসএমএস পাঠালেও তিনি কোনো উত্তর দেননি।
টিএসসিসির পরিচালক অধ্যাপক হাসিবুল আলম প্রধান বলেন, অভিযোগের বিষয়ে জেনেছি। বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ পর্যায়ে অভিযোগ করলে সেটি সেখানেই বিচার হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৪২৩ ঘণ্টা, আগস্ট ২৫, ২০২০
আরএ