ঢাকা: মুজিববর্ষ উপলক্ষে সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের পৃষ্ঠপোষকতায় ও জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্র আয়োজিত ঢাকা মহানগরীতে ‘পড়ি বঙ্গবন্ধুর বই, সোনার মানুষ হই’ শীর্ষক কার্যক্রমে অংশ নেওয়া সেরা শিক্ষার্থীদের পুরস্কার দেওয়া হয়েছে।
রোববার (২০ ডিসেম্বর) বেলা ১১টায় রাজধানীর জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্রের মিলনায়তনে এ অনুষ্ঠান হয়।
পুরস্কার হিসেবে প্রত্যেককে ১৩ হাজার টাকা মূল্যমানের বই, দুই হাজার টাকার চেক ও মুজিবর্ষের লোগো সংবলিত সনদপত্র দেওয়া হয়। এছাড়া, অংশগ্রহণকারী সব শিক্ষার্থী ও পাঠককে জাতির পিতার লেখা তিনটি বই, দুই হাজার টাকার চেক ও একটি সনদপত্র দেওয়া হয়েছে। এ আয়োজনে সহযোগিতা করেছে মহানগরীর স্বনামে খ্যাত ১০টি গ্রন্থাগার।
পুরস্কার দেওয়া শেষে প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রতিমন্ত্রী কেএম খালিদ বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর বইগুলো আমরা সারা বাংলাদেশে ছড়িয়ে দিতে চাই। এটি ছড়িয়ে দিতে পারলে নতুন প্রজন্মের মধ্যে সংস্কৃতির প্রতি অনুরাগ আরও বাড়বে এবং তা সোনার বাংলাদেশ গড়ার কাজে বিশেষ ভূমিকা রাখবে। ’
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে বেসরকারি ৮শ’ লাইব্রেরিতে লাইব্রেরিয়ান চাওয়া হয়েছে, সেটি নিয়ে আমরা চেষ্টা করবো এবং অনুদানের ব্যবস্থা করবো। ’
সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. বদরুল আরেফীনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মহান বিজয় দিবসের এ আয়োজনে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিশিষ্ট সাহিত্যিক ও গবেষক অধ্যাপক শামসুজ্জামান খান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক এবং জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি সাইফুল আলম। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্রের পরিচালক মিনার মনসুর। ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্রের উপ-পরিচালক সুহিতা সুলতানা।
জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি সাইফুল আলম বলেন, ‘বিজয়ের মাসে এমন একটি আয়োজন সত্যি অনন্য। এটি ছোট আয়োজন হলেও আমি মনে করি, এ আয়োজন বাংলা ভাষাভাষি ২৫ কোটি মানুষের কাছে বঙ্গবন্ধুকে আবারও নতুন করে পৌঁছে দিয়েছে। বঙ্গবন্ধুর তিনটি বই পাঠ আমাদের দেশপ্রেম, মানুষকে বিশ্বাস করা এবং মানুষকে সঙ্গে নিয়ে পথ চলার শিক্ষা দেয়। এ তিনটি বই আমাদের পাঠ্যক্রমে সংযুক্ত করা উচিত বলে আমি মনে করি। আমাদের সব উন্নয়নের সঙ্গে সাংস্কৃতিক উন্নয়ন অনেক বেশি জরুরি ও অপরিহার্য। তাই জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্র ও এর কার্যক্রমের পরিসর এখন আরও বড় পরিসরে নেওয়ার সময় এসেছে। ’
অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বলেন, ‘শিক্ষার সঙ্গে সংস্কৃতির সংযোগ ঘটাতে হবে। সংস্কৃতি না থাকলে শিক্ষা কখনো সম্পন্ন হবে না। আর শিক্ষা না থাকলে সংস্কৃতি কখনো মানসম্পন্ন হবে না। শিক্ষা ও সংস্কৃতি একে অপরের সঙ্গে ওতোপ্রতোভাবে জড়িত। বঙ্গবন্ধুর বইগুলো যে শিক্ষার্থীরা পড়ছেন ও শিখছেন, এটাও সংস্কৃতির মাধ্যমেই। আমাদের সকলের সাংস্কৃতিক জ্ঞান আরও বৃদ্ধি করতে হবে। বঙ্গবন্ধুর তিনটি বই আত্মত্যাগের মহিমা। এই বই তিনটি যে পড়বে, তার দেশপ্রেম, মানোবতা বোধ, সংস্কৃতিবোধ আরও অনেক উঁচুতে উঠবে বলে আমি মনে করি। ’
অধ্যাপক শামসুজ্জামান খান বলেন, ‘আমি শিক্ষার্থীদের লেখাগুলো পড়ে দেখেছি। আমাদের তরুণ সমাজ বস্তাপচা হয়ে গেছে তা নয়, অনেকে আছে যারা চিন্তাভাবনা করে, সৃজনশীলতার সঙ্গে থাকে, সমাজকে নিয়ে ভাবে। বর্তমান সময়ে যান্ত্রিক অস্ত্রের তুলনায় সাংস্কৃতিক অস্ত্র অনেক বেশি কার্যকর। এ অস্ত্র দিয়েই স্বাধীনতার বিপক্ষের শক্তির পক্ষে জয়লাভ করা সম্ভব। আর সেই কাজটিই করে যাচ্ছে জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্র। এ উদ্যোগকে সাধুবাদ জানাই এবং আরও এগিয়ে যাওয়ার আশা রাখছি। ’
অনুষ্ঠানে পুরস্কারপ্রাপ্তদের পক্ষ থেকে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী জয়তি বিশ্বাস শুচি, হামদর্দ পাবলিক কলেজের শিক্ষার্থী সামিয়া পারভীন এবং ঢাকা রেসিডেন্সিয়াল কলেজের শিক্ষার্থী সাদমান সামি। অংশগ্রহণকারী পাঠাগারগুলোর পক্ষ থেকে বক্তব্য রাখেন দনিয়া পাঠাগারের সভাপতি মোহাম্মদ শাহনেওয়াজ ও সীমান্ত গ্রন্থাগারের প্রতিনিধি মানজার চৌধুরী সুইট।
এসময় তারা বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর লেখা পড়ে আমরা ভাবতে শিখেছি কীভাবে দেশ নিয়ে ভাবতে হয়। তার লেখা পড়ে দেশপ্রেম জাগবে না, হৃদয় অনুরণিত হবে না, এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া প্রায় অসম্ভব। এ কার্যক্রম আরও বিস্তৃত আকারে ছড়িয়ে দিতে পারলে নতুন প্রজন্ম বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে আরও ভালোভাবে জানতে পারবেন। ’
সভাপতির বক্তব্যে সচিব মো. বদরুল আরেফীন বলেন, ‘কাগুজে বইয়ের সঙ্গে সঙ্গে আমাদের ডিজিটাল লাইব্রেরির প্রতিও সকলের আগ্রহ বৃদ্ধি করতে হবে। প্রধানমন্ত্রীও এ বিষয়ে আগ্রহী। এতে করে ভার্চ্যুয়াল মাধ্যমে ফেসবুক, টিকটকে সময় নষ্ট করার তুলনায় বই পড়ে সময়ের সদ্ব্যবহার করা হবে। বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা, বঙ্গবন্ধু ও আমাদের সংস্কৃতি চিরন্তন। বঙ্গবন্ধুর এ বইগুলোর মাধ্যমে আমাদের সংস্কৃতি আরও চিরন্তন হবে, এটাই প্রত্যাশা। ’
বাংলাদেশ সময়: ১৫৪৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২০, ২০২০
এইচএমএস/এফএম