ফেনী: শীতের রেশ কাটিয়ে তখন ভর দুপুর। ফেনী শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে চলছে জেলা প্রশাসনের একটি অনুষ্ঠান।
কাছে গিয়ে কথা হয় তাদের কয়েকজনের সঙ্গে। এর মধ্যে অধিকাংশই ফেনী সরকারি কলেজের বিভিন্ন বিভাগের অনার্স শেষ বর্ষ ও মাস্টার্সের শিক্ষার্থী। তারা জানালেন, গ্রন্থাগারে বসে তারা চাকরির জন্য প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। কলেজ কিংবা শহরে এলেই ফ্রি সময়টুকু তারা এখানেই বই পড়ে কাটান।
ফেনী সরকারি কলেজের হিসাব বিজ্ঞান বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী বিথী দাস বাংলানিউজকে বলেন, এখানে বেশ নিরিবিলি পরিবেশ। তাই কলেজে এলেই সময় নষ্ট না করে চাকরির পরীক্ষার জন্য পড়ছি।
গ্রন্থাগারটি শহর থেকে বেশ খানিকটা দূরে আরও একটি কাছে হলে যাতায়াতে সহজ হতো বলে যোগ করেন ওই শিক্ষার্থী।
রাকিবুল ইসলাম নামে ব্যবস্থাপনা বিভাগের আরেক শিক্ষার্থী বলেন, গ্রন্থাগারটিতে রেফারেন্স বুকের স্বল্পতা রয়েছে। এছাড়া কিছু একাডেমিক বই রাখা গেলে শিক্ষার্থীরা উপকৃত হত। এছাড়া সমসাময়িক সাধারণ জ্ঞানের বইয়েরও স্বল্পতা রয়েছে।
তনয় নামের ফেনী সরকারি কলেজ রসায়ন বিভাগের আরেক শিক্ষার্থী বলেন, মূল শহরের দূরে হয়েছে, বেশ ভালো হয়েছে। ভালো পরিবেশে বসে বিভিন্ন বিষয়ে পড়া যায়। খোকন শীল নামের আরেকজনও এমনটাই বললেন। গ্রন্থাগারের বুক শটার মো. জাফর বলেন, প্রতিদিন ৪০/৪৫ জন পাঠক পড়তে আসেন। তাদের একটা বড় অংশ আসে চাকরির জন্য প্রস্তুতি নিতে। এছাড়া কিছু শিশু-কিশোর ও অভিভাবকও রয়েছেন। যারা নিয়মিত পড়াশোনা করেন।
বুক শটার মো. আবু জাফর বলেন, করোনার শুরু সময়টায় পাঠক যেমন ছিল এখন আর তেমন নেই। দৈনিক ১০/১৫ জনের মত কমেছে।
গ্রন্থাগারিক কামরুল হাসান বলেন, এ গণগ্রন্থাগারে মোট ৩৪ হাজার ৪৮৮টি বই রয়েছে। বছরে পাঠক সংখ্যা দাঁড়ায় ১৪ হাজার ৬শ জনের ওপরে।
এখানে মুক্তিযুদ্ধ, বাংলাদেশ, আন্তর্জাতিক, শিশু, রাজনীতি, সমাজনীতি, সমাজ বিজ্ঞান, রাষ্ট্রবিজ্ঞানসহ বিভিন্ন বিষয়ের বই রয়েছে। এছাড়া রয়েছে আলাদা আলাদা ব্লক। মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ে রয়েছে দেড় হাজারের বেশি বই।
গ্রন্থাগারে পড়তে আসা পাঠক, ফেনী প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি মোহাম্মদ আবু তাহের বাংলানিউজকে বলেন, জেলা সরকারি গ্রন্থাগারটি শহর থেকে অনেক দূরে হওয়ায় সুন্দর পরিবেশ থাকা সত্ত্বেও এখানে পাঠক কম হয়। এখানে একজন পাঠক আসা-যাওযায় ৪০ টাকার মত ব্যয় হয়। এ পরিমাণ টাকা দিয়ে পাঁচ/ছয়টা পত্রিকা কেনা যায়। এতে পরিবারের সবারই খোরাক পূরণ হয়।
গ্রন্থাগারটির গ্রন্থাগারিক কামরুল হাসান বলেন, ২০১০ সালে গ্রন্থাগারটি শহরের ট্রাংক রোড় রাজাঝির দিঘীর পাড় থেকে জেলা শিল্পকলা একাডেমির পাশে স্থানান্তরিত করা হয়। তখন এ গ্রন্থাগারে ১৫ হাজার ৫শ বই ছিল। এখন এই গ্রন্থাগারে বইয়ের সংখ্যা ৩৪ হাজার ৩৮৮টি।
অফিস সহকারী আশিকুর রহমান বলেন, রাজাঝির দিঘীর পাড়ে থাকাকালীন সময়ে প্রতিদিন দেড়শ থেকে দুইশ লোক নিয়মিত লাইব্রেরিতে আসত, বই পড়তো। স্থানান্তরিত করার পর এখন লোক সমাগম কম।
বাংলাদেশ সময়: ১১৪৬ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০৩, ২০২২
এসএইচডি/এএটি