জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, (জবি): গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষার নানান অব্যবস্থাপনা এবং প্রথমবর্ষে ভর্তির ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীর প্রবল সংকটসহ বেশ কিছু বিষয় আমলে নিয়ে দেশের অন্যতম সেরা বিদ্যাপীঠ জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষ থেকে গুচ্ছ ভর্তি পদ্ধতিতে না যাওয়ার কথা ভাবছেন সংশ্লিষ্টরা।
গুচ্ছ পদ্ধতি থেকে বের হয়ে এলে আগের মত নিজস্ব ভর্তি ব্যবস্থাপনায় ফিরবে বিশ্ববিদ্যালয়টি।
গত ২ মার্চ বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কাউন্সিলে এর বিপক্ষে মত দিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা।
একাডেমিক কাউন্সিলের সভায় এ বিষয়ে আলোচনা হলেও গুচ্ছের বিষয়ে সামনের একাডেমিক কাউন্সিলে পূর্ণাঙ্গ সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে বাংলানিউজকে জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. ইমদাদুল হক।
সভায় অংশ নেওয়া একাধিক শিক্ষকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শুরুতে শিক্ষার্থীদের আর্থিক সুবিধা, যাতায়াত সুবিধা, থাকা-খাওয়ার সুবিধাসহ সার্বিক ভোগান্তি হ্রাসে গুচ্ছ পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষা নেওয়ার কথা জানায় আয়োজক কমিটি। তবে, বিভাগ পরিবর্তন ইউনিট শুরুতেই বাদ দেওয়া, পরীক্ষার ফি আচমকাই বাড়িয়ে ফেলা, কর্মদিবসে পরীক্ষার তারিখ ফেলায় তীব্র যানজট, নিজের পছন্দের কেন্দ্রে পরীক্ষা দিতে না পারা এবং সর্বশেষ মানবিক ও বাণিজ্য অনুষদের পরীক্ষার ফলাফলে তীব্র অসংগতিতে গুচ্ছ ভোগান্তির কারণ হয় হাজারো ভর্তিচ্ছুর। এরই পরিপ্রেক্ষিতে গুচ্ছের সার্বিক অব্যবস্থাপনার বিষয়টি আমলে নিয়ে গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষায় না যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
অপরদিকে গুচ্ছ ভর্তি কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ফলাফল প্রকাশিত হওয়ার পর প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী ভর্তির জন্য আলাদা আলাদা বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য গুচ্ছ ভর্তিপরীক্ষায় ফলাফলপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের আবেদন শুরু হয় গতবছরের ১৫ নভেম্বর থেকে। আবেদন চলে ২৫ নভেম্বর পর্যন্ত।
এরপর গত ৭ ডিসেম্বর জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের সভাকক্ষে কেন্দ্রীয় ভর্তি কমিটির সপ্তম সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বিজ্ঞান (এ) ইউনিটে ২৩ হাজার ৯৫৫ জন, মানবিক (বি) ইউনিটে ৯ হাজার ৯৪০ জন এবং বাণিজ্য (সি) ইউনিটে ৭ হাজার ৭৬২ জন ভর্তিচ্ছু আবেদনকারী শিক্ষার্থীদের মেধাতালিকা প্রকাশ করা হয়।
পরদিন ৮ ডিসেম্বর জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের নির্ধারিত আসনে ভর্তির জন্য মনোনীত শিক্ষার্থীদের প্রথম মেধাতালিকা প্রকাশ করা হয়। তবে সর্বশেষ ধাপ হিসেবে শিক্ষার্থী ভর্তি কার্যক্রমেও গুচ্ছ পদ্ধতির নানান অব্যবস্থাপনা ও অসংগতির প্রত্যক্ষ প্রভাব লক্ষ্য করা গেছে। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম মেধাতালিকা থেকে কাঙ্ক্ষিত সংখ্যক শিক্ষার্থী ভর্তি না হওয়ায় পরবর্তীতে পালাক্রমে মোট ৭টি মেধাতালিকা প্রকাশ করা হয়। এতেও নির্ধারিত আসনের বিপরীতে শিক্ষার্থীদের তেমন কোনো ধরনের সাড়া পাওয়া যায়নি।
পরবর্তীতে ফাঁকা আসন পূরণে ১৪ থেকে ১৬ ফেব্রুয়ারি গণ সাক্ষাতকার আহ্বান করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। প্রথম থেকে সপ্তম মেধাক্রমে বিষয় বরাদ্দ পেয়েও যেসব শিক্ষার্থী ভর্তি হননি তাদেরও সাক্ষাতকারে অংশ নেওয়ার সুযোগ দেওয়া হয়।
গণসাক্ষাতকারেও শিক্ষার্থীদের তেমন উপস্থিতি না মেলায় পরে আরও একটি মেধাতালিকা প্রকাশ করা হয়। পাশাপাশি সিদ্ধান্ত হয় ৮ মার্চ থেকে প্রথমবর্ষের শিক্ষার্থীদের ক্লাস শুরু করার। ক্লাস শুরু করার আগেই ফাঁকা থাকা আসন পূরণে গত মঙ্গলবার (১ মার্চ) আবারও গণ সাক্ষাতকার আহ্বান করে কর্তৃপক্ষ। বিজ্ঞান (এ) ইউনিটে ৭৬৫২ থেকে ১২০০০ মেধাক্রম পর্যন্ত এবং মানবিক (বি) ইউনিটে ২৫১৭ থেকে ৩৫০০ মেধাক্রম পর্যন্ত সাক্ষাতকার আহ্বান করেছে কর্তৃপক্ষ।
বৃহস্পতিবার (৩ মার্চ) সকাল ৯টা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় অডিটোরিয়ামে অনুষ্ঠিত হবে সাক্ষাতকার।
এদিকে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষে স্নাতক (সম্মান) ও বিবিএতে ভর্তির জন্য ১০টি মেধাতালিকা দিয়েও কাঙ্ক্ষিত শিক্ষার্থী পাওয়া না যাওয়ায় প্রথম বর্ষের সার্বিক ভর্তি কার্যক্রম সম্পন্ন এবং আনুষ্ঠানিকভাবে শিক্ষাবর্ষ শুরু করার ক্ষেত্রে বিলম্ব ঘটছে। বিশ্ববিদ্যালয়টিতে এখনও ফাঁকা রয়েছে দেড়শোরও বেশি আসন।
বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বার বার মেধাতালিকা ও গণসাক্ষাতকার আহ্বান করেও আসন পূরণ না হওয়ার বিষয়টি নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন মহলে চলছে নানান আলোচনা-সমালোচনা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক সিনিয়র শিক্ষক বাংলানিউজকে বলেন, গুচ্ছ পদ্ধতির অসংগতির ফলেই এবার শিক্ষার্থী সংকট প্রকট আকার ধারণ করেছে৷ বার বার গণ সাক্ষাতকার দেওয়ায় এখানে মেধার কোন মূল্যায়ন হচ্ছে না। যারা নাম্বার পেয়েছেন তারাই এই বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হচ্ছেন। নিজস্ব ভর্তি পদ্ধতিতে ফেরাই হবে একমাত্র সমাধান।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. ইমদাদুল হক বাংলানিউজকে বলেন, গুচ্ছে যাওয়ার ব্যাপারে সভায় অনেক শিক্ষক এর পক্ষে-বিপক্ষে মতামত দিয়েছেন। সামনের সভায় আমরা পূর্ণাঙ্গ সিদ্ধান্ত নেবো।
উল্লেখ্য, গত বছরের পহেলা নভেম্বর বাণিজ্য (সি) ইউনিটের পরীক্ষার মধ্য দিয়ে দেশে প্রথমবারের মত আয়োজিত ২০টি সাধারণ এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষা সম্পন্ন হয়েছে। এর পূর্বে ১৭ অক্টোবর বিজ্ঞান (এ) ইউনিটের পরীক্ষা এবং ২৪ অক্টোবর মানবিক (বি) ইউনিটের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। পরীক্ষা শেষে ২০ অক্টোবর বিজ্ঞান (এ) ইউনিটের ফলাফল, ২৬ অক্টোবর মানবিক (বি) ইউনিটের ফলাফল এবং ৩ নভেম্বর বাণিজ্য (সি) ইউনিটের ফলাফল প্রকাশ করা হয়।
বাংলাদেশ সময়: ০৯২২ ঘণ্টা, মার্চ ০৩, ২০২২
এএটি