ঢাকা, রবিবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিক্ষা

জবিতে বিজ্ঞপ্তি ছাড়া ৬ শূন্য পদে নিয়োগের অভিযোগ

মহিউদ্দিন রিফাত, ইউনিভার্সিটি করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭৩৭ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৯, ২০২২
জবিতে বিজ্ঞপ্তি ছাড়া ৬ শূন্য পদে নিয়োগের অভিযোগ

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি): জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে বিজ্ঞপ্তি ছাড়াই ৬টি শূন্য পদে অবৈধভাবে নিয়োগের অভিযোগ পাওয়া গেছে। নিয়োগপ্রাপ্তদের সবাই ২০তম গ্রেডের নিরাপত্তাপ্রহরী পদে আবেদন করেছিলেন এবং ভাইবা দিয়েছিলেন।

কিন্তু তাদের মধ্যে কেউ নিয়োগ পেয়েছেন ১৮তম গ্রেডে আবার কেউ পেয়েছেন ১৯তম গ্রেডে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলে ২০তম গ্রেডের সিকিউরিটি গার্ড ও মেম্বার ওব লোয়ার সাবঅর্ডিনেট সার্ভিস (এমএলএসএস) পদে নিয়োগের জন্য আবেদন করে মনির ও মাহিন নিয়োগ পেয়েছেন ১৮তম গ্রেডের সিনিয়র কুক পদে। একইভাবে সিকিউরিটি গার্ড জিহান ও জামাল ২০তম গ্রেডের এমএলএসএস পদে আবেদন করে নিয়োগ পান ১৯তম গ্রেডের সহকারী কুক পদে। এছাড়াও এমএলএসএস থেকে আব্দুল আলিম নিয়োগ পেয়েছেন বাস হেলপার পদে।

এসব নিয়োগ নিয়মবহির্ভূতভাবে রেজিস্ট্রার দপ্তর থেকে করা হয়েছে বলে জানা গেছে। তবে এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি রেজিস্ট্রারসহ সংশ্লিষ্ট কেউ। রেজিস্ট্রার দপ্তরে রেজিস্ট্রারের অনুমতি ছাড়া একটি কাগজও নড়ে না, সেখানে এমন কাজ রেজিস্ট্রারের অনুমতি ছাড়া কীভাবে হয়, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক শিক্ষক ও কর্মকর্তা।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রেজিস্ট্রার দপ্তরে একটি সিন্ডিকেট রয়েছে, যারা অর্থের বিনিময়ে এই ধরনের অবৈধ নিয়োগ বাণিজ্য, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পদোন্নতিসহ বিভিন্ন অনিয়মের কাজ করে থাকেন। তাদের কাছে রেজিস্ট্রার নিজেও একভাবে জিম্মি। এর ফলে বিভিন্ন সময়ে রেজিস্ট্রারের মাধ্যমে এসব অনিয়ম করিয়ে নেন তারা। বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন উপাচার্যের এক বছর হতে চললেও এসব সিন্ডিকেটের লাগাম টানতে পারেননি তিনি। এর ফলে অনিয়ম দুর্নীতির অভিযোগে উপাচার্য নিজেই একদিন ফেঁসে যাবে বলে মনে করছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক জ্যেষ্ঠ শিক্ষক।

এসব ছাড়াও রেজিস্ট্রার দপ্তরের বিরুদ্ধে রয়েছে আরও নানা অভিযোগ—নিয়মিত ফাইল আদান-প্রদান না করা, দিনের পর দিন শিক্ষকদের ফাইল আটকে থাকা, আমলাতান্ত্রিক জটিলতার নামে শিক্ষকদের হয়রানি, অনেক কর্মকর্তাদের নিয়মিত অফিস না করা। এসব বিষয়ে কর্তৃপক্ষ বার বার সতর্ক করলেও কর্মকর্তাদের টনক নড়ে না।

এদিকে একই ব্যক্তিকে গ্রেড পরিবর্তন করে নিয়োগ দেওয়ায় অতিরিক্ত বেতনের বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থ ও হিসাব দপ্তর থেকে ব্যাখ্যা চেয়ে উপাচার্যের কাছে নোট পাঠানো হয়। তখন একই ব্যক্তির একাধিক পদে নিয়োগ সামনে এলে ওই ৬ জন কর্মচারীর বেতন-ভাতা অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ করে দেয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২০২১ সালের ৪ মার্চ বিশ্ববিদ্যালয়ের ৮৪তম সিন্ডিকেট সভায় চুক্তিভিত্তিক ও দৈনিক হাজিরা ভিত্তিক কর্মচারীদের জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে একটি তালিকা করা হয়। তালিকা প্রকাশের ৪ দিন পর ৮ মার্চ নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। বিজ্ঞপ্তিতে ১৬তম গ্রেডের সহকারী মেকানিক পদে ১ জন, ১৮তম গ্রেডের ইলেক্ট্রিশিয়ান পদে ১ জন, ১৮তম গ্রেডের লিফট অপারেটর পদে ৪ জন, ১৯তম গ্রেডের মেকানিক হেল্পার পদে ১ জন ও ২০তম গ্রেডের অফিস সহকারী, নিরাপত্তা প্রহরী, পরিচ্ছন্নতা কর্মী ও সমমানের পদে ১৯ জন কর্মচারী চাওয়া হয়।

কিন্তু এসব নিয়োগের ক্ষেত্রে ৮৪তম সিন্ডিকেটে চাকরির বয়সের জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে নিয়োগ কার্যক্রম সম্পন্ন করার কথা থাকলেও সিরিয়াল নম্বর ব্যাহত করে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এ অনিয়মের কারণে বাদ পড়েছেন চাকরির বয়সে জ্যেষ্ঠ ও যোগ্য প্রার্থীরা। হেলপার হিসেবে নিয়োগ পাওয়া আব্দুল আলিমের চাকরি ছিল এমএলএসএস (পিয়ন) হিসেবে। তার সিরিয়াল নম্বর ২৬।

সুইপার হিসেবে নিয়োগ পাওয়া বিনা রানী দাসও এমএলএসএস হিসেবে কর্মরত ছিলেন। তার সিরিয়াল নম্বর ২৯। কুক পদে নিয়োগ পাওয়া কাজী মহিন উল্লাহর এমএলএসএস সিরিয়াল নম্বর ৩৬। কমনরুম গার্ল হিসেবে নিয়োগ পাওয়া রাবেয়া বেগমের এমএলএসএস ক্রম ৪৩। কুক হিসেবে নিয়োগ পাওয়া জামাল হোসেন ছিলেন সঙ্গীত বিভাগের এমএলএসএস কর্মচারী। তার ক্রম ৬১। নিরাপত্তা প্রহরী মোহাম্মদ জিহান নিরাপত্তা প্রহরী ক্রমে ৭। বাজারকারী হিসেবে নিয়োগ পাওয়া মো. ইছহাক শেখ নিরাপত্তা প্রহরী ক্রম ৮ ও সহকারী কুক হিসেবে নিয়োগ পাওয়া মো. মনির হোসেনের নিরাপত্তা প্রহরী ক্রমে ছিলেন ৯ নম্বর।

এ বিষয়ে বাংলানিউজের সঙ্গে কথা হয় গ্রেড পরিবর্তন হয়ে নিয়োগ পাওয়া কয়েকজন কর্মচারীর। তারা বলেন, আমাদের আবেদন করতে বলা হয়েছে, আমরা আবেদন করেছি। আমাদের পদে কেন পরিবর্তন ঘটলো, কেন বেতন বন্ধ হলো আমরা কিছুই জানি না। এখন আমাদের চাকরি চলে গেলে তো না খেয়ে মরবো!

কর্মকর্তা সমিতির সাধারণ সম্পাদক আব্দুল কাদের (কাজী মনির) বাংলানিউজকে বলেন, অতীতেও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়োগ নিয়ে নানারকম অনিয়ম দুর্নীতি হয়েছে, এখনও হচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয়কে কলঙ্কমুক্ত করতে এই অনিয়ম দুর্নীতিকারীদের শনাক্ত করে কঠোর শাস্তি দিতে হবে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. আবুল হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, বিজ্ঞপ্তি ছাড়া শূন্য পদে নিয়োগ দেওয়া যায় না। এটা কোনোভাবেই সম্ভব না। যদি এ ধরনের ঘটনা ঘটে, তা বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মান ক্ষুণ্ণ করবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশের সঙ্গে তা যায় না। এমন কিছু যদি হয়ে থাকে এর সুষ্ঠ তদন্ত হোক।

কর্মচারীদের ফাইল দেখাশোনা করেন ডেপুটি রেজিস্ট্রার মো. জিয়াদুর রহমান। বাংলানিউজকে তিনি বলেন, এ বিষয়ে আমার কোনো মন্তব্য নেই। রেজিস্ট্রার স্যার এ বিষয়ে কথা বলতে মানা করেছেন।

এ বিষয়ে কোনো প্রকার মন্তব্য করতে রাজি হননি বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার প্রকৌশলী মো. ওহিদুজ্জামান। বাংলানিউজকে তিনি বলেন, আমি এ বিষয়ে কোনো কথা বলবো না। উপাচার্য স্যারের কাছে একটি অবজারভেশন পাঠিয়েছি, তিনি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেবেন।

নিয়োগ সংক্রান্ত সব কাজ বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার দপ্তর থেকেই হয়েছে। কীভাবে অনিয়ম হয়েছে? এমন প্রশ্নের জবাবেও কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি রেজিস্ট্রার প্রকৌশলী ওহিদুজ্জামান।

নিয়োগের বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড ইমদাদুল হক বলেছেন, আমার কাছে কাগজ এসেছে, আমি নিয়োগ দিয়ে দিয়েছি। এখন আমরা বিষয়টি তদন্ত করবো। এখানে নিয়োগ প্রক্রিয়ায় যদি অসঙ্গতি ঘটে তাহলে নিয়োগ বাতিল হবে।

তবে নিয়োগ দেওয়ার আগে তা দেখা হয়নি কেন, এ নিয়েও বিশ্ববিদ্যালয়ে চলছে সমালোচনা। সব জেনে শুনেই নিয়োগ দেওয়া হয়েছে কিনা, এ নিয়ে রয়েছে প্রশ্ন।

বাংলাদেশ সময়: ১৭৩৬ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৯, ২০২২
এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।