ঢাকা, রবিবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিক্ষা

শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষার নিরাপত্তা-প্রস্তুতি জানালেন প্রতিমন্ত্রী

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪১৯ ঘণ্টা, এপ্রিল ২১, ২০২২
শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষার নিরাপত্তা-প্রস্তুতি জানালেন প্রতিমন্ত্রী

ঢাকা: শতভাগ স্বচ্ছতার সঙ্গে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৪৫ হাজার সহকারী শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন।

প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা ২০২০ উপলক্ষে বৃহস্পতিবার (২১ এপ্রিল) সচিবালয়ে মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে প্রতিমন্ত্রী একথা বলেন।

নিয়োগ পরীক্ষা কতটুকু স্বচ্ছ হবে- প্রশ্নে প্রতিমন্ত্রী বলেন, শতভাগ স্বচ্ছ হবে। জুনের মধ্যে নিয়োগ দিয়ে দেব।

সংবাদ সম্মেলন জাননো হয়, সহকারী শিক্ষকের ৩২ হাজার ৫৭৭টি শূন্যপদে নিয়োগের জন্য প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর ২০২০ সালের ২০ অক্টোবর বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে। কিন্তু করোনা মহামারির কারণে নিয়োগ পরীক্ষা গ্রহণ সম্ভব হয়নি। ইতোমধ্যে অবসরজনিত কারণে আরও দশ হাজারেরও বেশি সহকারী শিক্ষকের পদ শূন্য হয়ে পড়েছে। এতে বিদ্যালয়সমূহে শিক্ষক ঘাটতি দেখা দিয়েছ; যা পাঠদান কার্যক্রমকে ব্যাহত করছে। এ সমস্যা নিরসনে মন্ত্রণালয় পূর্বের বিজ্ঞপ্তির শূন্যপদ ও বিজ্ঞপ্তির পরের শূন্যপদ মিলিয়ে প্রায় ৪৫ হাজার সহকারী শিক্ষক নিয়োগের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে।

প্রতিমন্ত্রী জানান, নিয়োগ পরীক্ষা আগামী ২২ এপ্রিল থেকে তিন ধাপে ৬১ জেলায় (তিন পার্বত্য জেলা ব্যতীত) শুরু হতে যাচ্ছে। ২২ এপ্রিল প্রথমধাপে ২২ জেলায় পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। এর মধ্যে ১৪ জেলার সব এবং ৮ জেলার আংশিক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। ২০ মে দ্বিতীয় ধাপে ৩০ জেলায় পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। এর মধ্যে ৮ জেলার সব এবং ২২ জেলার আংশিক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। ৩ জুন তৃতীয় ধাপে ৩১ জেলায় পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। এর মধ্যে ১৭ জেলার সব এবং ১৪টি জেলার আংশিক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে।

তিনটি ধাপের পরীক্ষাই শুক্রবার সকাল ১১টা থেকে ১২টা পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হবে।

বর্তমানে সারাদেশে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যা ৬৫ হাজার ৫৬৬; অনুমোদিত শিক্ষকপদ ৪ লাখ ২৮ হাজার ৭০১টি। এবারের নিয়োগ পরীক্ষায় পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ১৩ লাখ ৯ হাজার ৪৬১ জন। তিন ধাপে মোট পরীক্ষা কেন্দ্রের সংখ্যা ১ হাজার ৮১১টি। সুষ্ঠু ও সুশৃঙ্খলভাবে পরীক্ষা পরিচালনার লক্ষ্যে তিনটি ধাপে মোট ৬১টি জেলায় লিখিত পরীক্ষা আয়োজন করা হয়েছে।

নিয়োগপ্রাপ্ত শিক্ষক আগামী প্রায় ৩৫ বছর প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শ্রেণি পাঠদান পরিচালনায় নিয়োজিত থাকবেন জানিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা অপরিহার্য। অন্যথায় মানসম্মত শিক্ষক পাওয়া যাবে না এবং তাদের হাতে গড়ে উঠা প্রজন্মের কাছ থেকে কাঙ্খিত সেবা পাওয়া যাবে না।

তিনি জানান, ইতোমধ্যে সুষ্ঠুভাবে পরীক্ষা পরিচালনার স্বার্থে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর হতে সহকারী শিক্ষক নিয়োগের লিখিত পরীক্ষা পরিচালনা নির্দেশিকা জারি করা হয়েছে। প্রতিটি দায়িত্ব সুষ্ঠু ও সুচারুভাবে পালনের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। অতীতের অভিজ্ঞতায় আমরা দেখেছি স্থানীয় অসাধুচক্র শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষাকে বিভিন্নভাবে প্রভাবিত করার চেষ্টা করে। এবার যেন সেটা না হয় সেটি নিশ্চিত করার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।

নিরাপত্তা নিয়ে প্রতিমন্ত্রী জানান, প্রতিটি পরীক্ষা কেন্দ্রে প্রয়োজনীয় সংখ্যক নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ করা হবে। সংশ্লিষ্ট জেলায় নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের সংখ্যা অপর্যাপ্ত হলে বিভাগীয় কমিশনার/মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন। প্রতিটি পরীক্ষা কেন্দ্রে মহিলা পুলিশসহ (মহিলা কেন্দ্রে মহিলা পুলিশ) প্রয়োজনীয় সংখ্যক পুলিশ নিয়োগ করা হবে। প্রতিটি পরীক্ষা কেন্দ্রে প্রয়োজনীয় জনবলসহ মেটাল ডিটেক্টর সরবরাহ করা হবে। হ্যান্ড মেটাল ডিটেকটর দ্বারা পরীক্ষার্থীদের দেহ তল্লাশি করা হবে, যাতে ইলেক্ট্রনিক ডিভাইস নিয়ে তারা পরীক্ষা কেন্দ্রে প্রবেশ করতে না পারে। এক্ষেত্রে মহিলা পরীক্ষার্থীদের মহিলা পুলিশ দ্বারা তল্লাশির ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

পরীক্ষা কেন্দ্রে পরীক্ষার পূর্বে অনিয়ম রোধে গোয়েন্দা নজরদারিসহ প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী প্রয়োজন বোধে এ বিষয়ে বিশেষ পরিকল্পনা প্রণয়ন করবেন। পরীক্ষা কেন্দ্রসমূহে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করা হবে। কেন্দ্র সচিবের নিকট একটি অ্যানালগ/ফিচার ফোন থাকবে। তিনি ব্যতীত অন্য কারো নিকট কোন ধরনের মোবাইল ফোন থাকবে না। পরীক্ষা কেন্দ্রে সকাল থেকে পরীক্ষা শেষ না হওয়া পর্যন্ত টেলিফোন ও ইন্টারনেট যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন থাকবে।

প্রতিমন্ত্রী বলেন, ইতোপূর্বে আমরা জেলা পর্যায়ে প্রশ্নপত্র প্রণয়ন করতাম। কিন্তু আমরা পর্যবেক্ষণ করেছি এ প্রক্রিয়ার বিভিন্ন পর্যায়ে অনেক বেশি লোক সম্পৃক্ত হয়ে পড়ে; এটি এড়ানোর জন্য এবার আমরা কেন্দ্রীয়ভাবে প্রশ্নপত্র প্রণয়ণের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। চার সেট প্রশ্নপত্র ভিন্ন ভিন্ন রংয়ে মুদ্রিত থাকবে। কেন্দ্রভিত্তিক সিলগালা করা ট্রাংকে কক্ষভিত্তিক হলোগ্রাম স্টিকার ও সিলমোহরযুক্ত প্রশ্নপত্রের খাম থাকবে। জেলা ট্রেজারিতে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থায় প্রশ্নপত্র সংরক্ষিত থাকবে।

পরীক্ষা শুরু হওয়ার ১ ঘণ্টা পূর্বে ১ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের অধীনে সশস্ত্র নিরাপত্তা বাহিনীর মাধ্যমে প্রশ্নপত্র কেন্দ্রে পৌঁছানো হবে। পরীক্ষা শুরুর ১৫ মিনিট পূর্বে কেন্দ্রে প্রশ্নপত্রের ট্রাংক খোলা হবে। পরীক্ষা শুরুর ৫ মিনিট পূর্বে কেন্দ্রের কক্ষসমূহে প্রশ্নপত্রের মুখবদ্ধ খাম পৌঁছানো হবে।

জাকির হোসেন বলেন, নিয়োগ কার্যক্রমে প্রার্থীদের রোল নম্বর, আসন বিন্যাস, প্রশ্নপত্র প্রেরণ ও মুদ্রণ, উত্তরপত্র মূল্যায়ন, ফলাফল প্রস্তুতসহ যাবতীয় কাজ সফটওয়্যারের মাধ্যমে স্বয়ংক্রিয়ভাবে করা হয়। এক্ষেত্রে কোনো ধরনের অবৈধ হস্তক্ষেপের সুযোগ নেই। কোনো দালাল বা প্রতারক চক্রের প্রলোভনে প্রলুব্ধ হয়ে কোনো প্রকার অর্থ লেনদেন না করা এবং কেউ অর্থের বিনিময়ে চাকরি দেওয়ার প্রলোভন দেখালে তাকে নিকটস্থ থানায় সোপর্দ করা অথবা থানা বা গোয়েন্দা সংস্থাকে অবহিত করার জন্য অনুরোধ করছি।

দ্রুততম সময়ের মধ্যে লিখিত পরীক্ষার ফলাফল ও মৌখিক পরীক্ষার মাধ্যমে যোগ্য প্রার্থীদের নিয়োগদান প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হবে বলে জানান প্রতিমন্ত্রী।

অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ২০১৯ সালের নিয়োগবিধি অনুযায়ী, ৬০ শতাংশ মহিলা কোটা, ২০ পোষ্য কোটা এবং ২০ শতাংশ পুরুষ কোটা (সাধারণ কোটা) আছে। আর সব কোটাতে বিজ্ঞান বিভাগ বিষয়ে ২০ শতাংশ কোটা আছে। অর্থাৎ প্রত্যেক কোটা থেকে যারা নির্বাচিত হবেন তাদের সাইন্স ব্যাকগ্রাউন্ড হতে হবে।

এই সময়ে এসে কোটা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে- এ বিষয়ে ডিজি বলেন, এটি ২০১৯ সালের নিয়োগবিধি। প্রাথমিক শিক্ষার ক্ষেত্রে শিক্ষক নিয়োগ অন্য চাকরির মত নয়। এটি ট্রেডিশনালি হয়ে আসছে। সরকার যদি বিবেচনা করে, সরকার ইতোমধ্যে অন্যান্য চাকরির ক্ষেত্রে বিবেচনা করেছে। আমরা নিয়োগবিধি করার সময় জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের মতামত নিয়েছিলাম, অন্য কোটা বাদ দেওয়ার সময় আবার মতামত নিয়েছিলাম। তারা বলেছে যে নিয়োগবিধি অনুযায়ী করবেন। তবে সরকার যে কোটাগুলো তুলে দিয়েছে সেগুলো এখানে প্রযোজ্য হবে না।

নিয়োগবিধি পরিবর্তন বা সংষ্কারের উদ্যোগ নেওয়া হবে কিনা- প্রশ্নে ডিজি বলেন, আইন তো যুগের প্রয়োজনে পরিবর্তনযোগ্য। সরকারের যদি পলিসি পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত নেয় সেক্ষেত্রে সেটি ভবিষ্যতের বিষয়।

তিনি বলেন, প্রথাগত কোটায় পর্যাপ্ত প্রার্থী না পাওয়া গেলে সাধারণ কোটায় নিয়োগ দেওয়া হয়। সহকারী শিক্ষক নিয়োগ উপজেলায় নিয়োগ হয়। সেই উপজেলায় কোটা সীমাবদ্ধ থাকে।

বাংলাদেশ সময়: ১৪১৯ ঘণ্টা, এপ্রিল ২১, ২০২২
এমআইএইচ/এনএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।