ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

শিক্ষা

মেয়েকে অন্য স্কুলে ভর্তি করায় বাবার বেতন বন্ধ!

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০৫৪ ঘণ্টা, আগস্ট ১৬, ২০২২
মেয়েকে অন্য স্কুলে ভর্তি করায় বাবার বেতন বন্ধ!

যশোর: মেয়েকে নিজের বিদ্যালয় থেকে নিয়ে অন্য একটি বিদ্যালয়ে ভর্তি করায় যশোরের বাঘারপাড়ার বাকড়ী মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের এমপিওভুক্ত (মান্থলি পে-অর্ডার) এক শিক্ষকের বেতন বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগে উঠেছে।

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক এবং বিদ্যালয় পরিচালনা পর্যদের সভাপতির কাছে বার বার ধর্না দিয়েও তিনি তার বেতন ছাড় করাতে পারছেন না।

 ওই শিক্ষকের নাম সুরেন্দ্রনাথ সিংহ। তিনি বাকড়ী মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক (হিন্দু ধর্ম)।

যোগাযোগ করা হলে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক অনিমা রাণী লস্কর বাংলানিউজকে বলেন, সহকারী শিক্ষক সুরেন্দ্রনাথ সিংহের বেতন বন্ধ করেছেন বিদ্যালয় পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি। এ বিষয়ে আমি কিছু বলতো পারবো না।

তার বিদ্যালয়ে সহপাঠ্যক্রমিক কার্যক্রমের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি রেগে গিয়ে বলেন, অনন্যা সিংহ আপনার কাছে এই অভিযোগ দিয়েছে। ওই মেয়ে যা বলবে তাই হবে নাকি? মাঝেমধ্যে সহপাঠ্যক্রমিক কার্যক্রম হয়।

যশোর শিক্ষা বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান আমিরুল আলম খান বলেন, কোন শিক্ষার্থী কোন প্রতিষ্ঠানে পড়বে এটা সম্পূর্ণ ওই শিক্ষার্থীর ও তার অভিভাবকের সিদ্ধান্তের বিষয়। এখানে বাধ্যবাধকতার কোনো সুযোগ নেই। বুঝিয়ে শিক্ষার্থীকে কোনো প্রতিষ্ঠানে রাখা যাবে। কিন্তু আইনগতভাবে কাউকে বাধ্য করা যাবে না।

বিদ্যালয় সূত্র জানায়, ২০০২ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি সুরেন্দ্রনাথ সিংহ বাকড়ী মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক (হিন্দু ধর্ম) হিসেবে যোগদান করেন। তার মেয়ে অনন্যা সিংহ ২০১৯ সালে বাকড়ী প্রি-ক্যাডেট স্কুল থেকে জিপিএ-৫ পেয়ে প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষায় (পিইসি) উত্তীর্ণ হয়। ২০২০ সালের জানুয়ারি মাসে সে বাকড়ী মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ে ষষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তি হয়। সে আবৃত্তি, উপস্থিত বক্তৃতা এবং বিতর্ক প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে চায়। কিন্তু বিদ্যালয়ে এ ধরনের কোনো সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড ছিল না। এ কারণে সে এই বিদ্যালয়ে লেখাপড়া করতে চায়নি।  

এ বছর সে সপ্তম শ্রেণি থেকে অষ্টম শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হয়। গত জানুয়ারি থেকে সে বিদ্যালয়ে যাওয়া বন্ধ করে দেয়। এরপর মার্চ মাসে সে ওই বিদ্যালয় ত্যাগ করে পাশের গুয়াখোলা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি হয়।

সুরেন্দ্রনাথ সিংহ বলেন, জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত বিদ্যালয়ে না এসে মেয়ে বাড়িতেই ছিল। ফেব্রুয়ারি মাসে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক তাকে একটি কারণ দর্শানোর নোটিশ দেন।  

নোটিশে তার (সুরেন্দ্রনাথ সিংহ) বিদ্যালয় পরিপন্থি আলোচনা ও কার্যকলাপের বিষয়ে জবাব চাওয়া হয়। তিনি জবাব দেওয়ার পরও তার ফেব্রুয়ারি মাসের বেতন বন্ধ করে দেওয়া হয়। এরপর গত ৯ মার্চ থেকে নিয়মিত হাজিরা খাতার পরিবর্তে আলাদা খাতায় তার সই নেওয়া হচ্ছে।  

তিনি জানান, পরিচালনা পর্যদের সভাপতি, কয়েকজন সদস্য এবং প্রধান শিক্ষকের কাছে বারবার যেয়ে বেতন ছাড়ের জন্য অনুরোধ জানানোয় মার্চ মাস থেকে তার বেতন নিয়মিত করা হয়। তবে ফেব্রুয়ারি মাসের বেতন আর দেওয়া হয়নি। গত এপ্রিলে বিদ্যালয়ে মেয়ের অনুপস্থিতর কারণ জানতে চেয়ে তাকে দুই দফা কারণ দর্শানো নোটিশ দেওয়া হয়।  

তিনি কারণ দর্শানোর জবাব দেন। এরপর গত জুলাই মাস থেকে পুনরায় তার বেতন বন্ধ করে দেওয়া হয়।

তিনি বলেন, মেয়েটিকে অনেক বুঝিয়েছি, সে আবৃত্তি, উপস্থিত বক্তৃতা এবং বিতর্ক প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে চায়। এসব কার্যক্রম না থাকায় সে বিদ্যালয়ে যেতে চায় না। বোঝানোর সময়ে মেয়েটি অঝোরে কাঁদতে থাকে। একপর্যায়ে আমার স্ত্রী তাকে গুয়াখোলা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি করেন। আমি হার্ট ও ডায়াবেটিস রোগী। শরীর খুব খারাপ। দুইদিন জ্ঞান হারিয়ে পড়ে গেছি। সংসারে অভাব। বেতন বন্ধ থাকায় কোনো কূলকিনারা পাচ্ছি না। এখন আমার মরা ছাড়া আর কোনো পথ খোলা নেই। ’

বাকড়ি মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয় পরিচালনা পর্যদের সভাপতি পরিমল গোলদার বলেন, ‘কমিটি সহকারী শিক্ষক সুরেন্দ্রনাথ সিংহের বেতন বন্ধের সিদ্ধান্ত দিয়েছে। আমি বিদ্যালয়ের সভাপতি। আমি তার বেতন বন্ধ করেছি। সবকিছু নিয়মের মধ্যে করা হয়েছে। আপনি যা কিছু করতে চান করতে পারেন। ’ বলেই তিনি মোবাইল ফোনের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন।

বাঘারপাড়া উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আকরাম হোসেন খান বলেন, বিষয়টি আমি শুনেছি। তবে এ ব্যাপারে ওই শিক্ষক আমার কাছে কোনো আবেদন করেননি। আবেদন পেলে এ ব্যাপারে তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করা হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১০৫৩ ঘণ্টা, আগস্ট ১৬, ২০২২
এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।