টাঙ্গাইল: ছাত্রলীগের প্রভাব খাটিয়ে বিদ্যালয়ে যান ইচ্ছেমতো। কোনোদিন আবার যান না।
রাজনৈতিক প্রভাবের ভয়ে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষও কোনো ব্যবস্থা নিতে পারছে না।
টাঙ্গাইলের গোপালপুর উপজেলা ছাত্রলীগের আহ্বায়ক ও উপজেলার মির্জাপুর ইউনিয়নের মোহনপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক শফিকুল ইসলাম শফিকের বিরুদ্ধে উঠেছে এমনই অভিযোগ।
অভিযোগ পেয়ে বিগত কয়েকদিন মোহনপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে তাকে পাওয়া যায়নি।
জানা গেছে, উপজেলার মোহনপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের আট শিক্ষক পদের মধ্যে ছাত্রলীগ নেতা শফিকুল ইসলামসহ ছয়জন শিক্ষক রয়েছেন। এর মধ্যে প্রধান শিক্ষকের পদ শূন্য রয়েছে। ২১০ জন শিক্ষার্থীর এ বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন সহকারী শিক্ষক শিরিন খাতুন। ছাত্রলীগ নেতা শফিকুল ইসলাম শফিক সহকারী শিক্ষক হিসেবে ওই বিদ্যালয়ে ২০২০ সালের মার্চ মাসে যোগদান করেন। এরপর থেকে রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে আসছেন তিনি। নিয়মিত বিদ্যালয়ে যান না। শফিক বিদ্যালয়টির পঞ্চম ও চতুর্থ শ্রেণির গণিতের শিক্ষক। দিনে তার চারটি ক্লাস রয়েছে। একদিকে বিদ্যালয়ে শিক্ষক সংকট, অন্যদিকে শফিক নিয়মিত বিদ্যালয়ে না যাওয়ায়, তার ক্লাসগুলো নিতে বেগ পেতে হচ্ছে অন্য শিক্ষকদের।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয়রা জানান, ছাত্রলীগের নেতা শফিক। প্রভাব থাকায় তার বিরুদ্ধে কেউ প্রতিবাদ করার সাহস পায় না। বিদ্যালয়ের শিক্ষকরাও কোনো প্রতিবাদ না করে তার ক্লাসগুলো করে দেন।
এদিকে বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা শফিকের বিষয়ে কিছু বলতে রাজি হননি।
মোহনপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিরিন খাতুন জানান, উপজেলায় কাজ থাকলে সেদিন আসেন না শফিকুল ইসলাম। তিনি ছাত্রলীগ নেতা, তাই উপজেলাতেই বেশি কাজ থাকে। তারপরও বিদ্যালয়ে আসেন তিনি। যেদিন না আসেন, সেদিনের ক্লাসগুলো অন্য শিক্ষকদের দিয়ে করানো হয়। না হলে শিক্ষার্থীদের ক্ষতি হবে লেখাপড়ায়।
উপজেলা ছাত্রলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক ইকবাল হোসাইন বলেন, ছাত্রলীগের পদে থেকে সরকারি চাকরি করার কোনো নিয়ম নেই। একজন নেতা আবার শিক্ষকও, এটা হয় না। তাকে যে কোনো একটি করতে হবে। তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে আহ্বান জানাচ্ছি।
মোহনপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও উপজেলা ছাত্রলীগের আহ্বায়ক শফিকুল ইসলাম শফিক বলেন, ছাত্রলীগের নেতা হয়ে শিক্ষকতা করার নিয়ম নেই, এটা ঠিক। তবে নিয়মিতই বিদ্যালয়ে গিয়ে ক্লাস নিচ্ছি।
উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. মফিজুর রহমান বলেন, সরকারি চাকরি করলে তো ছাত্রলীগের নেতা হতে পারবে না। তবে আমি যখন বিদ্যালয়ে যাই, তখন তাকে পাওয়া যায়। আমাকে এ বিষয়ে না জড়ানোই ভালো। আমি সরকারি চাকরি করি, একজন বিদেশি মানুষ। সুতরাং এ বিষয়ে কিছু না বলাই ভালো। আপনারা তো সবই জানেন।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. আবুল কালাম আজাদ বলেন, শফিকুল ছাত্রলীগ করে শিক্ষকতা করতে পারবেন না। তাকে যে কোনো একটি করতে হবে। তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৯৪৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৬, ২০২২
এসআই