ঢাকা: মূল্যায়ন গ্রেডের সর্বোচ্চ পর্যায় জিপিএ-৫। এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় এবছর সেই জিপিএ-৫ পেয়েছে দুই লাখ ৬৯ হাজার ৬০২ জন।
বিগত পাঁচ বছরে মাধ্যমিক স্তরের পরীক্ষার ফল বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে যে, পাসের হারের সামান্য তারতম্য ঘটলেও শিক্ষার্থীরা যে পরিমাণ জিপিএ-৫ পেয়েছে তা ‘ল্যান্ডমার্ক’।
সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে পরীক্ষা, অ্যাসাইনমেন্ট ও প্রস্তুতির সময় বেশি পাওয়ায় জিপিএ-৫ বেশি পাওয়ার সংখ্যার ইতিবাচক প্রভাব রেখেছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
জিপিএ-৫ বাড়ার এই কারণ নিয়ে শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি বলেছেন, কারণ এবার শিক্ষার্থীরা প্রস্তুতির সময় পেয়েছে। শ্রেণীকক্ষে ক্লাস হয়েছে। তারা অনেক বেশি পড়াশোনার সুযোগ পেয়েছে। সে কারণে আমি মনে করি জিপিএ-৫ এর সংখ্যাও বেড়েছে।
সোমবার (২৮ নভেম্বর) দুপুরে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে ফল প্রকাশ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পরে শিক্ষামন্ত্রী আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে সংবাদ সম্মেলনে বিস্তারিত ফল জানান।
পরিসংখ্যান অনুযায়ী, এবার নয়টি সাধারণ বোর্ড, মাদরাসা এবং কারিগরিতে পাসের হার ৮৭ দশমিক ৪৪ শতাংশ। গত বছর এ পরীক্ষায় পাসের হার ৯৩ দশমিক ৫৮ শতাংশ ছিল। পাসের হারে এগিয়ে রয়েছে যশোর বোর্ড।
ঢাকা বোর্ডে ৯০ দশমিক ৩ শতাংশ, ময়মনসিংহ শিক্ষা বোর্ডে পাসের হার ৮৯ দশমিক ২ শতাংশ, রাজশাহী বোর্ডে ৮৫ দশমিক ৮৮ শতাংশ, কুমিল্লা বোর্ড ৯১ দশমিক ২৮ শতাংশ, যশোর ৯৫ দশমিক ১৭ শতাংশ, চট্টগ্রাম ৮৭ দশমিক ৫৩ শতাংশ, বরিশাল ৮৯ দশমিক ৬১ শতাংশ, সিলেট ৭৮ দশমিক ৮২ শতাংশ, ও দিনাজপুর ৮১ দশমিক ১৬ শতাংশ শিক্ষার্থী পাস করেছে। এছাড়া মাদরাসা বোর্ডে ৮২ দশমিক ২২ ও কারিগরি বোর্ডে পাস করেছে ৮৯ দশমিক ৫৫ শতাংশ শিক্ষার্থী।
পাঁচ বছরে এসএসসিতে জিপিএ-৫ এর তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, ২০১৮ সালে জিপিএ-৫ ছিল এক লাখ ১০ হাজার ৬২৯ জন, ২০১৯ সালে এক লাখ পাঁচ হাজার ৫৯৪ জন, ২০২০ সালে এক লাখ ৩৫ হাজার ৮৯৮ জন, ২০২১ সালে এক লাখ ৪৮ হাজার ৪৪৬ জন শিক্ষার্থী জিপিএ-৫ অর্জন করে।
২০২২ সালে জিপিএ-৫ এর এই সংখ্যা এসে দাঁড়িয়েছে দুই লাখ ৬৯ হাজার ৬০২ জন। আগের বছরের থেকে ৮৬ হাজার ২৬২ জন বেশি শিক্ষার্থী জিপিএ-৫ পেয়েছে। শুধু সংখ্যাই বাড়েনি, তা পাসের হারেও প্রভাব ফেলেছে।
বিগত পাঁচ বছরে মাধ্যমিক স্তরের এই পরীক্ষায় পাসের হারে সামান্য তারতম্য দেখা যায়। ২০১৮ সালে পাসের হার ৭৭ দশমিক ৭৭, ২০১৯ সালে ৮২ দশমিক ২০, ২০২০ সালে ৮২ দশমিক ৮৭, ২০২১ সালে ৯৩ দশমিক ৫৮ এবং ২০২২ সালে ৮৭ দশমিক ৪৪ শতাংশ। এই পাঁচ বছরে ২০২১ সালে পাসের হার সর্বোচ্চ থাকলেও চলতি বছরে তা কমে গেছে।
পাসের হার কমা নিয়ে তথ্য বিশ্লেষণ করে জানা যায়, এবার সিলেটে পাসের হার কম। যা ৭৮ দশমিক ৮২ শতাংশ, যা অন্যান্য বোর্ডের তুলনায় প্রায় ১০ শতাংশ কম।
সিলেটে বন্যার কারণে শিক্ষার্থীদের প্রস্তুতিতে ছেদ ঘটে বলে সেখানে ফল কিছুটা খারাপ হতে পারে জানিয়ে শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি বলেছেন, এরপরও আমরা খতিয়ে দেখতে পারি কী কী কারণে পাসের হার কম হয়েছে।
এদিক যশোর বোর্ডে পাসের হার বেশি হওয়ায় তা মোট হারে ইতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। যশোর বোর্ডের পাসের হার ভালো হওয়ার কারণ ব্যাখ্যা করেছেন বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক আহসান হাবিব।
তিনি বাংলানিউজকে বলেন, এবছর সংক্ষিপ্ত সিলেবাস এবং প্রস্তুতির জন্য চার মাস বেশি সময় পেয়েছে শিক্ষার্থীরা। এছাড়া করোনাকালে নিয়মিত অনলাইন ক্লাস ও অ্যানাইনমেন্ট ছিল। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে নানামুখী পদক্ষেপ নিয়েছে যাতে তারা পরীক্ষামুখী হতে পারে।
তিনি আরও জানান, ষষ্ঠ থেকে ১০ম পর্যন্ত যে পরীক্ষা তা প্রশ্ন ব্যাংকের প্রশ্নে হচ্ছে, এতে করে প্রশ্নে ভয়ভীতি কেটে গেছে। প্রশ্ন কী ধরনের প্রশ্ন হতে পারে- তা জেনেছেন শিক্ষার্থীরা। এতে তাদের মধ্যে ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে।
‘আর সবচেয়ে বড় বিষয় শিক্ষার্থী-অভিভাবক আমাদের কথা শুনেছে, কীভাবে প্রস্তুতি নিতে হবে। তাদের কারণে ভালো ফল হয়েছে। ’
বাংলাদেশ সময়: ২০৩০ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৮, ২০২২
এমআইএইচ/এএটি