ঢাকা, শনিবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

নির্বাচন ও ইসি

হ্যাটট্রিক মিশন না স্বপ্নভঙ্গ আরিফুলের

নাসির উদ্দিন, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৩০০ ঘণ্টা, মে ৫, ২০২৩
হ্যাটট্রিক মিশন না স্বপ্নভঙ্গ আরিফুলের আরিফুল হক চৌধুরী

সিলেট: টানা দুই মেয়াদে দায়িত্ব পালন করা সিলেট সিটি করপোরেশনের (সিসিক) মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী সামনে এবার হ্যাটট্রিক মিশন। এ মিশনে তিনি ভোটে লড়বেন নাকি ‘ওয়াকওভার’ দেবেন-তা এখনো রহস্যাবৃত।

 

আসন্ন সিসিক নির্বাচনে ভোটের লড়ার নানা ইঙ্গিত দিলেও খোলাসা করছেন না। বলছেন, ২০ মে নাগরিক সমাবেশেই জানান দেবেন। এত দিন নীরব থাকা আরিফুল হক চৌধুরী ইতোমধ্যে বাগযুদ্ধেও লিপ্ত হয়েছেন।

১ মে দিবসের (সোমবার) মিছিল পরবর্তী নগরীর রেজিস্ট্রারি মাঠে বক্তব্যে সিলেটের সম্প্রীতি নষ্টের অভিযোগ এনে প্রশাসনের ওপর ক্ষোভ ঝাড়েন। সেসঙ্গে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীকে বহিরাগত আখ্যা দেন। এছাড়া মেয়র পদে ক্ষমতাসীন দলের বঞ্চিতদের ইঙ্গিতও ছিল তার কথায়।  

নির্বাচন ঘনিয়ে এলেও বর্তমান সিসিক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীকে নিয়ে ধুম্রজাল কাটছে না। যদিও আরিফ সমর্থকরা নির্বাচনে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। তাদের ধারণা আসন্ন সিটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থী আনোয়ারুজ্জামানের বিরুদ্ধে আরিফ অনায়াসে জয়লাভ করবেন!

এনিয়ে স্যোশাল মিডিয়াসহ বিভিন্ন মাধ্যমে আরিফ সমর্থকরা প্রচারণায়ও সক্রিয় রয়েছেন। প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীকে ঘায়েল করতে নানা তথ্য ছড়িয়ে দিচ্ছেন। তাদের মন্তব্যের জেরে সিসিক নির্বাচন নিয়ে স্যোশাল মিডিয়া এখন সরগরম।  

আরিফুল হক চৌধুরী এখনও রহস্য জিইয়ে রেখেছেন। তিনি হ্যাটট্রিক মিশনে নির্বাচনে অংশ নেন তার নিজ দলের বড় একটি অংশ চায় না।

দলের হাইকমান্ডের বিভিন্ন বক্তব্যে কর্মীরা অনেকটা দ্বিধাবিভক্ত। আরিফকে ঘিরে থাকা বিএনপির বলয় তাদের নিজস্ব হিসেবে-নিকেশ করছেন। এখানে আছে লাভ-ক্ষতির হিসাবও। কোনো কারণে আরিফুল হক যদি নির্বাচন না করেন তাকে ঘিরে গড়ে ওঠা বিশেষ একটি শ্রেণী আর্থিক ও রাজনৈতিক ক্ষতির সম্মুখীন হবে। ওই চিন্তা থেকেই তারা চায় আরিফুল হক যেন নির্বাচন করেন।

বিএনপির একাধিক সূত্র জানায়, বর্তমান মেয়র আরিফুল হক হিসাব কষছেন ভবিষ্যৎ রাজনীতির লাভ ক্ষতিরও। কোনো কারণে নির্বাচনে হেরে গেলে রাজনীতিতে পিছিয়ে পড়বেন তিনি। আর দলের পরোক্ষ সমর্থন না পেলে তাকে ঘিরে গড়ে ওঠা বলয় চলে যাবে অন্যের দখলে। দ্বিধা-দ্বন্দ্বের দোলাচলে আরিফুল হক চৌধুরী চাইছেন কর্মী ও সমর্থকদের শোডাউন দিয়ে দলের হাইকমান্ডের ওপর চাপ সৃষ্টি করে পরোক্ষ সমর্থন আদায় করতে। পাশাপাশি জনমত গড়ে নাগরিক সমাজ থেকে প্রার্থিতার সুর তুলতে চাচ্ছেন, যাতে বিএনপির নীতিনির্ধারকরা তার প্রার্থিতার প্রতি সদয় হন। সেই সুতায় এখনো আটকে আছে আরিফুলের সিদ্ধান্ত!

এদিকে আরিফুল হক সরাসরি নির্বাচনে প্রার্থিতার ঘোষণা না দিলেও উন্নয়ন কাজ তদারকির নামে বিভিন্ন এলাকায় নীরব প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন।

অন্যদিকে আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থী আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী তফসিল ঘোষণার আগে থেকেই নির্বাচনী মাঠ চাঙ্গা রেখেছেন। সেসঙ্গে স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ-সংগঠনের নেতাকর্মীরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে দলীয় প্রার্থীর বিজয় নিশ্চিত করতে একসঙ্গে কাজ করে যাচ্ছেন। পক্ষান্তরে নির্বাচনে বিএনপির গ্রিন সিগন্যাল না পাওয়া আরিফুল যেন সাম-কোল দুটিই বজায় রেখে চলতে চাচ্ছেন।

এছাড়া সিলেট সিটি করপোরেশনে এবার ২৭টি থেকে ৪২ ওয়ার্ডে বর্ধিত হয়েছে। নতুন ১৫টিসহ এসব ওয়ার্ডে প্রায় কয়েকশ’ কাউন্সিলর প্রার্থী প্রচার প্রচারণা শুরু করেছেন। হাঁটছেন বাড়ি বাড়ি। দোয়া চাইছেন ঘুরে ঘুরে।  নির্বাচনের আমেজ পুরোপুরি আসতে আরও সময় লাগবে। কিন্ত শঙ্কা ধীরে ধীরে হলেও মাথা চাড়া দিচ্ছে অলিগলিতে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, জাতীয় রাজনীতির হিসাব-নিকাশে টেকনিক্যালি স্থানীয় নির্বাচন এবার যাতে মোটামুটি সুষ্ঠু ও মানসম্মত হয়, সেদিকে সরকারের একটা প্রয়াস থাকবে। আন্তর্জাতিক বিভিন্ন প্রেক্ষাপটের কারণে সর্বপরি আসন্ন জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে কলংকের তিলক পড়তে চাইবে না সরকারের নীতি নির্ধারক মহল। তাহলে শঙ্কাটা কোথায়? শঙ্কাটা হলো রাজনৈতিক দলগুলোর নিয়ন্ত্রণের বাইরে গজিয়ে ওঠা স্থানীয় দুর্বৃত্তদের নিয়ে। কিশোর গ্যাং, মাদকের নিয়ন্ত্রক, স্থানীয় মাস্তানরা তাদের অস্তিত্বের জানান দিতে শুরু করেছে। পুলিশি তৎপরতার ফাঁক ফোঁকর গলে সিসিকের বিভিন্ন ওয়ার্ডে তাদের আনগোনা চোখে পড়ছে নাগরিকদের। পাড়া-মহল্লা, বস্তির নিয়ন্ত্রণ রয়েছে তাদের হাতে। অনেকেই আবার দাগি অপরাধী হওয়া সত্ত্বেও পরিচয় দেয় পুলিশের সোর্সের। অনেক কাউন্সিলর প্রার্থীরা নিজেদের শক্তি বাড়াতে এদেরকে ব্যবহার করার প্রস্তুতিও নিয়ে রেখেছেন।  

মহানগরীর বালুচর, শাহজালাল উপশহর, সোনারপাড়া, চৌকিদেখি,খাসদবির, মেডিকেল রোড, কুয়ারপার, বিলাপাড়, ইসলামপুর এসব এলাকায় বাড়ছে অপরাধী চক্রের আনাগোনা। জনমনে শঙ্কা উৎসবের নির্বাচন যেন রক্তের হোলি খেলাতে পরিণত নিয়েও নগরবাসীর অনেকে সন্দিহান।  

বাংলাদেশ সময়: ০৩০০ ঘণ্টা, মে ০৫, ২০২৩
এনইউ/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।