ঢাকা: আসন্ন গাজীপুর সিটি করপোরেশন (গাসিক) নির্বাচনে মেয়র প্রার্থীরা সর্বোচ্চ ৩১ লাখ ৫০ হাজার টাকা ব্যয় করতে পারবেন। এক্ষেত্রে ব্যক্তিগত ব্যয় এক লাখ ৫০ হাজার টাকা ও নির্বাচনী ব্যয় হবে ৩০ লাখ টাকা।
নির্বাচন কমিশনের (ইসি) নির্বাচন ব্যবস্থাপনা শাখার উপ-সচিব মো. আতিয়ার রহমান বিষয়টি প্রার্থীদের অবহিত করতে ইতোমধ্যে রিটার্নিং কর্মকর্তাকে চিঠি দিয়েছেন। এক্ষেত্রে সিটি করপোরেশন নির্বাচন পরিচালনা বিধিমালা অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে।
মেয়র প্রার্থীর নির্বাচনী ব্যয়ের সীমা:
নির্বাচন বিধিমালায় বলা হয়েছে- মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী ব্যক্তিগত খরচ বাবদ, অনধিক পাঁচ লাখ ভোটার সম্বলিত সিটি করপোরেশনের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ৭৫ হাজার টাকা, পাঁচ লাখ এক থেকে ১০ লাখ ভোটার সম্বলিত সিটি করপোরেশনের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ এক লাখ টাকা, ১০ লাখ এক থেকে ২০ লাখ ভোটার সম্বলিত সিটি করপোরেশনের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ এক লাখ ৫০ হাজার টাকা ও ২০ লাখ এক ও তদূর্ধ্ব ভোটার সম্বলিত সিটি করপোরেশনের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ দুই লাখ টাকা ব্যয় করতে পারবেন।
এছাড়া নির্বাচনী ব্যয় বাবদ অনধিক পাঁচ লাখ ভোটার সম্বলিত সিটি করপোরেশনের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ১৫ লাখ টাকা, পাঁচ লাখ এক থেকে১০ লাখ ভোটার সম্বলিত সিটি করপোরেশনের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ২০ লাখ টাকা, ১০ লাখ এক থেকে ২০ লাখ ভোটার সম্বলিত সিটি করপোরেশনের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ২০ লাখ টাকা ও ২০ লাখ এক থেকে তদূর্ধ্ব ভোটার সম্বলিত সিটি করপোরেশনের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ৫০ লাখ টাকা ব্যয় করতে পারবেন।
গাসিকে ৫৭টি সাধারণ ওয়ার্ড ও ১৯টি সংরক্ষিত ওয়ার্ডে মোট ৪৮০টি ভোটকেন্দ্রে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। মোট ভোটার সংখ্যা (পুরুষ ভোটার পাঁচ লাখ ৯২ হাজার ৭৬২ জন, নারী ভোটার পাঁচ লাখ ৮৬ হাজার ৬৯৬ জন এবং হিজড়া ভোটার ১৮ জন) ১১ লাখ ৭৯ হাজার ৪৭৬ জন। অর্থাৎ মেয়র পদের প্রার্থীরা ব্যক্তিগত খাতে ব্যয় করতে পারবেন এক লাখ ৫০ হাজার টাকা ও ভোটের জন্য ৩০ লাখ টাকা। মোট সর্বোচ্চ ব্যয়সীমা হচ্ছে ৩১ লাখ ৫০ হাজার টাকা।
বিধিমালায় কাউন্সিলর পদপ্রার্থীর ব্যয়:
কাউন্সিলর প্রার্থী ব্যক্তিগত খরচ বাবদ অনধিক ১৫ হাজার ভোটার সম্বলিত ওয়ার্ডের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ১০ হাজার টাকা, ১৫ হাজার এক থেকে ৩০ হাজার ভোটার সম্বলিত ওয়ার্ডের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ২০ হাজার টাকা, ৩০ হাজার এক থেকে ৫০ হাজার ভোটার সম্বলিত ওয়ার্ডের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ৩০ হাজার এবং ৫০ হাজার এক ও তার বেশি ভোটার সম্বলিত ওয়ার্ডের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ৫০ হাজার টাকা ব্যয় করতে পারবেন।
এছাড়া কাউন্সিলর প্রার্থীর নির্বাচনী ব্যয় বাবদ অনধিক ১৫ হাজার ভোটার সম্বলিত ওয়ার্ডের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ এক লাখ টাকা, ১৫ হাজার এক থেকে ৩০ হাজার ভোটার সম্বলিত ওয়ার্ডের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ দুই লাখ টাকা, ৩০ হাজার এক হতে ৫০ হাজার ভোটার সম্বলিত ওয়ার্ডের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ চার লাখ টাকা এবং ৫০ হাজার এক থেকে তদূর্ধ্ব ভোটার সম্বলিত ওয়ার্ডের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ছয় লাখ টাকা ব্যয় করতে পারবেন।
এ বিধান অনুযায়ী, গাসিক ভোটের কাউন্সিলর প্রার্থীরা ব্যক্তিগত ও ভোটের ব্যয় বাবদ ওয়ার্ডভেদে ভোটার অনুপাতে সর্বনিম্ন এক লাখ ১০ হাজার টাকা থেকে ছয় লাখ ৫০ হাজার টাকা ব্যয় করতে পারবেন।
আইন অনুযায়ী, ভোটের প্রচারপত্র বা প্রকাশনার মাধ্যমে অথবা অন্য কোনোভাবে ভোটারদের কাছে কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর অভিমত, লক্ষ্য বা উদ্দেশ্য উপস্থাপনের জন্য ব্যয়িত অর্থসহ তাহার নির্বাচন পরিচালনার জন্য দান, ঋণ, অগ্রিম জমা বা অন্য কোনোভাবে পরিশোধিত অর্থ 'নির্বাচনী ব্যয়' বলে গণ্য হবে।
আত্মীয়-স্বজনের (স্বামী বা স্ত্রী, মা-বাবা, ছেলে, মেয়ে ভ্রাতা বা ভগ্নি) কাছ থেকে ধার, কোনো প্রতিষ্ঠান বা সংস্থার স্বেচ্ছা প্রদত্ত দান গ্রহণ করাকে ব্যয়ের উৎস দেখানো যাবে। এক্ষেত্রে কোনো উৎস থেকে কোনো অর্থপ্রাপ্ত হলে অর্থ প্রাপ্তির পর তাৎক্ষণিকভাবে রিটার্নিং কর্মকর্তা ও নির্বাচন কমিশনকে জানাতে হবে।
কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী তার নির্বাচনী এজেন্ট ব্যতীত অন্য কারো মাধ্যমে নির্বাচন বাবদ কোনো অর্থ ব্যয় করতে পারবেন না। এক্ষেত্রে পুরো ব্যয় পরিচালনা করতে হবে তফসিলি ব্যাংকের নির্দিষ্ট একটি অ্যাকাউন্ট থেকে।
নির্বাচনের পর ফলাফল সরকারি গেজেটে প্রকাশ হওয়ার ৩০ দিনের মধ্যে সব প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীকে ব্যয়ের রিটার্ন রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে দাখিল করতে হবে।
গাসিক নির্বাচনে মেয়র পদে ১২ জন, সংরক্ষিত আসনের কাউন্সিলর পদে ৮২ জন ও সাধারণ কাউন্সিলর পদে ২৯০ জন মনোনয়নপত্র দাখিল করেছিলেন।
মেয়র পদে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছিলেন আওয়ামী লীগের অ্যাডভোকেট মো. আজমত উল্লা খান, জাতীয় পার্টির (জাপা)এম এম নিয়াজ উদ্দিন, গণফ্রন্টের আতিকুল ইসলাম, জাকের পার্টির মো. রাজু আহম্মেদ ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের গাজী আতাউর রহমান।
এছাড়া স্বতন্ত্র থেকে আব্দুল্লাহ আল মামুন, মো. হারুন অর রশিদ, সরকার শাহনুর ইসলাম, মোহাম্মদ অলিউর রহমান, মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম, জায়েদা খাতুন ও মো. আবুল হোসেন মনোনয়ন দাখিল করেছিলেন।
এদের মধ্যে অনেকের মনোনয়নপত্র বাতিল করেছেন রিটার্নিং কর্মকর্তা। বর্তমানে চলছে আপিল নিষ্পত্তির কাজ, যা শেষ হবে ৭ মে। আর প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ সময় ৮ মে। প্রতীক বরাদ্দ ৯ মে এবং ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে ২৫ মে।
গাজীপুর সিটি করপোরেশনে সর্বশেষ ভোট হয়েছে ২০১৮ সালের ২৬ জুন। নির্বাচিত করপোরেশনের প্রথম সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে ২০১৮ সালের ১১ সেপ্টেম্বর। পরবর্তী সাধারণ নির্বাচনের সময়গণনা শুরু হয়েছে গত ১১ মার্চ। বর্তমানে যারা নির্বাচিত রয়েছেন তাদের মেয়াদ শেষ হবে আগামী ১০ সেপ্টেম্বর।
বাংলাদেশ সময়: ১৭১৩ ঘণ্টা, মে ০৬, ২০২৩
ইইউডি/আরআইএস