ঢাকা, মঙ্গলবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

নির্বাচন ও ইসি

প্রার্থীর ব্যয়ের হিসাব দেওয়ার শেষ সময় ৭ ফেব্রুয়ারি, দলের ৭ এপ্রিল

ইকরাম-উদ দৌলা, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০১৩ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১০, ২০২৪
প্রার্থীর ব্যয়ের হিসাব দেওয়ার শেষ সময় ৭ ফেব্রুয়ারি, দলের ৭ এপ্রিল

ঢাকা: দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী এক হাজার ৯৫৯ জন প্রার্থীকে আগামী ৭ ফেব্রুয়ারি মধ্যে নির্বাচনী ব্যয়ের হিসাব দাখিল করতে হবে। এ ছাড়া ভোটে অংশ নেওয়া ২৮টি দলকেও হিসাব দিতে হবে ৭ এপ্রিলের মধ্যে।

অন্যথায় প্রার্থীদের জেল জরিমানা ও দলের নিবন্ধন বাতিলের ব্যবস্থা নিতে পারবে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।

জাতীয় সংসদ নির্বাচনের গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের (আরপিও) এমন বিধান সম্প্রতি রিটার্নিং কর্মকর্তাকে পাঠিয়ে তা সংশ্লিষ্টদের অবহিত করার নির্দেশনা সংস্থাটির নির্বাচন ব্যবস্থাপনা শাখার উপ-সচিব মো. আতিয়ার রহমান পাঠিয়েছেন। এতে বলা হয়েছে, ভোটের ফল গেজেট আকারে প্রকাশের ৩০ দিনের মধ্যে প্রার্থীকে এবং নব্বই দিনের মধ্যে দলগুলোকে ব্যয়ের হিসাব জমা দিতে হবে।

৭ জানুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ২৯৯টি আসনে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়েছে। এক্ষেত্রে একটি কেন্দ্রে অনিয়মের কারণে ময়মনসিংহ-৩ আসনের ফল স্থগিত করে ইসি। বাকি ২৯৮টি আসনের বিজয়ীদের গেজেট ৯ জানুয়ারি প্রকাশ করা হয়। তাই আইন অনুযায়ী, আগামী ৭ ফেব্রুয়ারির মধ্যে ২৯৮ আসনের সব প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীকে এবং ৭ এপ্রিলের মধ্যে সব প্রতিদ্বন্দ্বী দলকে নির্বাচনী ব্যয়ের বিবরণী জমা দিতে হবে।

এবারের নির্বাচনে ভোটারপ্রতি প্রার্থীর সর্বোচ্চ ব্যয় ১০ টাকা নির্ধারণ করে দিয়েছিল ইসি। তবে ভোটার সংখ্যা যাই হোক না কেন, মোট ব্যয় ২৫ লাখ টাকা বেঁধে দেওয়া হয়েছিল।

অন্যদিকে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) অনুযায়ী, যে দল থেকে সর্বোচ্চ ৫০ জন প্রার্থী নির্বাচনে অংশ নেবে, সে দল সর্বোচ্চ ৭৫ লাখ টাকা ব্যয় করার সুযোগ পেয়েছে।

৫১ থেকে ১০০ জন প্রার্থীর জন্য সর্বোচ্চ দেড় কোটি টাকা, ১০১ থেকে দুইশ প্রার্থীর জন্য তিন কোটি টাকা এবং ২০০-এর বেশি প্রার্থী দিলে সংশ্লিষ্ট দলের সর্বোচ্চ সাড়ে চার কোটি টাকা ব্যয় করার সুযোগ ছিল। সে হিসাবে এবার সর্বোচ্চ ব্যয় করার সুযোগ পেয়েছিল বাংলাদেশ আওয়াম লীগ ও জাতীয় পার্টি।

ইসি সচিব মো. জাহাংগীর আলম জানিয়েছেন, এবার ২৮টি দল সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী দিয়েছে। এ ছাড়া স্বতন্ত্র থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন ৪৩৭জন। সবমিলিয়ে ২৯৯ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন এক হাজার ৯৬৯ জন।

দলগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি প্রার্থী দিয়েছে জাতীয় পার্টি ২৬৪ জন, দ্বিতীয় স্থানে আওয়ামী লীগ ২৬৫ জন। দল দুটি সাড়ে চার কোটি টাকা ব্যয় করার সুযোগ পেয়েছে। তৃণমূল বিএনপি ১৩৫ জন ও ন্যাশনাল পিপলস পার্টির ১২২ জন প্রার্থী দিয়েছে। এ দল দুটি সর্বোচ্চ তিন কোটি টাকা করে ব্যয় করার সুযোগ পেয়েছে।

অন্যদিকে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল- জাসদের ৬৬ জন, বাংলাদেশ কংগ্রেসের ৯৬ জন, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের ৫৬ জন, বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টির ৭৯ জন, বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক মুক্তিজোটের ৬৩ জন নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন। এ পাঁচটি দলের প্রতিটি সর্বোচ্চ দেড় কোটি টাকা ব্যয় করার সুযোগ পেয়েছে।

অন্যান্য দলের মধ্যে বিকল্প ধারা বাংলাদেশের ১০ জন, বাংলাদেশের সাম্যবাদী দলের (এমএল) চারজন, বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির ১৬ জন, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের ১১ জন, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির পাঁচজন, বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্টের ৩৭ জন, ইসলামী ফ্রন্ট বাংলাদেশের ৩৯ জন, ইসলামী ঐক্যজোটের ৪২ জন, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের ৩০ জন, গণফোরামের ৯ জন, গণফ্রন্টের ২১ জন, জাকের পার্টির ২১ জন, জাতীয় পার্টি-জেপির ১৩ জন, বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশনের ৩৮ জন, বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির (ন্যাপ) পাঁচজন, বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্ট-বিএনএফের ৪৫ জন, বাংলাদেশ মুসলিম লীগের চারজন, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির ২৬ জন প্রার্থী রয়েছে। এ ১৮টি দলের প্রতিটি সর্বোচ্চ ৭৫ লাখ টাকা ব্যয় করার সুযোগ পেয়েছে।

আরপিও অনুযায়ী, প্রার্থী প্রতি দল সর্বোচ্চ দেড় লাখ টাকা ব্যয় করতে পারে। এক্ষেত্রে নির্বাচনী প্রচারে দলীয় প্রধানের ভ্রমণ ব্যয় এতে যোগ হবে না। নির্বাচনী প্রচার, পোস্টার প্রভৃতি খাতে ব্যয় করতে পারে দলগুলো। আর চাঁদা ও অনুদান অন্যান্য খাত থেকে আয় করতে পারে। তহবিলের জন্য দল ২০ হাজার অধিক দান, চেক ছাড়া নিতে পারবে না।

গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের ৪৪ সিসিসি-বিধি অনুযায়ী, ভোটের ফল গেজেটে আকারে প্রকাশের পর ৯০ দিনের মধ্যে দলগুলোর নির্বাচনী ব্যয়ের হিসাব নির্বাচন কমিশনের জমা দেওয়ার বিধান রয়েছে। এটি অমান্য করলে ১০ হাজার টাকা জরিমানা, এমনকি দলের নিবন্ধনও বাতিল করতে পারে ইসি।

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ, বিএনপি, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ সর্বোচ্চ ব্যয় সুবিধা পেয়েছিল। সে সময়ও প্রার্থীর সর্বোচ্চ ব্যয় ২৫ লাখ টাকা এবং ভোটার প্রতি ব্যয় ১০ টাকা নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছিল।

আরপিও অনুযায়ী, নির্বাচিতদের গেজেট প্রকাশের ৩০দিনের মধ্যে ব্যয়ের হিসাব সব প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীকে দিতে হয়। কোনো প্রার্থী নির্বাচনী ব্যয়ের হিসাব নির্ধারিত সময়ে মধ্যে নির্বাচন কমিশনে জমা না দিলে, তার বিরুদ্ধে জরিমানা ও মামলার দেওয়ার বিধান রয়েছে।

২০১৪ সালের দশম সংসদ নির্বাচনের পর জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ যথাসময়ে ব্যয়ের হিসাব না দেওয়ায়, তার বিরুদ্ধে মামলা করেছিল ইসি। সে সময় ভোটারপ্রতি ব্যয় ধরা হয়েছিল আট টাকা। যদিও সেবারও সর্বোচ্চ ব্যয় ছিল ২৫ লাখ টাকা।

২০০৮ সালের নবম সংসদ নির্বাচনের সময় প্রার্থীর ভোটারপ্রতি গড় ব্যয় নির্ধারণ করা হয়েছিল পাঁচ টাকা। আর সর্বোচ্চ ব্যয় নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছিল ১৫ লাখ টাকা।

বাংলাদেশ সময়: ২০০৭ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১০, ২০২৩
ইইউডি/আরএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।