ঢাকা, শুক্রবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

নির্বাচন ও ইসি

নির্বাচনের মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে এগিয়ে নেওয়ার তাগিদ সিইসির

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪৪৩ ঘণ্টা, মে ২৩, ২০২৪
নির্বাচনের মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে এগিয়ে নেওয়ার তাগিদ সিইসির

ঢাকা: প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেছেন, যে মূল্যবোধ নিয়ে ৩০ লাখ মানুষ নিহত হয়েছেন, তাদের একটা প্রত্যাশা ছিল। আমারা সে প্রত্যাশার দিকে যেন এগিয়ে যেতে পারি, নির্বাচনের মাধ্যমে, গণতন্ত্রের মাধ্যমে।

বৃহস্পতিবার (২৩ মে) নির্বাচন ভবনের অডিটরিয়ামে মুক্তিযোদ্ধাদের হাতে ‘বীর মুক্তিযোদ্ধা’ খচিত স্মার্টকার্ড বিতরণ কর্মসূচিতে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ তাগাদা দেন।

সিইসি বলেন, মুক্তিযুদ্ধের তাৎপর্য অপরীসীম। পৃথিবীর অনেক রাষ্ট্রে মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অথবা সংগ্রামের মাধ্যমে স্বাধীনতা অর্জন করে। পলাশীর যুদ্ধটাও যুদ্ধ। তবে সেটা ছিল লজ্জার যুদ্ধ। আমাদের স্বাধীনতা হরণ হয়েছিল। আর আমাদের মুক্তিযুদ্ধ গৌরবের, সম্মানের।

তিনি বলেন, যারা মুক্তিযুদ্ধ করেছেন তারা জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস আপানারা জানেন। ’৫২, ’৬৯, ’৭০ এবং ’৭১ ধাপে ধাপে চূড়ান্ত অর্জন হযেছিল। ৭ মার্চের একটি ভাষণের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মুক্তিযুদ্ধের ডাক দিয়েছিলেন। তারপর ২৫ মার্চের কালরাতে যে বর্বর হামলা চালানো হয়েছিল, তাতে আমাদের যুবকরা যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল।

সিইসি বলেন, আমাদের মুক্তিযুদ্ধে যে ত্যাগ করতে হয়েছে, তা পৃথিবীর ইতিহাসে অসামান্য একটা আখ্যান। মুক্তিযুদ্ধের অর্জন, আমরা মুক্তি চেয়েছিলাম, গণতন্ত্র চেয়েছিলাম, সুশাসন চেয়েছিলাম। আমাদের মুক্তিযুদ্ধের চেতনা পুরোপুরি অর্জন হযনি। যে মূল্যবোধ নিয়ে ৩০ লাখ মানুষ নিহত হয়েছেন, তাদের একটা প্রত্যাশা ছিল। আমাদের সে প্রত্যাশার দিকে যেন এগিয়ে যেতে পারি, নির্বাচনের মাধ্যমে, গণতন্ত্রের মাধ্যমে, সুশাসনের মাধ্যমে এবং আর্থিক উন্নয়নের মাধ্যমে, যেন বাংলাদেশ বিশ্ব পরিমণ্ডলে একটি আদর্শিক উন্নত রাষ্ট্র হিসেবে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারে।

সমাবেশে উপস্থিত মুক্তিযোদ্ধাদের উদ্দেশে তিনি বলেন, আমরা আপনাদের খুব বেশি সম্মানিত করতে পারিনি। বরং আমরাই সম্মানিত বোধ করছি। আমাদের পরবর্তী প্রজন্ম আপনাদের দেখবে না। মুক্তিযুদ্ধের যে চেতনা, যে মূল্যবোধ, মুক্তিযুদ্ধের যে ঝাণ্ডা, এটা প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে সঞ্চালিত করতে হয়। আমরা-আপানারা মিলে সেটা করব। আমরা, আপানারা থাকব না, আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম যুগ যুগ ধরে থাকবে।

সিইসি আরও বলেন, আপনাদের কার্ডের সঙ্গে বীর মুক্তিযোদ্ধা লেখা থাকবে। এটা আমাদের আনন্দ দিচ্ছে। আপনারা থাকবেন না। কিন্তু আপনাদের সন্তানদের কাছে আপনার নাতি-নাতনিদের কাছে এটা আর্কাইভ হয়ে থাকবে। কখনোই হারাবেন না। এটা কিন্তু বীরত্বের একটি স্মারক।

কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, আমরা সকলে দেশকে ভালোবাসি। যারা শহীদ হয়েছেন, বঙ্গবন্ধু যিনি স্বাধীনতার ডাক দিয়েছেন, সেই শহীদদের সঙ্গে জাতির পিতা ও তাদের পরিবার যারা নির্মমভাবে ’৭৫ সালে নিহত হয়েছেন, তাদের শ্রদ্ধাভরে স্মরণি করছি ও তাদের বিদেহী আত্মার মাগরফেরাত কামনা করছি।

ইসি সচিব মো. জাহাংগীর আলমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অন্য নির্বাচন কমিশনারসহ নির্বাচন কমিশনের (ইসি) সব স্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারী উপস্থিত ছিলেন।

নির্বাচন কমিশনার আহসান হাবিব খান মুক্তিযোদ্ধাদের উদ্দেশে বলেন, আপনারা জাতির সূর্য সন্তান। আপনারা বিশ্বের মানচিত্রে বাংলাদেশ নামক একটি দেশের অবস্থান করে দিয়েছেন।  

নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর বলেন, যুদ্ধের সময় আমার বয়স ১০ বছর। মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিতে পারিনি, এই দুঃখ আজীবন থাকবে। আপনাদের যে সম্মান দিতে পেরেছি, তা আপনাদের সম্মানের তুলনায় অনেক কম। এই বিষয় গত কমিশন থেকে শুরু হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধ বিষযক মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে ভুল বোঝাবুঝি হয়েছিল। তারা আপত্তি দিয়ে এটা বন্ধ করে দিয়েছিল। আপনারা যাদের সনদ দিয়েছেন, আমরা শুধু তাদের জাতীয় পরিচয়পত্রে যদি মুক্তিযোদ্ধা পরিচয় না দিতে পারি তাহলে এটা অগৌরবের হয়ে থাকবে। অবশেষে তারা বুঝতে পারায় তাদের ধন্যবাদ জানাচ্ছি।  

নির্বাচন কমিশনার আনিছুর রহমান বলেন, বিলম্ব হলেও এই কর্মসূচিটা হয়েছে, তার জন্য আমি আনন্দিত, পরিতৃপ্ত। আমি মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সন্তান। আমার দুঃখ আমার বয়স তখন ১০ বছর। আমি যেতে পারিনি। এই দুঃখ থাকবে আজীবন।

মানবাধিকার কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান কাজী রিয়াজুল হক বলেন, বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ধরে রাখার জন্য বর্তমান সরকার অনেক কাজ করেছে। নির্বাচন কমিশন মুক্তিযোদ্ধাদের এই কার্ড দিয়েছে। তারা শুধু সম্মানটুকু পেতে চায়। এইটাই তাদের দাবি, বেশি  না।

সাবেক নির্বাচন কমিশনার জাবেদ আলী বলেন, তারা মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানিত করেছেন। মুক্তিযোদ্ধাকে সম্মানিত করার মাধ্যমে কমিশনও সম্মানিত হয়েছে।

মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব ইশরাত চৌধুরী বলেন, বর্তমান সরকার আসার পর মুক্তিযোদ্ধারা হারানো গৌরব ফিরে পেতে শুরু করেছেন। সেই ধারাবাহিকতায় এনআইডিতে বীর মুক্তিযোদ্ধা লেখা অনেক বড় উদ্যোগ। এখানে অনেকে মুক্তিযোদ্ধাদের ভাতা বাড়ানোর কথা বলেছেন, এই বিষয়ে কাজ প্রক্রিয়াধীন। দ্রুতই এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৪৩৬ ঘণ্টা, মে ২৩, ২০২৪
ইইউডি/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।