ঢাকা: সাবেক তিন প্রধান নির্বাচন কমিশনারকে ডেকে বিতর্কিত নির্বাচন করার কারণ জানতে চাইতে পারে নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশন। একই সঙ্গে নির্বাচনী অপরাধগুলো যেন তাদের জন্য প্রযোজ্য হয় সেই সুপারিশ করার কথা কথাও ভাবছে তারা।
বৃহস্পতিবার (২১ নভেম্বর) গণমাধ্যম সম্পাদককে সঙ্গে বৈঠক শেষে এমন পরিকল্পনার কথা জানান নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশন প্রধান ড. বদিউল আলম মজুমদার।
তার কাছে সাংবাদিকরা জানতে চান গত তিন কমিশনকে সংস্কার কমিশন ডাকবে কিনা, তাদের সময় যে অনিয়ম হয়েছে তা শুনবেন কি-না। জবাবে বদিউল আলম মজুমদার বলেন, সাবেক তিন কমিশন নিয়ে আমরা আলোচনা করেছি। আমরা আবার পর্যালোচনা করছি। নির্বাচনী অপরাধগুলো তাদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হতে পারে। আর এটা যাতে ভবিষ্যতে না হয়, সেটা নিয়েও আমরা পর্যালোচনা করেছি। গণমাধ্যমও যেন গত তিন নির্বাচনে কী অনিয়ন হয়েছে, তারা কেন সুষ্ঠু নির্বাচন করতে পারেন নাই, সেই অনুসন্ধানী প্রতিবেদন করে। আমরাও তথ্য সংগ্রহ করার চেষ্টা করছি। গত তিন নির্বাচন পর্যালোচনা করে ওই শিক্ষা নিয়ে আমরা প্রস্তাব করবো।
গত তিন কমিশন কেন সুষ্ঠু নির্বাচন করতে পারেনি, আপনারা তাদের ডেকে জানতে চাইবেন কি-না এমন প্রশ্নের জবাবে সুশাসনের জন্য নাগরিক-সুজন সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার বলেন, উনারা কী আসবেন? আমার তো মনে হয় না। আমরা বিবেচনায় নেবো।
২০১৪ সালে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী রকিবউদ্দীন আহমদের নেতৃত্বাধীন কমিশনের অধীনে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে ১৫৩ জন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়ার রেকর্ড হয়েছিল। সে নির্বাচনে বিএনপি ও সমমনা দলগুলো অংশ নেয়নি।
সিইসি কেএম নূরুল হুদার নেতৃত্বাধীন কমিশনের অধীনে ২০১৮ সালের নির্বাচনে ‘রাতের ভোট’ হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। ওই নির্বাচনে বিএনপি অংশ নিলেও আসন পেয়েছিল পাঁচটি। আর জোটের হিসেবে পেয়েছিল সাতটি।
অন্যদিকে সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়ালের নেতৃত্বাধীন কমিশনের অধীনে ২০২৪ সালের নির্বাচনে বিএনপিসহ সমমনা দলগুলো ভোটে অংশ নেয়নি। ভোটের ব্যাপক কারচুপির মাধ্যমে অধিক ভোট পড়ার হার দেখানোর অভিযোগ ওঠেছিল।
সংস্কার কমিশনের সঙ্গে বৈঠক শেষে সাংবাদিক গোলাম মোর্তোজা বলেন, আগামী নির্বাচন যদি ভালো করতে চাই এবং পূর্বের অভিজ্ঞতা যদি নিতে চাই তাহলে পূর্বের তিন কমিশনকে সুনির্দিষ্টভাবে প্রধানদের সঙ্গে বসে প্রকৃত তথ্যটা জানা দরকার। যেই সমস্ত গণমাধ্যমের সম্পাদকরা, যারা বলেছিল যে নির্বাচন ভালো হয়েছিল, তাদের ডেকে জিজ্ঞেস করেন যে কেন তারা বলেছে, যে নির্বাচন ভালো হয়েছে। দুর্বল নির্বাচন বা ভোটার বিহীন নির্বাচন, রাতের ভোটের নির্বাচনকে কেন তারা জাস্টিফাই করেছিল, এগুলো তাদের কাছ থেকে জানা দরকার। নির্বাচনি অপরাধের বড় শাস্তি সুপারিশ থাকা দরকার। ২০১৪ সালে কাজী রকিবউদ্দীন আহমদের কমিশন কেন ভোটারবিহীন নির্বাচন করেছিল সেটা তার কাছে জানতে চান। সরকার তাকে কী নির্দেশনা দিয়েছিল? ২০১৮ সালে নূরুল হুদার কমিশন রাতের ভোট কোন প্রেক্ষাপটে করেছিল, সেটা তার কাছে জানতে চান। এছাড়া ২০২৪ সালের নির্বাচনে কেন ভোটারের সংখ্যা বেড়ে গেল সেটা কাজী হাবিবুল আউয়াল কমিশনের কাছে জানতে চান। এই বিষয়গুলো জানার আলোকে আপনার সুপারিশগুলো দেন। এবং পূর্ব যারা নির্বাচনী অপরাধ যারা করেছিল তাদের যেন শাস্তির আওতায় আনা যায়, সেই সুপারিশ থাকা দরকার।
বাংলাদেশ সময়: ১৬৫২ ঘণ্টা, নভেম্বর ২১, ২০২৪
ইইউডি/এমএম