ঢাকা: নির্বাচনে প্রচার, সভা বা পোস্টারিং প্রার্থী বা দল নয়, নির্বাচন কমিশন (ইসি) সব প্রার্থীকে এক মঞ্চে এনে এই ব্যবস্থা করবে। এতে নির্বাচনে অযোগ্য, দেশবিরোধী, লুটেরাদের জয়ী হওয়ার পথ বন্ধ হয়ে যাবে।
মঙ্গলবার (২০ মে) প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এএমএম নাসির উদ্দিনের নেতৃত্বাধীন কমিশনের কাছে এমন দাবি জানিয়েছে সাত দলের সমন্বয়ে গঠিত বিপ্লবী গণজোট।
নির্বাচন ভবনে বৈঠক শেষে বিপ্লবী গণজোটের প্রধান সমন্বয়ক ও বাংলাদেশ গণমুক্তি পার্টির সাধারণ সম্পাদক আবদুল মোমেন সাংবাদিকদের বলেন, এক-এগারোর সরকার নিবন্ধন আইন নামে জঘন্য আইন চালু করেছিল। এ নিয়ে আমরা আন্দোলন করে আসছি। শেখ হাসিনা সরকার এসে সেই নিবন্ধন প্রক্রিয়া আরও কঠিন করেছিল। আইনে বলা হয়েছে, একটি দলকে নিবন্ধন পেতে হলে একটি কেন্দ্রীয় কমিটি, এক তৃতীয়াংশ জেলা কমিটি ও ১০০টি উপজেলা কমিটি ও প্রত্যেক কমিটির ২০০ ভোটার সমর্থক থাকতে হবে। এতে রাজনীতিকে এমন একটা কঠিন পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল যে একটা দল চালাতে মাসে কমপক্ষে ৩০ লাখ টাকা লাগবে। আমরা সেটার প্রতিবাদ করছিলাম। আজকে সে নিয়ে কথা বললাম।
তিনি আরও বলেন, আন্তর্জাতিকভাবে একটা কমিটির বা অফিসের ভিত্তিতে রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন হয়। এমনকি ভারতেও কেন্দ্রীয় অফিস ও গঠনতন্ত্রের ভিত্তিতে নিবন্ধন হয়, দেশটিতে প্রায় আড়াই হাজার দল আছে। আমেরিকাতেও একই অবস্থা। কেন্দ্রীয় কমিটি, কেন্দ্রীয় অফিস ও গঠনতন্ত্রের ভিত্তিতে দেশটিতে নিবন্ধন হয়। ব্রিটেনেও একই অবস্থা। তাদের রাজনীতি করতে অসুবিধা নেই। বাংলাদেশে এই অবস্থা করা হয়েছে একটি কারণে, যাতে করে বাংলাদেশে ভারতের একটা অঙ্গরাজ্য হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা যায়। সে উদ্দেশ্য নিয়ে আইনটা করা হয়েছিল। আমরা এটা কীভাবে রিপ্লেস করে করা যায়, ৭৮ সাল পর্যন্ত যেটা ছিল- কেন্দ্রীয় কমিটি, কেন্দ্রীয় অফিসের ভিত্তিতে নিবন্ধন দেওয়া হতো, আমরা সেটা চেয়েছি।
এই নেতা বলেন, বলা হয় নিবন্ধনের শর্ত সহজ হলে ব্যাঙের ছাতার মতো দল গড়ে ওঠবে। কিন্তু আমরা বলেছি ভোট ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে, মানুষ ভোট দিতে যেতে চায় না। তারা বিশ্বাস করে তাদের ভোট ছাড়াই কেউ না কেউ পাস হয়ে যাবে। তাই আমরা বলেছি জামানত প্রথার পরিবর্তে প্রার্থিতা ফি নির্ধারণ করার জন্য, যা অফেরতযোগ্য হবে।
আবদুল মোমেন বলেন, আমরা বলেছি প্রচারের দায়িত্ব নির্বাচন কমিশনকে নিতে হবে। ব্যক্তিগতভাবে কেউ প্রচার চালাতে পারবে না। করলে প্রার্থিতা বাতিল, পোস্টারিং ইসি করবে, একই পোস্টারে সব প্রার্থী থাকবে। একই মঞ্চে সব প্রার্থী নিয়ে সভার আয়োজন করবে ইসি। নির্বাচনে অংশগ্রহণেচ্ছু দলের মেনুফেস্টু নিয়ে একটি বই করতে হবে, হলফনামা নিয়ে একটি বই করতে হবে, যা প্রত্যেক পরিবারকে পৌঁছে দেবে। এতে প্রার্থী ও দল নিয়ে ভোটাররা সিদ্ধান্ত নিতে পারবে।
তিনি আরও বলেন, এনআইডির ভিত্তিতে ভোটার কার্ড তৈরি করতে হবে। ভোটার কার্ড জমা দিয়ে ব্যালট নেবে ভোটার। এতে একজনের ভোট আরেকজন দেওয়ার ব্যবস্থা থাকবে না। এতে সর্বোচ্চ ৯০০ কোটি টাকা ব্যয় হবে। প্রার্থীরা হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যয় করে। এতে অযোগ্য, দেশবিরোধী, লুটেরারা নির্বাচিত হয়। এ ধরনের নির্বাচন ব্যবস্থা কায়েম করলে সেটা আর থাকবে না। আমাদের প্রস্তাবগুলোর মধ্যে কোনো কোনো বিষয় পাইলটিং হিসেবে নেবে বলে জানিয়েছে কমিশন।
এ সময় বাংলাদেশের সাম্যবাদী দল, বাংলাদেশ গ্রিন পার্টি, বিপ্লবী গরিব পার্টি, বাংলাদেশ সর্বজনীন দল, পিস ফোরাম ও প্রয়াত নেতা স্মৃতি সংসদের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
ইইউডি/আরবি