ঢাকা, মঙ্গলবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

নির্বাচন ও ইসি

সংসদ ভেঙ্গে দেওয়ার সুপারিশ বিএনপি’র

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯৩৫ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৫, ২০১৭
সংসদ ভেঙ্গে দেওয়ার সুপারিশ বিএনপি’র নির্বাচন কমিশনে সংলাপ শেষে সাংবাদিকদের মুখোমুখি বিএনপি প্রতিনিধি দল। ছবি: বাংলানিউজ

ঢাকা: শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন বর্তমান সরকারের অধীনে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সম্পন্ন না করার সুপারিশ করেছে দেশের অন্যতম বৃহৎ রাজনৈতিক দল বিএনপি। একই সঙ্গে দলটি নিরপেক্ষ সহায়ক সরকারের অধীনে ভোটে বিচারিক ক্ষমতাসহ প্রতিরক্ষাবাহিনী মোতায়েন ও সংসদ ভেঙ্গে দেওয়ার সুপারিশ করেছে।

রোববার (১৫ অক্টোবর) নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে সংলাপে বসে দলটি এমন সুপারিশ করে। প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কেএম নূরুল হুদার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বৈঠকে দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নেতৃত্বে ১৫ সদস্যের প্রতিনিধি দল অংশ নেয়।



হাসিনার অধীনে নির্বাচন নয়, নিরপেক্ষ সরকার চায় বিএনপি

বেলা ১১টা থেকে আড়াই ঘণ্টার সংলাপ শেষে বিএনপি মহাসচিব সাংবাদিকদের বলেন, আমরা ২০টি সুপারিশ করেছি নির্বাচন কমিশনের কাছে। এগুলোর মধ্যে রয়েছে-দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন নয়। এজন্য নির্বাচনকালীন সহায়ক সরকারের অধীনে ভোটগ্রহণ, ভোটগ্রহণের ৯০ দিন পূর্বে সংসদ ভেঙ্গে দিয়ে নির্বাচন, সরকারকে দলগুলোর সঙ্গে কার্যকর সংলাপের উদ্যোগ গ্রহণে নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা গ্রহণ, রাজনৈতিক দলের নেতা কর্মীদের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলা প্রত্যাহার ও কারাবন্দি নেতা-কর্মীদের মুক্তি, এখন থেকেই রাজনৈতিক দলের সভা-সমাবেশসহ সকল স্বাভাবিক গণতান্ত্রিক কর্মকাণ্ড পরিচালনার অধিকার নিশ্চিতকরণ, এক-এগারো সরকারের সময় বিএনপি চেয়ারপার্সনসহ নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলা প্রত্যাহার, গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সজ্ঞায় পরিবর্তন এনে প্রতিরক্ষা বাহিনীকে অন্তর্ভুক্ত করা, প্রতিরক্ষা বাহিনী মোতায়েন করে ভোটগ্রহণ, নির্বাচনের ৬ মাস পূর্বে সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা কমিটি বাতিল করে স্থানীয় প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণে আনার সুপারিশ।

সুপারিশের মধ্যে আরো আছে, নির্বাচনকালীন সিদ্ধান্ত পুরো কমিশনের মাধ্যমে নেওয়া, নির্বাচনপূর্ব সময়ের শুরুতেই সকল মেট্রোপলিট্রন পুলিশ কমিশনার, জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, ডেপুটি পুলিশ কমিশনার, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এবং পুলিশের সকল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে পরিবর্তন করতে হবে। ২০০৮ সালের আগে যে সীমানা ছিল সেই সীমানায় নির্বাচন, ব্যালট পেপারে দৃশ্যমান জলছাপের ব্যবস্থা, আচরণ বিধি প্রতিপালনে প্রথম শ্রেণীর কর্মকর্তাদের বিচারিক ক্ষমতা প্রদান ইত্যাদি।

এছাড়া তফসিল ঘোষণার পর সভা-সমাবেশ ও পথসভার অনুমতি প্রদানের দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট রিটার্নিং কর্মকর্তা, সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তাকে প্রদান, নির্বাচন কমিশনের মেয়াদ পূর্তির ১২ মাসের মধ্যে দলের নিবন্ধন না দেওয়া, ছবিসহ ভোটার তালিকা ভোটকেন্দ্রে সরবরাহ করা, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিত ও বন্ধ গণমাধ্যম চালু, নির্বাচনের দিন মোবাইল ফোন নেটওয়ার্ক চালু, প্রতি কেন্দ্রে সিসি ক্যামেরা স্থাপন, নির্বাচনে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন বা ডিজিটাল ভোটিং মেশিন ব্যবহার না করা ও  কালো-পেশি শক্তি ব্যবহার বন্ধ করার সুপারিশও করেছে তারা।

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে বলেন, নির্বাচন কমিশন নিজেও স্বীকার করেছেন, দেশের পরিস্থিতি গণতান্ত্রিক নয়। তারা আমাদের সুপারিশগুলো বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেবেন।

তারা বলেছে, তাদের সীমাবদ্ধতা আছে, তাই নিজেরা বসে দেখবে কী করতে পারেন। তাদের যে সুযোগ আছে তা ব্যবহার করবেন।

ফখরুল বলেন, বর্তমান সরকারের যে প্রচণ্ড রকমের অগণতান্ত্রিক আচরণ তাতে খুব আশাবাদী হওয়ার কোনো কারণ আছে বলে মনে করি না। তবে আমরা আশাবাদী, অন্তত সূচনা তো হলো।

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে আইন সংস্কার, সংসদীয় আসনের সীমানা পুনর্নির্ধারণ, ভোটার তালিকা হালনাগাদসহ নানা বিষয়ে অংশীজনদের সঙ্গে সংলাপ করছে নির্বাচন কমিশন।

গত ৩১ জুলাই সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গে এবং ১৬ ও ১৭ আগস্ট গণমাধ্যমের প্রতিনিধিদের সঙ্গে সংলাপে বসেছিল ইসি। এরপর গত ২৪ আগস্ট থেকে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ শুরু করে নির্বাচন কমিশন।
 
সংলাপে আসা এ পর্যন্ত সুপারিশগুলোর মধ্যে সারাদেশে সশস্ত্র বাহিনী মোতায়েন, সেনা মোতায়েন, বর্তমান সংসদে প্রতিনিধিত্বকারী দলগুলোকে নিয়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন, প্রতি ভোটকেন্দ্রে সিসি টিভি/ক্যামেরা স্থাপন, নবম সংসদে প্রতিনিধিত্বকারী দলগুলোকে নিয়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন, দশম সংসদে প্রতিনিধিত্বকারী দলগুলোকে নিয়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন, ‘না ভোট’ প্রবর্তন, প্রবাসে ভোটারধিকার প্রয়োগ, জাতীয় পরিষদ গঠন, নির্বাচনকালীন অস্থায়ী সরকার গঠন, নির্দলীয় নির্বাচনকালীন সরকার, নির্বাচনের সময় সংসদ ভেঙ্গে দেওয়া, রাজনৈতিক মামলা প্রত্যাহার, নির্বাচনকালীন সময়ে ইসির অধীনে জনপ্রশাসন ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা, দলের নির্বাহী কমিটিতে বাধ্যতামূলকভাবে ৩৩ শতাংশ নারী সদস্য রাখান বিধান তুলে নেওয়া অন্যতম।

আগামী ১৯ অক্টোবর বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের (নৌকা) সঙ্গে বসবে নির্বাচন আয়োজনকারী কর্তৃপক্ষ।

এবারের সংলাপ শেষ হচ্ছে আগামী ২৪ অক্টোবর। এক্ষেত্রে ২২ অক্টোবর নির্বাচন পর্যবেক্ষকদের সঙ্গে, ২৩ অক্টোবর নারী নেত্রীদের সংলাপে বসছে নির্বাচন কমিশন।

বাংলাদেশ সময়: ১৫২০ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৫, ২০১৭
ইইউডি/জেডএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।