ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

নির্বাচন ও ইসি

উপার্জনে এগিয়ে সরওয়ার-সাদিক, শিক্ষায় এগিয়ে ৫ প্রার্থী

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৬০৮ ঘণ্টা, জুলাই ৪, ২০১৮
উপার্জনে এগিয়ে সরওয়ার-সাদিক, শিক্ষায় এগিয়ে ৫ প্রার্থী বাম থেকে সাদিক আব্দুল্লাহ, মজিবর রহমান, ওবাইদুর রহমান, আবুল কালাম আজাদ ও মনীষা চক্রবর্তী

বরিশাল: বরিশাল সিটি করপোরেশন (বিসিসি) নির্বাচনে আট মেয়র প্রার্থীর মধ্যে দুইজনের মনোনয়নপত্র বাতিল হয়েছে। ফলে ছয়জন মেয়রপ্রার্থীর তালিকা এখন পর্যন্ত চুড়ান্ত রেখেছে নির্বাচন কমিশন।

রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে মনোনয়নপত্রের সঙ্গে জমা দেওয়া হলফনামায় প্রার্থীদের উল্লেখ করা তথ্যানুযায়ী, ছয় মেয়র প্রার্থীর মধ্যে বছরে সবচেয়ে বেশি আয় করেন বিএনপির প্রার্থী মো. মজিবর রহমান সরওয়ার। পাশাপাশি তিনি সব প্রার্থীর থেকে সম্পদশালীও।

উপার্জনের দিক থেকে এরপরের স্থানেই রয়েছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ। আর এদের উভয়ের পেশাই ব্যবসা।  

এদিকে ফৌজদারী মামলায় কোনো প্রার্থী অভিযুক্ত না থাকলেও শিক্ষায় এগিয়ে রয়েছেন অধ্যক্ষ ওবাইদুর রহমানসহ (মাহবুব) পাঁচ প্রার্থী, সেক্ষেত্রে পিছিয়ে রয়েছেন জনপ্রিয়তায় যুব সমাজের মধ্যমনি আওয়ামী লীগের প্রার্থী সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ।  

২০০৩ সালে বিসিসি প্রথম পরিষদের নির্বাচিত সাবেক মেয়র, বরিশাল সদর আসনের চারবারের সাবেক এমপি ও সাবেক চিফ হুইপ মো. মজিবর রহমান সরওয়ার বর্তমানে কেন্দ্রীয় বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব ও বরিশাল মহানগর বিএনপির সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন।

বিএনপির দলীয় এই মেয়র প্রার্থী তার হলফনামায় সর্বোচ্চ শিক্ষাগত যোগ্যতা এলএলবি পাস উল্লেখ করেছেন। তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময় দায়ের হওয়া ১৮টি মামলার মধ্যে পাঁচটি নিষ্পত্তি হয়ে গেছে। যেগুলো থেকে তিনি অব্যাহতি পেয়েছেন। যদিও এখনও ১৩টি মামলা আদালতে বিচারাধীন রয়েছে।  

ব্যবসায়ী সরওয়ারের ব্যবসার পুঁজি বা মূলধনের জের ১ কোটি ৫ লাখ টাকা। তিনি কৃষিখাত, বাড়ি, এপার্টমেন্ট, দোকান বা অন্য ভাড়া, ব্যবসা, ব্যাংক ইন্টারেস্ট আর সম্মানী থেকে বছরে আয় দেখিয়েছেন ৪৮ লাখ ৭০ হাজার ৯৮৮ টাকা। এর মধ্যে কৃষিখাত থেকে ১ লাখ ২৬ হাজার টাকা, ভাড়া থেকে ১২ লাখ ৩ হাজার ৬শ’ টাকা, ব্যবসা থেকে ১০ লাখ, ব্যাংক ইন্টারেস্ট ১ লাখ ৮১ হাজার ৩৮৮ টাকা এবং বছরে চাকরি/সম্মানী ভাতা পান ২৪ লাখ টাকা।  

তার ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমা অর্থের পরিমাণ ১০ লাখ টাকা এবং বন্ড, ঋণপত্র, স্টক একচেঞ্জে তালিকাভুক্ত ও তালিকাভুক্ত নয় এমন কোম্পানি শেয়ার রয়েছে ৮৫ লাখ টাকার। সরওয়ারের দুটি টয়োটা গাড়ি ও একটি জিপসহ ৮২ লাখ ৫০ হাজার টাকার তিনটি গাড়ি আছে। এছাড়া ১৩ লাখ ৩৫ হাজার ৫শ’ টাকার আসবাবপত্র ও ইলেকট্রনিকস সামগ্রী, ৬০ হাজার টাকা দামের একটি জিমনেশিয়াম মেশিন এবং ৫০ তোলা সোনা রয়েছে।

বিএনপির প্রভাবশালী এই নেতার ১ লাখ ৪০ হাজার টাকা মূল্যের তিনটি আগ্নেয়াস্ত্রের মধ্যে পয়েন্ট ৩২ বোরের একটি রিভলভার, ৭ এমএম রাইফেল একটি এবং পয়েন্ট ২২ বোরের একটি রাইফেল রয়েছে।  

স্থাবর সম্পদের মধ্যে সরওয়ারের নামে ১৬ লাখ ৯ হাজার ৪২৬ টাকা মূল্যের ৪ একর ৬৩ শতাংশ কৃষি জমি, ৩ কোটি ১৪ লাখ ১৮ হাজার টাকা মূল্যের তিনটি ফ্ল্যাট এবং একটি টিনশেড বাড়ি আছে। ব্যাংক কিংবা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে কোনো ঋণ নেননি সরওয়ার।  

সাবেক মেয়র ও সংসদ সদস্য শওকত হোসেন হিরনের মৃত্যুর পর বরিশাল মহানগর আওয়ামী লীগকে সু-সংগঠিত করতে গিয়ে জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ। যুবরত্ন খেতাব পাওয়া সাদিক বর্তমানে বরিশাল মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক। তার বিরুদ্ধে কোনো মামলা নেই।

সাদিক আবদুল্লাহ হলফনামায় নিজেকে স্ব-শিক্ষায় শিক্ষিত বলে উল্লেখ করেছেন এবং পেশা উল্লেখ করেছেন ব্যবসা। হলফনামা অনুযায়ী ঢাকার কলাবাগান এলাকার কান্তা কর্পোরেশন প্রাইভেট লিমিটেডের পরিচালক তিনি।  

বাসা ভাড়া, ব্যবসা আর সম্মানী থেকে বছরে তার মোট আয় ৮ লাখ ৩১ হাজার ৪শ’ টাকা। যার মধ্যে ভাড়া থেকে ২ লাখ ১৬ হাজার টাকা, ব্যবসা থেকে ৪ লাখ ৯৫ হাজার ৪শ’ টাকা এবং বছরে চাকরি থেকে ১ লাখ ২০ হাজার টাকা আয় দেখিয়েছেন তিনি।

এদিকে সাদিকের নগদ অর্থ আছে ৬ লাখ ৮১ হাজার টাকা, পাশাপাশি রয়েছে আরও ২ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র। স্বর্ণালঙ্কার কিংবা আগ্নেয়াস্ত্র না থাকা সাদিকের রয়েছে রিকন্ডিশন একটি মাইক্রোবাস। পাশাপাশি তার আসবাবপত্রের বিবরণীতে খাট, আলমারি, সোফা ও ডাইনিং টেবিলের কথা উল্লেখ করা হয়েছে।  

স্থাবর সম্পদের বিবরণে ঢাকার পূর্বাচলে রাজউকের একটি আবাসিক প্লট এবং গুলশানের নিকেতনে একটি আবাসিক ফ্ল্যাটের কথা উল্লেখ করলেও হলফনামায় উল্লেখ না থাকায় মূল্য জানা যায়নি। তবে কোনো ব্যাংক কিংবা আর্থিক প্রতিষ্ঠানে সাদিকের ঋণ নেই।  

ছয় মেয়র প্রার্থীর মধ্যে সর্বকনিষ্ঠ  ডা. মনিষা চক্রবর্তীর বয়স ২৮ বছর। সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্ট বরিশাল জেলার সাবেক সভাপতি ডা. মনিষা চক্রবর্তী বর্তমানে জেলা বাসদের সদস্য সচিব। বাসদের এই প্রার্থীর বিরুদ্ধে বিশেষ ক্ষমতা আইনের একটিসহ দু’টি মামলা আদালতে বিচারাধীন রয়েছে। তিনি হলফনামায় পেশায় একজন চিকিৎসক উল্লেখ করলেও জনসেবা হিসেবে নেওয়ায় এই খাতে তার কোনো আয় উল্লেখ করেননি। ডা. মনিষা চক্রবর্তীর নগদ আছে দেড় লাখ টাকা। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমা রয়েছে ২ লাখ ৯৫ হাজার ৪শ’ টাকা। এছাড়া ৫ ভরি স্বর্ণালঙ্কার ও ৫ লাখ টাকার পারিবারিক সঞ্চয়পত্র আছে তার। কৃষি-অকৃষি জমি না থাকা মনিষার কোনো ব্যাংক ঋণ কিংবা দেনা নেই।

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মনোনীত মেয়র প্রার্থী দাওরা হাদীস (মাস্টার্স) পাস ওবাইদুর রহমান (মাহবুব) বরিশাল নগরের আমানতগঞ্জ এলাকার মাহমুদিয়া মাদ্রাসার অধ্যক্ষ। মেয়র প্রার্থীদের মধ্যে জ্যেষ্ঠ এই প্রার্থীর বিরুদ্ধেও নেই কোনো ফৌজদারী মামলা। মাদ্রাসায় শিক্ষকতা বাবদ বছরে ২ লাখ ১৬ হাজার ৬শ’ টাকা বেতন পান তিনি। আছে ৬ শতাংশ জমি ও টিনশেড ঘর। রয়েছে ৮ তোলা স্বর্ণালঙ্কার, দুইটি ফ্রিজ, ছয়টি খাট, সোফাসেট একটি, ওয়ারড্রপ একটি ও একটি মোটরসাইকেল। তবে এর বাইরে ওবাইদুর রহমানের রয়েছে একটি বন্দুক। ব্যাংক কিংবা কোনো আর্থিক প্রতিষ্ঠানে তার দেনা নেই।  

এ.কে.এম মাহবুব আলম খেলাফত মজলিসের বরিশাল মহানগর কমিটির সাধারণ সম্পাদক। সদ্য তিনি একটি বেসরকারি কলেজ থেকে সহকারী অধ্যাপক পদে অবসর গ্রহণ করেছেন। খেলাফত মজলিসের এই মেয়র প্রার্থীর বিরুদ্ধে কোনো ফৌজদারী মামলা নেই। পাশাপাশি কোনো ব্যাংক অথবা আর্থিক প্রতিষ্ঠানে দেনাও নেই।  চাকরিকালীন বছরে ভাতা পেয়েছেন ৪ লাখ ৪৩ হাজার ৭৫০ টাকা। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমা করা অর্থের পরিমাণ ৬ লাখ ৩৪ হাজার ৭৫০ টাকা। স্ত্রীর নামে আছে ৮ ভরি স্বর্ণালঙ্কার। ৭৭ হাজার টাকার ইলেকট্রনিকস সামগ্রী রয়েছে তার। যৌথ মালিকানায় তার ৬ একর কৃষি এবং ৯ শতাংশ অকৃষি জমি রয়েছে, পাশাপাশি যৌথ মালিকানায় রয়েছে আধাপাকা একটি টিনশেড ঘর।  

আবুল কালাম আজাদ বরিশাল জেলা কমিউনিস্ট পার্টির সভাপতি। হলফনামা অনুযায়ী বিএ এলএলবি পাস আবুল কালাম আজাদ একজন ভূমিহীন মানুষ। তার বিরুদ্ধে ফৌজদারী মামলা নেই। পেশায় আইনজীবী এই প্রার্থীর বছরে আয় ২ লাখ ৬০ হাজার টাকা। অস্থাবর সম্পদ বলতে নগদ জমা আছে ১১ লাখ ২০ হাজার টাকার বাইরে টিভি, ফ্রিজ, ওভেন, খাট, সোফা, আলমারি ছাড়াও আর ৭ ভরি স্বর্ণালঙ্কার রয়েছে তার। কোনো ব্যাংক কিংবা আর্থিক প্রতিষ্ঠানে দেনা নেই আবুল কালাম আজাদের।

বাংলাদেশ সময়: ১২০৬ ঘণ্টা, জুলাই ০৪, ২০১৮
এমএস/আরআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।