ঢাকা, বুধবার, ১৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ০১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

নির্বাচন ও ইসি

সিসিকে আরিফেই শেষ হাসি!

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০৩৮ ঘণ্টা, জুলাই ৩০, ২০১৮
সিসিকে আরিফেই শেষ হাসি!

সিলেট: নানা অনিয়মের অভিযোগের পরও সিলেট সিটি করপোরেশন (সিসিক) নির্বাচনে দ্বিতীয়বারের মতো মেয়র পদে বসতে যাচ্ছেন আরিফুল হক চৌধুরী। 

দু’টি কেন্দ্রে ভোট গ্রহণ স্থগিত হওয়ায় শেষ মুহূর্তে তাকে বেসরকারিভাবে বিজয়ী ঘোষণা করতে পারেননি রিটার্নিং কর্মকর্তা। ফলে মেয়র পদে জয়ের বন্দরে পৌঁছেও শেষ হাসির অপেক্ষায় থাকতে হলো আরিফুল হক চৌধুরীকে।

সিলেট সিটি করপোরেশনের ২৭নং ওয়ার্ডের ১৩৪টি কেন্দ্রের মধ্যে ১৩২টির ঘোষিত ফলাফল অনুযায়ী আরিফুল হক চৌধুরী ধানের শীষ প্রতীকে পেয়েছেন ৯০ হাজার ৪৯৬ ভোট। আওয়ামী লীগ প্রার্থী বদরউদ্দিন আহমদ কামরান নৌকা প্রতীকে পেয়েছেন ৮৫ হাজার ৮৭০ ভোট। সর্বপ্রথম ঘোষিত দু’টি ইভিএমে কেন্দ্রের ফলাফেলেও আরিফুল হক তার প্রতিদ্বন্দ্বি কামরানের চেয়ে এগিয়ে যান।

>>আরও পড়ুন...সিলেটে এগিয়ে গেলেন ধানের শীষের আরিফুল 

সিসিকে মোট ১৩৪ কেন্দ্রের মধ্যে বিশৃঙ্খলার জন্য দুই কেন্দ্রের ভোট স্থগিত করা হয়েছে। ওই দুটি হলো গাজি বুরহান উদ্দিন রহ. মাদরাসা ও হবিনন্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্র। এ দুই কেন্দ্রের মোট ভোট ৪৭৮৭। চার হাজার ৬২৬ ভোটে এগিয়ে থাকা আরিফুল হকের প্রাপ্ত ভোটের সঙ্গে স্থগিত কেন্দ্রের ভোটের ব্যবধান ১৬১ ভোট।

যে কারণে সিলেট সিটি নির্বাচনে রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. আলীমুজ্জমান ফলাফলে আরিফুল হককে বিজয়ী ঘোষণা না করে বলেন, নির্বাচন কমিশনের ৩৭ এর ২ উপধারায় একের অধিক কেন্দ্র থাকলে নির্বাচন কমিশনকে অবহিত করতে হবে। নির্বাচন কমিশন সন্তুষ্ট না হলে স্থগিত কেন্দ্রে পুনরায় ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। বাস্তবতার নিরিখে এ দুই কেন্দ্রের ভোটের পার্থক্য আরিফের জন্য এখন আনুষ্ঠানিকতা মাত্র।

নগরের উপশহরে আবুল মাল আবদুল মুহিত ক্রীড়া কমপ্লেক্সে স্থাপিত রিটার্নিং কর্মকর্তার অস্থায়ী কার্যালয়ে থেকে রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. আলীমুজ্জামান নির্বাচনের ফল ঘোষণা করেন।

নির্বাচনে অন্যান্য মেয়র প্রার্থীর মধ্যে নাগরিক ফোরামের ব্যানারে টেবিল ঘড়ি মার্কায় জামায়াত নেতা অ্যাডভোকেট এহসানুল মাহবুব জুবায়ের পেয়েছেন ১০ হাজার ৯৫৪ ভোট। সিপিবি-বাসদ মনোনীত মই মার্কার প্রার্থী পেয়েছেন ৯০০ ভোট, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ মনোনীত হাতপাখা প্রতীকে ডা. মোয়াজ্জেম হোসেন পেয়েছেন দুই হাজার ১৯৫ ভোট, হরিণ মার্কায় স্বতন্ত্র প্রার্থী এহছানুল হক তাহের পেয়েছেন ২৯২ ভোট এবং বাস প্রতীকে বেদরুজ্জামান সেলিম পেয়েছেন ৫৮২ ভোট। যদিও বদরুজ্জামান সেলিম নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন।

সোমবার (৩০ জুলাই) কেন্দ্র দখল, জাল ভোট, ব্যালট পেপার ছিনতাইসহ নানা ঘটনার মধ্য দিয়ে ভোটগ্রহণ সম্পন্ন হয়েছে। বিভিন্ন কেন্দ্রে অনিয়মের খবর থাকলেও বড় ধরনের কোনো সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেনি।

ভোট গ্রহণ শেষে এদিন বিকেল সংবাদ সম্মেলন করে কারচুপির অভিযোগ করে আরিফুল হক চৌধুরী বলেন, নগরবাসীর সম্মানে আমি নির্বাচন বয়কট না করলেও এ ধরনের প্রহসনের নির্বাচন চাই না। কিন্তু যারা শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের কথা বলছে, তারাই ভোট ডাকাতি করেছে। শেষ পর্যন্ত সম্পন্ন ১৩২ কেন্দ্রের ফল পেয়ে সুখবরই শুনলেন বিএনপি আরিফ।

প্রথম দিকে কামরান এগিয়ে থাকলেও ভোটে শেষ হাসি আরিফেরই। কিন্তু আরিফের এই বিজয় বন্দরে পৌঁছা মেনে নিতে পারেনি আওয়ামী লীগ। তাই রাতে রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে ভোট কারচুপির অভিযোগ এনে অভিযোগ করেছেন আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থী বদর উদ্দিন আহমদ কামরানের প্রধান নির্বাচনী কর্মকর্তা দলের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ।

এর আগে সকাল ৮টায় সিলেট সরকারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে ভোট দিয়ে আওয়ামী লীগের প্রার্থী কামরান ভোট সুষ্ঠু হচ্ছে দাবি করে জয় পাওয়ার প্রত্যাশা করেন। তবে দিনভর কারচুপির অভিযোগের পর বিকেল ৪টায় ভোটগ্রহণ শেষ হওয়ার পরপরই অনিয়মের অভিযোগ তুলে সংবাদ সম্মেলন করেন বিএনপির আরিফুল হক।

এদিকে, ফল ঘোষণা করার শেষ পর্যায়ে রাত ১১টার দিকে  নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগ এনে রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী বদর উদ্দিন আহমদ কামরানের পক্ষে লিখিত অভিযোগ করেন।

লিখিত অভিযোগে বলা হয়, স্থানীয়ভাবে আওয়ামী লীগের এজেন্টদের মাধ্যমে প্রাপ্ত ফলাফলের সঙ্গে নির্বাচন কমিশনের ঘোষিত ফলাফলে ১০ থেকে ১৫ হাজার ভোটের ব্যবধান রয়েছে। এতে করে নির্বাচনের ফলাফল না ঘোষণা করে পুনঃগণনার মাধ্যমে ফলাফল ঘোষণার আবেদন করা হয়। লিখিত আবেদনটি রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে দিয়ে ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা।

সিলেট সিটিতে মোট ভোটার ৩ লাখ ২১ হাজার ৭৩২ জন। এর মধ্যে পুরুষ এক লাখ ৭১ হাজার ৪৪৪ জন ও নারী এক লাখ ৫০ হাজার ২৮৮ জন। এই ভোটারের বিপরীতে ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছেন এক লাখ ৯৮ হাজার ৬৫৭ জন। মোট ৬২ শতাংশ ভোট পড়েছে। নির্বাচনে প্রাপ্ত মোট ভোট এক লাখ ৯১ হাজার ২৮৯টি। বাতিল ভোট রয়েছে ৭ হাজার ৩৬৭টি।

বাংলাদেশ সময়: ০২৩৭ ঘণ্টা, জুলাই ৩১, ২০১৮
এনইউ/এনটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।