ঢাকা, রবিবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

নির্বাচন ও ইসি

১০ বছরে আয়-সম্পদ বেড়েছে রাজশাহীর ৫ এমপির

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯০২ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৫, ২০১৮
১০ বছরে আয়-সম্পদ বেড়েছে রাজশাহীর ৫ এমপির ...

রাজশাহী: ক্ষণ গণনা শুরু হয়ে গেছে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের। এরই মধ্যে যাচাই-বাছাইও শেষ হয়েছে। প্রতীক হাতে ক’দিন বাদেই প্রচারে নামতে যাচ্ছেন প্রার্থীরা। তবে এর আগেই নির্বাচন কমিশনে দাখিলকৃত প্রার্থীদের ‘হলফনামা’ আলোচনা আর সামালোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে। কার সম্পদ বেড়েছে, কার কমেছে। আর ক্ষমতায় গিয়ে কে অঢেল বিত্ত-বৈভবের মালিক হয়েছেন তা নিয়ে সকাল-বিকেল প্রতিটি পাড়া-মহল্লার স্টলগুলোতে চায়ের কাপে ঝড় তুলছেন সাধারণ ভোটাররা।

নির্বাচনী সেই হিসেব-নিকেশের খাতায় উঠে এসেছে রাজশাহীর ছয় আসনের ক্ষমতাসীন দলের সংসদ সদস্যদের নামগুলোও। আর হলফনামা বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোটযুদ্ধে অবতীর্ণ হতে যাওয়া রাজশাহীর পাঁচ এমপিরও আয় ও সম্পদ বেড়েছে।

এই দশ বছরে তাদের প্রত্যেকেরই বার্ষিক আয় বেড়েছে প্রায় দ্বিগুণ। এর মধ্যে দুই/তিনজন সংসদ সদস্যের আয় ও সম্পদ কয়েক গুণ পর্যন্ত বেড়েছে। আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নিজেদের দেওয়া হলফনামা এবং ২০০৮ ও ২০১৩ সালের নির্বাচনে দেওয়া হলফনামা তুলনা করে নিশ্চিত হওয়া গেছে এসব তথ্য।  

রাজশাহী-১ (গোদাগাড়ী-তানোর): হলফনামায় (ফরম-২০) দেওয়া তথ্যানুযায়ী এই আসনের সংসদ সদস্য সাবেক শিল্প প্রতিমন্ত্রী ওমর ফারুক চৌধুরীর আয় এবং সম্পদ বেড়েছে কয়েক গুণ। তার বর্তমান বার্ষিক আয় দেখানো হয়েছে প্রায় ৫৩ লাখ ৩০ হাজার ২০১ টাকা। গতবার নির্বাচনের আগে এর পরিমাণ ছিল ৮ লাখ ১৮ হাজার ৩৭২ টাকা। আর বেড়েছে বার্ষিক ব্যয়ও। এবার বার্ষিক ব্যয় দেখানো হয়েছে ১৫ লাখ ২৪ হাজার ৯৫২ টাকা। সঞ্চয়পত্র রয়েছে ২ লাখ টাকার।

রাজশাহী-২ (সদর): হলফনামায় দেওয়া আয়কর বিবরণীতে পাওয়া তথ্যানুযায়ী এই আসনের সংসদ সদস্য ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশার সম্পদ এবং আয় দু’টিই বেড়েছে। বাদশার এবার বার্ষিক আয় দেখানো হয়েছে ৩৯ লাখ। এর মধ্যে সংসদ সদস্য হিসেবে পারিতোষিক ৬ লাখ ৬০ হাজার টাকা, সোনালী সংবাদ থেকে পারিতোষিক ১ লাখ ২০ হাজার টাকা, মহানগর প্রিন্টিং প্রেস থেকে ৩০ লাখ টাকা এবং সোনালী সংবাদ থেকে আয় ১ লাখ ২০ হাজার টাকা দেখানো হয়েছে। এর আগে ২০১৩ সালে তার আয় দেখানো হয়েছিল ৯ লাখ ২৩ হাজার ৭৭২ টাকা। তারও পাঁচ বছর আগে ২০০৮ সালে তার বার্ষিক আয় ছিল ২ লাখ ৭৯ হাজার টাকা।  

স্থাবর সম্পদ হিসেবে স্ত্রীর নামে রাজশাহী মহানগরের গুড়িপাড়ায় পাঁচ কাঠা জমি, নিজ নামে হড়গ্রাম বাজারের খন্দকার মার্কেটের অংশ এবং ঢাকার উত্তরা তৃতীয় প্রকল্পে পাঁচ কাঠা জমি দেখানো হয়েছে। অস্থাবর সম্পদ হিসেবে একটি টয়োটা করোলা ও একটি প্রাডো জিপ দেখানো হয়েছে এ সংসদ সদস্যের হলফনামায়।  

রাজশাহী-৩ (পবা-মোহনপুর): হলফনামায় দেওয়া তথ্যানুযায়ী এই আসনের সংসদ সদস্য আয়েন উদ্দিনের আয়ও বেড়েছে। তার বর্তমান বার্ষিক আয় দেখানো হয়েছে ৩২ লাখ ৮৫ হাজার ৫০৬ টাকা। পাঁচ বছর আগে তার বার্ষিক আয় ছিল মাত্র ২ লাখ ৭৫ হাজার টাকা। নিজ নামে নগদ ৩ লাখ টাকা, স্ত্রীর নামে ১ লাখ টাকা এবং ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমাকৃত অর্থের পরিমাণ দেওয়া হয়েছে ৪৩ লাখ ৮২ হাজার ৯২২ টাকা। সঞ্চয়পত্র রয়েছে ১৫ লাখ টাকার। স্থাবর সম্পত্তি হিসেবে ঢাকায় ৩ কাঠা জমি ও স্ত্রীর নামে ফ্লাট দেখানো হয়েছে।

রাজশাহী-৪ (বাগমারা): হলফনামায় দেওয়া তথ্যানুযায়ী এই আসনের সংসদ সদস্য এনামুল হকের বার্ষিক আয় দেখানো হয়েছে ৪৯ লাখ টাকা। কিন্তু ২০১৪ সালের নির্বাচনে ছিল ৫০ লাখ টাকা। ২০০৮ সালের নির্বাচনে ছিল ২০ লাখ টাকা। অস্থাবর সম্পত্তি হিসেবে নগদ ৩৬ লাখ ৭৬ হাজার ৫৯৮ টাকা, স্ত্রীর নামে ১ কোটি ১৩ লাখ ৭৩ হাজার ৩৫৯ টাকা রয়েছে। নিজ নামে সাধারণ শেয়ার রয়েছে ৪ কোটি ৬৬ লাখ ৫০ হাজার টাকার এবং স্ত্রীর নামে আছে ৭ কোটি ৬৭ লাখ ১০ হাজার টাকার শেয়ার। নিজ নামে দু’টি টয়োটা হার্ড জিপ এবং স্ত্রীর নামে একটি টয়োটা জিপ দেখানো হয়েছে। নিজ নামে এবং স্ত্রীর নামে উপহারের ৪০ তোলা স্বর্ণ রয়েছে।

রাজশাহী-৬ (বাঘা-চারঘাট): হলফনামায় দেওয়া তথ্যানুযায়ী এই আসনের সংসদ সদস্য বর্তমান পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলমের বার্ষিক আয় ২ কোটি ৮৩ লাখ ১১ হাজার ৮০৮ টাকা। যা পাঁচ বছর আগের তুলনায় বেড়েছে তিনগুণের বেশি। গত নির্বাচনে তার আয় দেখানো হয়েছিল ৯০ লাখ ২০ হাজার ৬৪৬ টাকা। ২০০৮ সালে যা ছিল ৯৭ লাখ ৭৩ হাজার ৯৪৯ টাকা। অস্থাবর সম্পদ হিসেবে নিজ নামে ৬ কোটি ৭৮ লাখ ৯ হাজার ৭০৬ টাকা, স্ত্রীর নামে ২ কোটি ৬২ লাখ ৯৯ হাজার ১৪৬ টাকা দেখানো হয়েছে। নিজ নামে ১০ লাখ টাকা ও স্ত্রীর নামে ৯০ লাখ ৪৫০ টাকার সঞ্চয়পত্র রয়েছে।  

রাজশাহীর ছয়টি আসনে এবার মোট ৫৩ জন মনোনয়নপত্র দাখিল করেন। এদের মধ্যে পাঁচজনই আছেন বর্তমান এমপি। এই পাঁচজনের মধ্যে চারজন এর আগে দু’বার করে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। পাঁচজনের মধ্যে আবার তিনজনই ২০১৩ সালে অনুষ্ঠিত দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন।

এদিকে, নির্বাচন কমিশন কর্তৃক ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী বৈধ প্রার্থীরা আগামী ৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত তাদের মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করতে পারবেন। পরদিন ১০ ডিসেম্বর প্রতীক বরাদ্দ করা হবে। প্রার্থীরা আগামী ১১ ডিসেম্বর থেকে প্রচারে নামতে পারবেন। আর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণ করা হবে ৩০ ডিসেম্বর।  

বাংলাদেশ সময়: ১৫৪২ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০৫, ২০১৮
এসএস/এসএইচএস/আরবি/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।