একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনের (ইভিএম) ব্যবহার না করা, প্রশাসনকে ইসির অধীনে নিয়ে আসাসহ বেশ কিছু দাবিতে কমিশন বৈঠকে নোট অব ডিসেন্ট দিয়ে সভা বর্জন করেছিলেন মাহবুব তালুকদার। তিনি কমিশন বৈঠকে দু’বার নোট অব ডিসেন্ট দিয়ে বৈঠক বর্জন করেন।
তার বক্তব্যের পর গণমাধ্যমে মাহবুব তালুকদার অসত্য কথা বলেছেন, সিইসির এমন মন্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে জ্যেষ্ঠ এ নির্বাচন কমিশনার গণমাধ্যমকে তার কক্ষে ডেকে নিয়ে লিখিত আকারে ‘সিইসি’র বক্তব্যের কঠোর প্রতিবাদ জানান’।
গত ১২ ডিসেম্বরও লিখিত বক্তব্যে গণমাধ্যমকে তিনি বলেন, ‘জাতীয় নির্বাচনে ক্রমবর্ধমান সহিংসতা ও সন্ত্রাসের ঘটনায় আমি গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। ’
সবশেষ ৩০ ডিসেম্বর ভোটের দিনও ভোটকেন্দ্র পর্যবেক্ষণের পর গণমাধ্যমে বলেছেন- বিরোধী দলগুলোর প্রার্থীর এজেন্টকে ভোটকেন্দ্রে দেখতে তিনি পাননি।
এভাবে গণমাধ্যমে কথা বলে বারবার নিজেকে টক অব দ্যা কান্ট্রিতে পরিণত করা মাহবুব তালুকদার পুরোই উল্টো কথা বললেন ভোটের পাঁচদিনের মাথায়।
বৃহস্পতিবার (৩ জানুয়ারি) নির্বাচন ভবনে ‘সফল’ নির্বাচনের পর পিঠা উৎসব পূর্ববর্তী ‘ধন্যবাদ জ্ঞাপন অনুষ্ঠানে’ অংশ নিয়ে মাহবুব তালুকদার যেন পুরোই উল্টে গেলেন।
ভোল পাল্টে তিনি বলেন, ‘আমি আমার জীবন প্রারম্ভে যখন সরকারি চাকরিতে আসি, তখন বঙ্গবভবনে পাঁচ বছর সময় কাটিয়েছিলাম। চারজন রাষ্ট্রপতির সঙ্গে আমরা সরাসরি কাজ করার সুযোগ হয়েছে। সেটা ১৯৭২ থেকে ১৯৭৬ সাল পর্যন্ত। আর জীবনের শেষ পর্যায়ের এসে প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ চারজন নির্বাচন কমিশনারের সঙ্গে আমার আবার কাজ করার সুযোগ হয়েছে। সেজন্য আমি মনে করি, জীবনের প্রথম আমলা হিসেবে কাজ করা এবং জীবনের শেষ প্রান্তে এসে এই আর পাঁচ বছর আমার জীবনে গৌরব গাঁথা হয়ে থাকবে। ’
উপস্থিত সবার উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ‘আমাদের নির্বাচনের কোনো ধারাবাহিকতা নেই কিংবা ছিল না। আমরা কখনো তত্ত্বাবধায়কর সরকারের অধীনে নির্বাচন করেছি। কখনো সেনা সমর্থিত সরকারের অধীনে নির্বাচন করেছি। কখনো নির্বাচন করেছি দলীয় সরকারের অধীনে। কিন্তু তা অংশগ্রহণমূলক হয়নি। এই প্রথম একটা অংশীদারমূলক অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন আমরা জাতিকে উপহার দিতে পেরেছি। আমি মনে করি এ নির্বাচন বাংলাদেশের নির্বাচনের ইতিহাসে একটা ঐতিহ্য সৃষ্টি করবে। এই নির্বাচন ধরেই পরবর্তী ইতিহাসে যে নির্বাচনের ধারা আসবে, সেটা পরবর্তী সময়ে হয়তো ইতিহাসের পাতায় লিপিবদ্ধ থাকবে। ’
‘...এখানে এসে এই বিশাল কর্মকাণ্ড দেখে আমার জীবনের একটা বিশাল অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করতে পেরেছি। এবং কী নিরলস প্রচেষ্টায় আপনারা এ নির্বাচনটা আপনারা সফলদায়ক করেছেন, সর্বাঙ্গীনভাবে সফল করেছেন, এটা আমি যদি প্রত্যক্ষভাবে না থাকতাম, তাহলে আমি দেখতে পারতাম না। বুঝতে পারতাম না। ’
‘বিশেষ করে আমি লক্ষ্য করেছি। এ বিশাল কর্মযজ্ঞের যিনি কেন্দ্রবিন্দু, আমাদের নির্বাচন কমিশনের সচিব এবং তার সঙ্গে এখানে যারা পরবর্তী নির্বাচন সৈনিক ছিলেন, অতিরিক্ত সচিব, যুগ্ম সচিব, উপ-সচিব এবং অন্যান্য যারা ছিলেন, তারা কি নিরলস প্রচেষ্টার মাধ্যমে নির্বাচনকে সফল করেছেন, এ অভিজ্ঞাতাও আমার জন্য অনেক বিশাল এক অভিজ্ঞতা সঞ্চার হয়ে থাকবে। ’
‘আমি বিশেষভাবে ধন্যবাদ জানাতে চাই প্রধান নির্বাচন কমিশনারকে। তিনি একজন মুক্তিযোদ্ধা এবং যোদ্ধার মতই তিনি এ বিশাল কর্মযজ্ঞে সবাইকে নেতৃত্ব দিয়েছেন। অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার যাদের সঙ্গে আমার প্রতিদিন দেখা হয় এবং এটা একটা আমি বলবো অপরিসীম অনুগ্রহ আমি যাদের সঙ্গে দুই বছরের কাছাকাছি সময় পার করেছি, আরো তিন বছর কাজ করতে পারবো আশাকরি এবং তাদের সঙ্গে আমার যে সম্পর্ক, এ সম্পর্ক এতো নীবিড়, এটি কর্মক্ষেত্রে কখনো হয়নি। হওয়া সম্ভব না। ...’
মাহবুব তালুকদার সম্পর্কিত আরও খবর:
৪ বার্তা দিলেন মাহবুব তালুকদার
সিইসির মন্তব্যের কঠোর প্রতিবাদ জানালেন মাহবুব তালুকদার
লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নেই, বললেন মাহবুব তালুকদার
পুলিশের কঠোর সমালোচনায় মাহবুব তালুকদার
ফের নির্বাচন কমিশন সভা বর্জন করলেন মাহবুব তালুকদার
অপমানিত হয়েছি: মাহবুব তালুকদার
‘নোট অব ডিসেন্ট’ দিয়ে ইভিএম সভা বর্জন ইসি মাহবুবের
বাংলাদেশ সময়: ১৯২২ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০৩, ২০১৮
ইইউডি/এসএইচ