নির্বাচনে বিএনপি’র না আসা, জাতীয় পার্টির আওয়ামী লীগ প্রার্থীকে সমর্থন দিয়ে সরে যাওয়া, বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় মেয়র পদে আওয়ামী লীগ প্রার্থী ইকরামুল হক টিটুর নির্বাচিত হওয়া-এসব কোনো কিছুর মধ্যেই ছিল না ভোটের চিরায়ত উত্তেজনা!
ভোটের আগেই ‘আসল’ কাজটি শেষ হওয়ার পরেও এ ভোটে অঘটন ঘটতে পারে না এমন কথা এখনো হলফ করে বলা যাচ্ছে না। যতো উৎকণ্ঠা, অনিশ্চয়তা বা নির্বাচনী আমেজ সবই আবর্তিত হয়েছে কাউন্সিলর প্রার্থী নির্বাচনকে ঘিরেই।
শান্তিপূর্ণভাবে কাউন্সিলর প্রার্থীদের প্রচারণা শেষ হওয়ার পর এখন কেবল একটি সকালের অপেক্ষা। রোববারের (০৫ মে) সেই সকালে উৎসবের আবহ থাকলে তবেই পূর্ণ হতে পারে প্রার্থীদের মনোবাসনা।
কারণ, অতি শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় ফণী’র প্রবল হাওয়ায় অঝোরে যেন কেঁদেছে শনিবারের (০৪) নতুন মহানগরীর আকাশ! ফলে ভোটের দিনেও একই রকম শঙ্কা তাড়া করছে প্রার্থীদের। পুরোপুরি নির্ভার হতে পারেননি সাধারণ ভোটাররাও।
ভোট রাজনীতিতে শেষ রাতের প্রচার হিসেবে শনিবার (০৪ মে) ‘চাঁদ রাতেও’ কৌশলী প্রচারণাতেই ব্যস্ত ছিলেন প্রার্থীরা।
কীভাবে সাধারণ ভোটারদের ভোটকেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হবে, তাদের কীভাবে গাইড করা হবে, বৃষ্টি থাকলে কী ভূমিকা নিতে হবে, পায়ে হাঁটার বদলে আরামদায়ক পন্থা কী হতে পারে এসব ছকের কার্যকর কৌশল সাজানো হয়েছে। নিজেদের ভোটের ‘প্রধান নিয়ামক’ এলাকাগুলোকে টার্গেট করেই ভোটের দিন ‘মর্নিং রাউন্ডে’ বেরিয়ে পড়বেন প্রার্থীদের কর্মী সমর্থকরা।
এসব কৌশলই জয়-পরাজয় নির্ধারণে পথ দেখাবে বলেও মনে করেন সাধারণ ও সংরক্ষিত আসনের একাধিক কাউন্সিলর প্রার্থী। শনিবার (০৪ মে) দিনগত মধ্যরাতে নগরীর বিভিন্ন ওয়ার্ড ঘুরে এমন চমকপ্রদ তথ্যই মিলেছে প্রার্থীদের কাছ থেকে। অবশ্য আচরণবিধি লঙ্ঘনের ভয় থেকে এ নিয়ে প্রকাশ্যে কথা বলতে রাজি হননি কেউই।
ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশন (মসিক) নির্বাচনে মোট ৩১২ জন কাউন্সিলর প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। নির্বাচনে ৩৩টি ওয়ার্ডে সাধারণ কাউন্সিলর পদে ২৪২জন ও সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর পদে ৭০জন প্রার্থী লড়াই করছেন।
এ নির্বাচনে ৩৩টি ওয়ার্ডে ১২৭টি ভোট কেন্দ্রে ইভিএম পদ্ধতিতে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। ২ লাখ ৯৬ হাজার ৯৩৮ জন ভোটার ভোট প্রদান করবেন। নির্বাচন সুষ্ঠু করতে সর্বোচ্চ পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে।
নগরীর একটি ওয়ার্ডের সাধারণ কাউন্সিলর প্রার্থী নিজের ভোট টানার কৌশল সম্পর্কে বাংলানিউজকে জানান, ভোটের প্রথম সকালেই ‘রিজার্ভ ভোট’এ নজর দিয়েছেন তিনি। প্রায় শতাধিক কর্মীর সমন্বয়ে একটি টিম সাজিয়েছেন।
জনপ্রতি কর্মী ১৫ থেকে ২০ জন ভোটারকে কেন্দ্রে নিয়ে আসতে উৎসাহীত করবেন। তাকে দেখভালে থাকবে আরেকটি টিম।
নগরীর একাধিক ওয়ার্ডের সাধারণ কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত আসনের কাউন্সিলর প্রার্থীরা জানান, নগদ নগদ খরচা ভোটের একটি গুরুত্বপূর্ণ অনুসঙ্গ। কিন্তু জয়-পরাজয় নিধারণে মুখ্য নয়। কারণ এ সুযোগে অনেকে শুধু কামিয়ে নেন।
কেউ কেউ বলছেন, সব সিটিতেই ভোটে হারের পর প্রতিপক্ষ রাজনৈতিক শক্তি দুপুরের মধ্যেই নির্বাচন বর্জন করে আন্দোলনের হুমকি দেন। তবে এবারই প্রথম ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশন (মসিক) নির্বাচনে এই চেনা রাজনৈতিক সংস্কৃতির দেখা মিলছে না।
বিএনপি ভোটে না আসাতেই কার্যত উত্তাপহীন নির্বাচন হচ্ছে বলে মনে করছেন স্থানীয়রা।
বাংলাদেশ সময় ০৪৫০ ঘন্টা, মে ০৫, ২০১৯
এমএএএম/এসআইএস