ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

নির্বাচন ও ইসি

ইউপি নির্বাচন

বিদ্রোহীদের পক্ষে কাজ করছেন উপজেলা আ. লীগ সভাপতি!

সুমন কুমার রায়, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০১৮ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৪, ২০২১
বিদ্রোহীদের পক্ষে কাজ করছেন উপজেলা আ. লীগ সভাপতি! ছবি: সংগৃহীত

টাঙ্গাইল: টাঙ্গাইলের ভূঞাপুরে আসন্ন ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন আগামী ২৬ ডিসেম্বর। এরই মধ্যে প্রতীক পেয়ে প্রার্থীরা প্রচারণায় ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন।

আওয়ামী লীগ মনোননিত প্রার্থীর পক্ষে স্থানীয় সংসদ সদস্য তানভীর হাসান ছোট মনির প্রকাশ্যে প্রচারণা না করলেও তার বড় ভাই গোলাম কিবরিয়া বড় মনির এবং কর্মী-সমর্থকরা নৌকার প্রার্থীর পক্ষেই রাত-দিন কাজ করে যাচ্ছেন।

তবে ভূঞাপুর পৌরসভার মেয়র উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মাসুদুল হক মাসুদ বিদ্রোহী প্রার্থীদের পক্ষে অবস্থান নেওয়ায় বেকাদায় পড়েছেন দলীয় নেতাকর্মীরা। এতে করে বহিস্কারও করা হচ্ছে না বিদ্রোহী প্রার্থী আওয়ামী লীগের নেতাদের।

শুক্রবার সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত উপজেলার নিকরাইল, অর্জুনা, অলোয়া এবং গাবসারা ইউনিয়ন ঘুরে এসব তথ্য পাওয়া যায়।

উপজেলা নির্বাচন কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ২৬ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিতব্য উপজেলার ৬টি ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের ৬ জন ছাড়াও দলের মনোনয়ন না পেয়ে বিদ্রোহী ১২ জন এবং বিএনপির ২জন প্রার্থী ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছেন।

এরমধ্যে গোবিন্দাসী ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের মনোনিত প্রার্থী (নৌকা প্রতীক) ইউনিয়ন আ. লীগের সাধারণ সম্পাদক দুলাল হোসেন চকদার প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন বহিস্কৃত সাবেক ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আমিনুল ইসলাম আমিনের সঙ্গে।

নিকরাই ইউনিয়নে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও বর্তমান চেয়ারম্যান আব্দুল মতিন সরকার। তবে মনোনয়ন না পেয়ে একই ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মাসুদুল হক মাসুদ বিদ্রোহী প্রার্থী (আনারস প্রতীক) নিয়ে নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন। এছাড়া এ ইউনিয়নে আরেকজন বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন আওয়ামী লীগ সমর্থীত (মোটর সাইকেল প্রতীক) আবু সাঈদ।

অলোয়া ইউনিয়নের নৌকা প্রতীকে উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি রফিকুল ইসলাম রফিক। এতে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ও বর্তমান চেয়ারম্যান রহিজ উদ্দিন আকন্দ (মোটরসাইকেল প্রতীক)। তবে এ ইউনিয়নের যুবদলের আহ্বায়ককে (আনারস প্রতীক) নিয়ে শরিফুল ইসলাম নির্বাচনে মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন।

ফলদা ইউনিয়নের আওয়ামী লীগ মনোনিত প্রার্থী উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতা ও বর্তমান চেয়ারম্যান সাইদুল ইসলাম তালুকদার দুদুর প্রতিদ্বন্দ্বী হচ্ছেন দলের আরেক নেতা মফিদুল ইসলাম লিটন (বিদ্রোহী ঘোড়া প্রতীক), সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান আকবর হোসেন (মোটরসাইকেল প্রতীক) এবং উপজেলার বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সেলিমুজ্জামান সেলু (আনারস প্রতীক)।

অজুর্না ইউনিয়নের নৌকা প্রতীকে নির্বাচন করছেন ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক দিদারুল আলম খান মাহবুব। তবে দলের মনোনয়ন না পেয়ে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও বর্তমান চেয়ারম্যান আইয়ুব আলী মোল্লা (মোটরসাইকেল প্রতীক), আওয়ামী লীগ নেতা শরিফুল্লা (আনারস প্রতীক), যুবলীগ নেতা ইকো মিয়া (চশমা প্রতীক) ও আওয়ামী লীগ সমর্থক (ঘোড়া প্রতীকে) মিজানুর রহমান রাজিব।

গাবসারা ইউনিয়নে আওয়ামী লীগ মনোনিত (নৌকা প্রতীক) ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও বর্তমান চেয়ারম্যান মনিরুজ্জামান মনির প্রার্থী হয়েছেন। তবে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন সাবেক সভাপতি ও সাবেক চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন জিন্নাহ (মোটরসাইকেল প্রতীক) এবং আওয়ামী লীগ নেতা শাহ আলম শাপলা (আনারস প্রতীক)।

এদিকে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগ কয়েকভাবে বিভক্ত হয়ে পড়েছে। এতে কয়েকটি ইউনিয়নে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকরা নৌকার মনোনয়ন না পেয়ে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়ে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছেন। ফলে তৃণমূল পর্যায়ে আওয়ামী লীগের মধ্যে কোন্দল দেখা দিয়েছে।

আওয়ামী লীগ মনোনিত প্রার্থী এবং তার কর্মী-সমর্থকদের অভিযোগ দলের মনোনয়ন না পেয়ে যারা বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন তাদের পক্ষে ভূঞাপুর পৌরসভার মেয়র ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মাসুদুল হক মাসুদ কাজ করছেন। এতে করে কেন্দ্রীয় ভাবে নির্দেশ থাকার পরও বিদ্রোহী প্রার্থীদের দল থেকে বহিষ্কারের কোনো উদ্যোগ নিচ্ছে না উপজেলা আওয়ামী লীগ। এ কারণে ইউনিয়ন নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগ কয়েক ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েছে।

আবার আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীরা বলছেন, মেয়র তাদের মনোনয়ন এনে দেওয়ার জন্য অনেক চেষ্টা করেছেন কিন্তু পারেনি। তাই তার নির্দেশেই বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন। তবে তাদের পক্ষে প্রকাশ্যে কাজ না করলেও তিনি (মেয়র) গোপনে কাজ করে যাচ্ছেন।

এদিকে আওয়ামী লীগ মনোনিত প্রার্থীরা তাদের বিদ্রোহী প্রার্থীদের দল থেকে বহিষ্কারের দাবি জানিয়েছেন।

গোবিন্দাসী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ইকরাম উদ্দিন তারা মৃধা বাংলানিউজকে জানান, উপজেলায় ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে (নৌকা প্রতীক) যাদের মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে সেটি সঠিক হয়নি। এতে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা হতাশ এবং নৌকা প্রার্থীরা বিদ্রোহী প্রার্থীদের কাছে কোনঠাসা। আর বিশেষ করে বিদ্রোহী প্রার্থীর পক্ষে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সক্রিয়ভাবে কাজ করছেন। তাদের (বিদ্রোহী প্রার্থী) অবস্থান খুবই ভালো। এবার নির্বাচনে দলের মনোনিত প্রার্থীকে হারিয়ে বিদ্রোহী প্রার্থীরাই নির্বাচিত হওয়ার সম্ভাবনাটা বেশি

উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য গোলাম কিবরিয়া বড় মনি বাংলানিউজকে জানান, তিনি এমপির নির্দেশে এবং দলের স্বার্থে মনোনিত প্রার্থীর পক্ষে কাজ করছেন। তবে যারা বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন তাদের দল থেকে বহিষ্কার করা হবে। একই সঙ্গে যারা তাদের পক্ষে কাজ করছেন তাদের বিরুদ্ধেও কঠোর ব্যবস্থা নেয়ারও দাবি জানান তিনি।

উপজেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক তাহেরুল ইসলাম তোতা বাংলানিউজকে জানান, ছয়টি ইউনিয়নেই নৌকার প্রার্থী বিপুল ভোটে বিজয়ী হবেন। আর যারা দলে থেকে নৌকার বিরোধীতা করছেন তাদের কেন্দ্রীয় নির্দেশ পাওয়া মাত্রই দল থেকে বহিষ্কার করা হবে।

ভূঞাপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি পৌরসভার মেয়র মাসুদুল হক মাসুদ বাংলানিউজকে জানান, যারা বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন তাদের বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত বহিষ্কারের কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। তারা এমনিতেই বহিষ্কার হয়ে যাবেন। তবে বিদ্রোহীদের পক্ষে কাজ করার বিষয়টি তিনি রাজনৈতিক অপপ্রচার বলে জানিয়েছেন।

বাংলাদেশ সময়: ১০১৮ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৪, ২০২১
জেডএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।