বরিশাল: ১০ দিন পর বরিশাল সিটি করপোরেশনের (বিসিসি) নির্বাচন। চলছে ভোটের ডামাডোল।
বিসিসি নির্বাচনে জয়ী হলে নগরের মূল ক্ষমতাটা পাবেন মেয়র। যে কারণে এ পদটি নিয়েই সবচেয়ে বেশি আলোচনা। ব্যক্তি থেকে শুরু করে সংগঠন পর্যায়ে চলে মেয়র প্রার্থীর পক্ষে প্রচার-প্রচারণা। প্রকাশ্য প্রচার-প্রচারণায় সংগঠনগুলো ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থীকেই বেশি সমর্থন দেয়। মাঝে মধ্যে উল্টোটাও হয়। ক্ষমতাসীনদের হটিয়ে মেয়র হন বিরোধীদলীয় বা স্বতন্ত্র প্রার্থী। ২০১৩ সালে এমনটা দেখেছে বরিশালবাসী। সেবার ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থীকে হারিয়ে মেয়র হয়েছিলেন বিএনপির প্রয়াত নেতা আহসান হাবিব কামাল।
বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনে এবারে স্থানীয় পর্যায়ের বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক, সেচ্ছাসেবী ও রাজনৈতিক সংগঠনগুলোর সমর্থন পেয়েছেন ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থী নৌকার প্রার্থী আবুল খায়ের আব্দুল্লাহ (খোকন সেরনিয়াবাত)। তাকে সমর্থন দিচ্ছেন সিটি করপোরেশনের চাকুরিচ্যুতরাও। নগরের রাস্তায় রাস্তায় তাদের দেখা যাচ্ছে নৌকার নির্বাচনী প্রচারণায়।
প্রকাশ্য প্রচারণার পাশাপাশি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকেও রয়েছে তাদের সক্রিয়তা। কিন্তু কেন সিটি কর্পোরেশনের চাকুরিচ্যুতরা খোকন সেরনিয়াবাতকে ভোট দিতে আহ্বান করছেন, সেটিও বড় প্রশ্ন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, খোকন জয়ী হলে চাকুরিচ্যুতরা তাদের চাকরি ফিরে পাওয়ার আশা করছেন। তারা ভোটারদের হাত ধরেও তারা নিজেদের চাকরি ফিরে পাওয়ার প্রত্যাশার কথা জানাচ্ছেন। বলছেন, চাকরি না থাকায় নিজেদের মানবেতর জীবনের কথাও উল্লেখ করছেন তারা।
বৃহস্পতিবার (১ জুন) বরিশাল নগরের চাঁদমারী বঙ্গবন্ধু কলোনিতে চাকরিচ্যুত অনেককেই প্রচারণা করতে দেখা গেছে। এর আগেও নগরের বিভিন্ন এলাকায় প্রচারণা করেছেন বলে জানিয়েছেন গ্রুপের অন্যতম সদস্য ও বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের পানি শাখার চাকুরিচ্যুত নির্বাহী প্রকৌশলী কাজী মনিরুল ইসলাম স্বপন।
কাজী মনিরুল ইসলাম স্বপন বলেন, সিটি করপোরেশনের থেকে চাকুরিচ্যুত, ওএসডি ও সাময়িক বরখাস্ত হওয়া কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিয়ে ‘বিসিসি এসআর’ (সাফারার) গ্রুপ খোলা হয়েছে। এ গ্রুপে ৭০-৮০ জন্য সদস্য রয়েছে। তারা সবাই সিটি কর্পোরেশনের বর্তমান মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহর কারণে ক্ষতিগ্রস্ত। অনেক আগে থেকেই খোকন সেরনিয়াবাতের সঙ্গে যোগাযোগ ছিল। আর আগে থেকেই চাকরিচ্যুতদের সুখ-দুঃখের কথা খোকন সেরনিয়াবাতকে বলতেন। তিনি মেয়র পদে মনোনয়ন পাওয়ার পর গত ২৮ মে থেকে তারা নগরীতে প্রচারণা শুরু করি আমরা।
নগরের আমীর কুটির এলাকায় নিজস্ব উদ্যোগে খোকন সেরনিয়াবাতের জন্য প্রচারণা ক্যাম্প নির্মাণ করে পরিচালনা করছেন স্বপন। তার আশা খোকন জয়ী হলে তাদের প্রতি ন্যায় বিচার করবেন। খোকন তাদের চাকরি ফিরিয়ে দেবেন এটিই তাদের দৃঢ় বিশ্বাস।
সিটি কর্পোরেশনের চাকরিচ্যুত নকশাকারক প্রদীপ কুমার দাস বলেন, আমরা আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থীর সাথে সাক্ষাত করেছিলাম, আমাদের দুঃখের কথা বলেছি। তিনি নির্বাচিত হলে তাদের চাকরি ফিরিয়ে দেয়ার আশ্বাস দিয়েছিলেন।
জানা গেছে, ২০১৮ সালে মেয়র হিসেবে সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ দায়িত্ব গ্রহণের পর ক্রমান্বয়ে সিটি কর্পোরেশন থেকে সম্পূর্ণ অবৈধ ও অনৈতিকভাবে কাউকে চাকুরিচ্যুত, কাউকে ওএসডি ও বরখাস্ত করেছে। এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন এদিকে নৌকা প্রতীকের প্রার্থীর পক্ষে প্রচারণা চালিয়ে যাওয়া চাকরিচ্যুত বরিশাল সিটি করপোরেশনের হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা মশিউর রহমান, ট্রেড সুপারিন্টেনডেন্ট আজিজুর রহমান, হাট-বাজার শাখার সুপারিন্টেনডেন্ট নুরুল ইসলাম, প্রকৌশল শাখার উপ-সহকারী প্রকৌশলী আবুল কালাম আজাদ, আহসান হাবিব, মামুনুর রশীদ, আজিজ শাহিন, এবিএম শাহিন, স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. মতিন। তাদের দাবি, চাকরি কেড়ে নেওয়ার পর তিন মাসের যে বেতন দেওয়ার কথা রয়েছে, সেটি তারা আজ পর্যন্ত পাননি।
আব্দুস সালাম নামে সিটি করপোরেশনের পানি শাখার হিসাব সহকারী জানিয়েছেন, ২০২১ সালের ১৩ বা ১৪ আগস্ট রাতে সিটি করপোরেশন থেকে একজন গিয়ে তার বাসায় একটি চিঠি দেন। চিঠিতে তিন মাসের বেতন পরিশোধের কথা উল্লেখ করা হয়। কিন্তু বেতনের টাকা আমি পাইনি। তা ছাড়া সিটি করপোরেশনের কাছে আমার ১৫ মাসের বেতন বকেয়াও ছিল।
এসব বিষয়ে সিটি করপোরেশন প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দ ফারুক আহমেদের দাবি, কাজে অবহেলা, অসদাচরণের জন্য কিছু কর্মকর্তা—কর্মচারীকে গত চার বছরে বাদ দেওয়া হয়েছিল। এ সিদ্ধান্ত সিটি করপোরেশনের নিয়মানুযায়ী নেওয়া হয়েছিল।
বাংলাদেশ সময়: ১৪৫৫ ঘণ্টা, জুন ২, ২০২৩
এমএস/এমজে