ঢাকা, রবিবার, ১৪ পৌষ ১৪৩১, ২৯ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

নির্বাচন

পৌরসভায় জাতীয় নির্বাচনের আবহ

জেসমিন পাপড়ি, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪১৩ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৩০, ২০১৫
পৌরসভায় জাতীয় নির্বাচনের আবহ ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

ঢাকা: জাতীয় নির্বাচনের আবহে চলছে পৌরসভার প্রতিনিধি নির্বাচনের ভোটযুদ্ধ। দেশের ২৩৪টি পৌরসভায় চলছে এ ভোটের লড়াই।

গুটিকয়েক এলাকায় বিচ্ছিন্ন কিছু ঘটনা ঘটলেও সারাদেশ থেকেই শান্তিপূর্ণ পরিবেশে উৎসবের আমেজে ভোটগ্রহণের খবর আসছে।

শীতের সকালেই ভোটের উত্তাপে জমে ওঠে প্রথমবারের মতো দলীয় প্রতীকে চলমান পৌরসভা নির্বাচন। সকাল থেকেই ভোটকেন্দ্রে আসতে শুরু করেন ভোটাররা। কোথাও কোথাও ভোট শুরু হওয়ার আগেই ভোটকেন্দ্র এলাকায় হাজির হন ভোটাররা। লম্বা লাইন দিয়ে তারা ছিলেন ভোটের অপেক্ষায়। এরপর সকাল ৮টায় ভোট শুরু হলেই তারা একে একে ঢুকে পড়তে শুরু করেন পোলিং বুথে। কয়েকটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া সারা দেশ থেকে অনেকটা সুষ্ঠু পরিবেশে ভোট গ্রহণের খবর আসছে।

বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে কেন্দ্রগুলোতে ভোটার সংখ্যা বাড়ছে। এদের মধ্যে নারী ভোটারের উপস্থিতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে উল্লেখযোগ্য হারে। কোথাও কোথাও কেন্দ্রে নারী ভোটারের প্রাধান্যই বেশি দেখা যাচ্ছে।

কোনো বিরতি ছাড়াই ভোট গ্রহণ চলবে বিকেল চারটা পর্যন্ত। প্রথমবারের মত দলীয় প্রতীকের পৌর নির্বাচনে ২০টি রাজনৈতিক দল অংশ নিলেও মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা আওয়ামী লীগের ‘নৌকা’ ও বিএনপির ‘ধানের শীষ’প্রতীকের মধ্যে হচ্ছে বলে মনে করা হচ্ছে।

সর্বশেষ ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোটযুদ্ধে মুখোমুখি হয়েছিল ‘নৌকা’ ও ‘ধানের শীষ’র প্রার্থীরা।
 
দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে বাংলানিউজের করেসপন্ডেন্টরা জানান, দীর্ঘদিন পরে প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ভোটযুদ্ধ জাতীয় নির্বাচনের আবহ যেমন এনেছে, তেমনি স্থানীয় প্রতিনিধি নির্বাচনে দলের পাশাপাশি ব্যক্তিও বড় হয়ে উঠেছেন। কোনো কোনো ক্ষেত্রে ‘এলাকার ছেলে‘, ‘আত্মীয়’ কিংবা ‘পছন্দের প্রার্থী’ ইমেজ ভোট দেওয়ার ক্ষেত্রে মুখ্য ভূমিকা রাখছে।
 
টাঙ্গাইল থেকে বাংলানিউজের সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট ইলিয়াস সরকার জানান, বড় ধরনের কোনো বিশৃঙ্খল‍া ছাড়াই ট‍াঙ্গাইলের বিভিন্ন কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ চলছে। প্রার্থীরাও ভোটগ্রহণের ব্যাপ‍ারে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন।

টাঙ্গাইল পৌরসভার ১৭ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিল প্রার্থী বীর মুক্তিযোদ্ধা আসাদুজ্জামান সবুর বাংলানিউজকে বলেন, এই দলীয় নির্বাচন জনগণের মনে এক ধরনের উৎসব নিয়ে এসেছে। জনগণ তাদের প্রতিনিধি নির্বাচনের জন্য ভালবাসা নিয়েই কনকনে শীতের মধ্যে ভোটকেন্দ্রে নিয়ে এসেছে। সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবেই ভোটগ্রহণ চলছে প্রায় প্রতিটি কেন্দ্রে।

দলীয় প্রতীকের নির্বাচন হওয়ায় যে পরিমাণ বিশৃঙ্খলার আশঙ্কা করা হয়েছিল, টাঙ্গাইলে তা নেই বলে জানান গত পাঁচবার দায়িত্ব পালন করা এই কাউন্সিলর।

নাটোর থেকে সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট মাজেদুল নয়ন জানান, দলীয় প্রতীকের সমর্থনে মেয়র প্রার্থীকে ভোট দিলেও ভোটাররা কাউন্সিলর নির্বাচনের ক্ষেত্রে পরিচিত জনকেই বেছে নিচ্ছেন।

এ বিষয়ে কানাইখালীর সালেহা বেগম বলেন, আমি মূলত আওয়ামী লীগের সমর্থক। কিন্তু এবারেরই নির্বাচনে অংশ নেওয়া বিএনপি সমর্থিত মেয়র প্রা‌র্থী আমার আত্মীয়। এ কারণে তাকেই বেছে নিতে হয়েছে। একইভাবে কাউন্সিলর নির্বাচনের ক্ষেত্রেও সাধারণ মানুষ পরিচিত মুখ বা এলাকার মানুষকে বেছে নিতে পছন্দ করে। কারণ, তাদের কাছেই সরাসরি জনগণের তাদের সুখ-দুঃখের কথা বলার সুযোগ পায়।

গাইবান্ধা থেকে স্টাফ করেসপন্ডেন্ট নুরুল আমিন জানান, উত্তরাঞ্চলের তীব্র শীত উপেক্ষা করে নারী ভোটারদের ভোটকেন্দ্রে উপস্থিতি লক্ষ্য করার মত দেখা যাচ্ছে।

গাইবান্ধা সদরের জুবলি সরকারি বিদ্যালয়ের ভোটকেন্দ্রের মাঠে ভোট দেওয়ার অপেক্ষায় থাকা শারমিন আক্তার বাংলানিউজকে বলেন, সকালে ঠাণ্ডা পড়লেও রোদ কম থাকা অবস্থায় ভোট দিতে এসেছি। দুপুরে রোদ বাড়লে লাইনে দাঁড়িয়ে ভোট দেওয়া কষ্টকর হবে।

তিনি বলেন, কারও চাপে নয়, নিজের এলাকার প্রতিনিধি নির্বাচন করতেই নিজের ভোট দিতে এসেছি। যোগ্য প্রার্থীকে নির্বাচিত করার এটাই সুযোগ।

এছাড়া, গাইবান্ধার কোমরনই প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে অপেক্ষারত ভোটারদের মধ্যেও নারীদর উপস্থিতি বেশি লক্ষ্য করা যায়।

নির্বাচন কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, নিবন্ধিত ৪০টি রাজনৈতিক দলের ২০টি এবারের পৌরসভা নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে। দলগুলোর মেয়র পদে ৬৬০ জন প্রার্থী লড়াই করছেন। আর স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ২৮৫ জন। পৌরসভাগুলোতে সাধারণ কাউন্সিলরের দুই হাজার ১৯৩টি পদের জন্য আট হাজার ৭৪৬ জন এবং সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলরের ৭৩১টি পদের জন্য দুই হাজার ৪৮০ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

বাংলাদেশ সময়: ১৪১৩ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৩০, ২০১৫
এইচএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।