বৃহস্পতিবার (১৭ আগস্ট) গণমাধ্যম প্রতিনিধিদের সঙ্গে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) দ্বিতীয় দিনের সংলাপে অংশ নেয়া ইলেকট্রনিক মিডিয়ার ২৪ জন সাংবাদিক ইসিকে এসব পরামর্শ দেন।
সকাল সাড়ে ১০ দিকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কেএম নুরুল হুদার সভাপতিত্বে সংলাপ শুরু হয়ে দুপুর ১টার দিকে শেষ হয়।
গণমাধ্যম প্রতিনিধিরা নির্বাচনী পরিবেশ তৈরিতে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ, রাজনৈতিক দলের সঙ্গে একাধিকবার মত বিনিময়, ‘লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড’ তৈরি করা এবং পরিস্থিতি বুঝে প্রয়োজনে সেনাবাহিনীকেও নির্বাচনে ব্যবহার করার পরামর্শ দেন।
সংলাপে অংশ নিয়ে বাসস এর প্রধান সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ সাংবাদিকদের জানান, নির্বাচন কমিশনকে সংবিধান, আইন-বিধি বিধান অনুযায়ী সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করতে হবে। আইন প্রয়োগ ও নিরপেক্ষতা বজায় রাখলে সবার প্রশংসা পাবে কমিশন।
তিনি বলেন, সেনাবাহিনী ‘জাতীয় গৌরব। ভোটের মাঠে সেনাবাহিনী মোতায়েনের প্রয়োজন নেই। তবে পরিস্থিতি বিবেচনায় যদি কমিশন ভোটের সময় তাদের মোতায়েনের প্রয়োজন মনে করে তাহলে স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে নিয়োজিত করবে।
তবে সেনা মোতায়েন নিয়ে ‘আগাম’ বিতর্ক তৈরি করায় ‘বিশেষ মহলের মতলব’ রয়েছে বলে শঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি।
আবুল কালাম আজাদ বলেন, সেনা মোতায়েন নিয়ে আগাম এতো তর্ক কেন? ভোটের দিন কি কিছু হবে? তাদেরকে বিতর্কিত করার জন্যে কোন মতলব রয়েছে কি না? এটা একটি রাজনৈতিক মতলব, সুকৌশলে এসব করা হচ্ছে।
একাত্তর টিভির প্রধান সম্পাদক মোজাম্মেল বাবু জানান, ভোটে সেনাবাহিনীর প্রয়োজন নেই। সেনাবাহিনীর ব্যবহার রাজনৈতিক কারণে হলে তা থেকে বিরত থাকতে হবে।
তিনি বলেন, নিরপেক্ষভাবে আইন-সংবিধানের ভেতরে থেকে কাজ করতে হবে কমিশনকে। সব দলকে আলোচনা, ঐক্যমত, সংলাপের জন্য দরকার নেই। জনগণের আস্থা অর্জন করতে হবে আপনাদের। কে এলো না এলো তা দেখার বিষয় নয় ইসির।
ভোটের দিন ইসির নিজস্ব ওয়েবে দ্রুত ও সঠিক ফলাফল প্রচার এবং দেশের ৪০ হাজার ভোট কেন্দ্রে টিভি চ্যানেলের ক্যামেরা ব্যবহারের সুযোগ দেওয়ার পরামর্শ দেন তিনি।
মাছরাঙ্গা টিভি’র প্রধান বার্তা সম্পাদক রেজোয়ানুল হক রাজা জানান, ভোটে যারা আসবে তাদের জন্য সমান সুযোগ নিশ্চিত করতে হবে। ভোটে সেনাবাহিনী মোতায়েন নিয়ে টানাহেঁচড়া না করাই ভালো। সব দলের অংশগ্রহণের জন্য পরিবেশ তৈরি রাখতে হবে, তবে কে ভোটে এলো না এলো তা রাজনৈতিক বিষয়।
ডিবিসি’র সিইও মঞ্জুরুল ইসলাম বলেন, পর্যবেক্ষকদের মধ্যে রাজনীতি রয়েছে। এ নিয়ে সতর্ক থাকতে হবে। পোলিং এজেন্ট যেনো দলীয় না হয় সে বিষয়ে সজাগ থাকতে হবে। ডিজিটালাইজ বাংলাদেশের সুযোগ নিয়ে দ্রুততম সময়ে কেন্দ্রভিত্তিক ফল কেন্দ্রীয়ভাবে প্রচারের উদ্যোগ নিতে হবে।
নিউজ টোয়েন্টিফোর এর ব্যবস্থাপনা সম্পাদক হাসনাইন খুরশিদ জানান, ইসির কাছে পর্যাপ্ত ক্ষমতা রয়েছে তার প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে। দলগুলোর আস্থা চূড়ান্তভাবে অর্জন সম্ভব হবে না। তবে জনগণের আস্থা অর্জনে সব পদক্ষেপ নিতে হবে।
বাংলাভিশনের হেড অফ নিউজ মোস্তফা ফিরোজ বলেন, ভোটের মাঠে সেনাবাহিনী বা এলিট ফোর্স দিয়ে কোনো লাভ হবে না। আওয়ামী লীগ ও বিএনপি’র মধ্যে সমঝোতা হলে এসব বাহিনীরও দরকার পড়বে না।
তিনি বলেন, দলগুলোর সঙ্গে সিরিজ সংলাপ, ৩০০ আসনে একাধিক দিনে ভোট ও ধর্মীয় দলগুলোর নিবন্ধন বাতিল করে গঠনতন্ত্র সংশোধন ও নাম পরিবর্তনের উদ্যোগ নিতে হবে।
সংলাপে আবুল কালাম আজাদ, খায়রুল আনোয়ার, জ ই মামুন, শাইখ সিরাজ, সৈয়দ আশিক রহমান, রাশেদ চৌধুরী, মোস্তফা ফিরোজ, তুষার আব্দুল্লাহ, খালেদ মহিউদ্দীন, রেজোয়ানুল হক রাজা, মোজাম্মেল বাবু, তালাত মামুন, সুকান্ত গুপ্ত অলক, ফাহিম আহমেদ, হাসনাইন খুরশিদ, মুস্তাফিজ রহমান, শরিফুল ইসলাম, মাহমুদুল করিম চঞ্চল, বিল্লাল হোসাইন বেলাল, সেলিম বাশার, আমির খসরু, সাখাওয়াত হোসেন বাদশা, মুরসালীন নোমানী ও এস এম হারুন-উর রশীদ উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে সংলাপ শেষে ইসির ভারপ্রাপ্ত সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ সংবাদ সম্মেলনে জানান গণমাধ্যমের কাছ থেকে ২০ ধরনের পরামর্শ পেয়েছেন তারা। এগুলো হলো- প্রয়োজনে সেনা মোতায়েন, না ভোট নিয়ে দ্বিধাভিক্ত মত, পর্যবেক্ষক নিয়োগে সতর্কতা অবলম্বন, ভোট কেন্দ্রে এনআইডি লাগবে না- এটার প্রচারণা নিশ্চিত, ভোটে ধর্মের অপব্যবহার বন্ধকরণ, টিভি চ্যানেল ও সাংবাদিকদের পর্যবেক্ষক নিয়োগ, প্রশাসন ও আইন শৃঙ্খলা রক্ষায় দল নিরপেক্ষ ব্যক্তিদের নিয়োগ, ভোটের দায়িত্বে থাকা গণমাধ্যম কর্মীদের প্রশিক্ষণ, প্রার্থীর হলফনামা এনবিআর-দুদকের মাধ্যমে যাছাই, ভোটার অনুপাতে আসন বন্টন, স্বাধীনতা বিরোধীদের নিবন্ধন না দেওয়া ও নিবন্ধিতদের কার্যক্রম নিরীক্ষা, ভোটের ফলাফল দ্রুত ও সঠিকভাবে প্রচারের ব্যবস্থা, সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা ও পরাজিত প্রার্থীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।
এছাড়া একাধিক দিনে ভোট আয়োজন, প্রবাসীদের ভোটাধিকার নিশ্চিত করা, সংবাদ সংগ্রহে গণমাধ্যম কর্মীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত, ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রের তালিকা এখনই প্রস্তুত রেখে ব্যবস্থা নেওয়া, অনূকূল পরিবেশ তৈরিতে রাজনৈতিক দলের সঙ্গে ঘন ঘন সংলাপ এবং সীমানা পুনর্নিধারণ ও আইন সংস্কারে বড় ধরনের সংশোধন না করার পরামর্শও দিয়েছেন তারা।
হেলালুদ্দীন বলেন, সুশীল সমাজ ও গণমাধ্যম প্রতিনিধির সংলাপ শেষে ২৪ আগস্ট থেকে রাজনৈতিক দলের মতামত নেওয়া শুরু হবে। সে সময় সুপারিশগুলো দলগুলোর সামনে তুলে ধরা হবে।
তিনি বলেন, ঈদের আগে ২৪, ২৮ ও ৩০ আগস্ট প্রতিদিন দুইটি করে ছয়টি দলের সঙ্গে এবং ঈদ-উদ আযহার পর ১০ সেপ্টেম্বর অবশিষ্ট ৩৪টি দলের সঙ্গে সংলাপ করা হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৫০৮ ঘণ্টা, আগস্ট ১৭, ২০১৭
ইইউডি/আরআই