চাঁদপুর: চতুর্থ ধাপে চাঁদপুরের হাইমচর উপজেলার ৫ নম্বর হাইমচর ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে মনোনীত নৌকা মার্কার প্রার্থী মো. জুলফিকার আলী জুলহাস সরকারের বাবা ও চাচা চিহ্নিত রাজাকার এবং মুক্তিযোদ্ধকালীন সময়ে শান্তি কমিটির সদস্য ছিলেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ইউনিটের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা সন্তুষ কুমার মজুমদার ও উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাচাই কমিটির আহ্বায়ক বীর মুক্তিযোদ্ধা মুকবুল সরকার নৌকার প্রার্থী জুলহাস সরকারের পিতা মো. জলিল সরকার ও চাচা মো. হামিদ সরকারকে রাজাকার হিসেবে চিহ্নিত করেন।
গত ২৪ নভেম্বর হাইমচর ইউনিয়নে আওয়ামী লীগ থেকে নৌকার প্রার্থী মনোনীত করার পর বিষয়টি নজরে আসে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের। এরপর ২৫ নভেম্বর হাইমচর মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ইউনিটের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা সন্তুষ কুমার মজুমদার প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি বরাবর রাজাকারের সন্তান নৌকা মার্কার প্রার্থী বিষয়টি অবগত করে লিখিত দরখাস্ত করেন। প্রধানমন্ত্রীর কাছে পাঠানো দরখাস্তের এক কপি দেওয়া হয় গণমাধ্যমে।
হাইমচর ইউনিয়নের প্রবীণ একাধিক নারী ও পুরুষ নাম প্রকশ না করার শর্তে জানান, জুলহাস সরকারকে নৌকার প্রার্থী দেওয়া হয়েছে জেনে আমরা খুবই মর্মাহত এবং লজ্জিত। কারণ তাদের পরিবার ছিল অত্যাচারী। চরের লোকজনের প্রতি তারা অনেক অবিচার করেছে। এরপর রাজাকার পরিবারের সন্তান হিসেবে কিভাবে সে স্বাধীনতার স্বপক্ষের দলের মনোনয়ন পায়।
এ বিষয়ে হাইমচর উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটির আহ্বায়ক বীর মুক্তিযোদ্ধা মুকবুল সরকার বাংলানিউজকে বলেন, হাইমচর ইউনিয়নে নৌকা মার্কার মনোনীত প্রার্থী জুলহাস সরকার এর চাচা হামিদ সরকার শান্তি কমিটির সভাপতি ছিলেন। যুদ্ধকালীন সময়ে চাঁদপুর শহরের মুলহেডে মুক্তিবাহিনী তাকে গুলি করে হত্যা করে। তার পিতা জলিল সরকার ছিলেন শান্তি কমিটির সদস্য। তৎকালীন সময়ের সকল লোক এ বিষয়ে জানেন। কিন্তু তারা যেহেতু মারা গেছেন সেজন্য তাদের বিষয়ে আলোচনা আসেনি। এখন রাজাকার ও স্বাধীনতা বিরোধী ব্যক্তির সন্তান নৌকার প্রার্থী এটি আমরা মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে মেনে নিতে পারিনা।
উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ইউনিটের সভাপতির প্রধানমন্ত্রী বরাবর পাঠানো আবেদন থেকে জানা যায়, জুলহাস সরকারের চাচা হামিদ সরকার শান্তি কমিটির চেয়ারম্যান ও তার পিতা সদস্য ছিলেন। হামিদ সরকার মুক্তিযোদ্ধাদের হাতে নিহত হন এবং তার পিতা জলিল সরকার চাঁদপুর শহরেই থাকতেন। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর হাইমচর নিজ বাড়িতে এসে অসুস্থ হয়ে মারা যান। আমার জানামতে জলিল সরকার একজন রাজাকার ছিলেন।
প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার কাছে হাইমচর উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ইউনিটের সভাপতি সন্তুষ কুমার মজুমদার জুলহাস সরকারের বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য আবেদন জানান।
অভিযোগের বিষয়ে নৌকা মার্কার প্রার্থী মো. জুলফিকার আলী জুলহাস সরকার বাংলানিউজকে বলেন, আমার বাবা ও চাচা রাজাকার ছিলেন না। মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ের আমরা ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার। তারা কোনো রাজনৈতিক দলের সদস্যও ছিলেন না। আমি নিজে গত ১২ বছর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি। আমার বড় ভাই ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ছিলেন। এসব অভিযোগ মিথ্যা এবং ষড়যন্ত্র বলে আমি মনে করি।
বাংলাদেশ সময়: ১৪১৭ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৭, ২০২১
এনটি