ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

নির্বাচন

প্রান্তিক পর্যায়ে বেড়েছে নারী জনপ্রতিনিধিত্ব

ইকরাম-উদ দৌলা, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯৩৮ ঘণ্টা, মার্চ ৮, ২০২২
প্রান্তিক পর্যায়ে বেড়েছে নারী জনপ্রতিনিধিত্ব

ঢাকা: একেবারে গ্রাম পর্যায়ে স্থানীয় সরকার তথা ইউনিয়ন পরিষদে (ইউপি) আগের তুলনায় বেড়েছে নারীর অংশগ্রহণ। এক্ষেত্রে চেয়ারম্যান পদে কেবল তারা প্রতিদ্বন্দ্বিতাই করেননি, অনেক ক্ষেত্রে বিরাট ব্যবধানে জয়ও ছিনিয়ে এনেছেন।

তবে ইউপি প্রধানের পদটিতে নারীদের বিজয়ী হওয়ার হার বাড়লেও, সামগ্রিকভাবে তা এখনও নগণ্যই রয়ে গেছে।

ইসির নির্বাচন পরিচালনা শাখা থেকে জানা গেছে, ২০১৬ সালে ফেব্রুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত ছয় ধাপে মোট ৪ হাজার ৮৭টি ইউপিতে নবম বারের মতো নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এর মধ্যে ২৬টি ইউপিতে চেয়ারম্যান পদে নারীরা জয়ী হন। নারীদের এই জয়ের হার মোট ইউপিতে শূন্য দশমিক ৬৪ শতাংশ। অর্থাৎ এক শতাংশ আসনেও (চেয়ারম্যান) নারী প্রতিনিধিত্ব আসেনি।

এদিকে ২০২১ সালের ২১ জুন থেকে ২০২২ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত দেশে দশম ইউপি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় মোট ৪ হাজার ৫৮টি ইউপিতে নির্বাচন শেষ করেছে ইসি। এর মধ্যে ৪৫টি ইউপিতে চেয়ারম্যান পদে নারীরা জয় পেয়েছেন। অর্থাৎ এবার ১ শতাংশের উপরে ওঠেছে এই হার।

নারীদের জনপ্রনিধিত্ব বাড়ার বিষয়টিকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছে নির্বাচন কমিশন। কর্মকর্তারা বলছেন, ১০ বছর আগেও নারী প্রার্থী ছিল হাতে গোনা কয়েক জন। বর্তমানে কেবল দলীয় প্রার্থী নয়, স্বতন্ত্র থেকেও অনেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এমনকি জয়ী ৪৫ নারীর মধ্যে স্বতন্ত্র থেকে নির্বাচিত প্রার্থীও রয়েছেন।

নির্বাচনী ফলাফল থেকে দেখা গেছে, স্বতন্ত্র থেকে অন্তত ৬ প্রার্থী চেয়ারম্যান পদে লড়াই করে জয়ী হয়েছেন। এছাড়া জাতীয় পার্টির (জাপা) একজনসহ বাকি সবাই বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ থেকে নির্বাচনে অংশ নিয়ে বিজয়ী হন।

ইসির নির্বাচন পরিচালনা শাখার যুগ্ম সচিব মো. ফরহাদ আহাম্মদ খান জানান, গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশে দলগুলোর সব পর্যায়ের কমিটিতে ৩৩ শতাংশ নারী নেতৃত্ব আনার শর্ত রয়েছে। আইনের এই বিষয়টি মেনে চললে তৃণমূলে নারী নেতৃত্ব যেমন বাড়বে, তেমনি জনপ্রতিনিধিও বেশি হারে বেরিয়ে আসবে। দলগুলো ধীরে ধীরে সেটিও বাস্তবায়নও করছে। তাই আগের চেয়ে নারী চেয়ারম্যান সংখ্যাও বাড়ছে।

দশম ইউপি নির্বাচনে নির্বাচিত নারী চেয়ারম্যানের মধ্যে রয়েছেন- বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জের তেলিগাতীতে মোরশেদা আক্তার (আওয়ামী লীগ), কলারোয়ার জয়নগরে বিশাখা সাহা (স্বতন্ত্র), রংপুরের পীরগঞ্জের বড় দরগায় মোছা. মাফিয়া আকতার (স্বতন্ত্র), নওগাঁ সদরের বোয়ালিয়ায় মোছা: আলফাতুন নেছা (আওয়ামী লীগ), মাগুরা সদরের মঘীতে হাচনা হেনা (আওয়ামী লীগ), পটুয়াখালী সদরের বদরপুরে তানজিন নাহার সোনিয়া (আওয়ামী লীগ), শেরপুর সদরের ভাতশালায় নাজমুন নাহার (আওয়ামী লীগ), টাঙ্গাইলের দেলদুয়ারের দেউলীতে তাহমিনা (আওয়ামী লীগ), মাদারীপুরের কালকিনি উপজেলার লক্ষ্মীপুরে মৌসুমী হক সুলতানা (স্বতন্ত্র), ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরে পুতুল রানী দাস (আওয়ামী লীগ), কক্সবাজারের রামুর দক্ষিণমিঠাছড়িপিতে খোদসেতা বেগম রীনা (আওয়ামী লীগ), মাদারীপুরের শিবচর উপজেলার দ্বিতীয়খণ্ড ইউনিয়নে মনোয়ারা বেগম (স্বতন্ত্র), বরিশাল সদরের টঙ্গিবাড়িয়ায় নাদিরা রহমান (স্বতন্ত্র), উজিরপুরের জল্লায় বেবী রাণী দাস (আওয়ামী লীগ), ঝালকাঠির রাজাপুর উপেজলার শুক্তগগেরে বিউটি শিকদার (আওয়ামী লীগ), নলসিটি উপজেলার সিদ্ধকাঠিতে জেসমিন আক্তার (আওয়ামী লীগ), পিরোজপুরের মঠবাড়িয়ার আমড়াগাছিয়ায় শারমিন জাহান (আওয়ামী লীগ) ও বরগুনার আমতলির আড়পাঙ্গাশিয়ায় সোহেলী পারভীন (আওয়ামী লীগ)।

এছাড়া পাবনার ভাংগুড়ার অষ্টামনিষায় সুলতানা জাহান (আওয়ামী লীগ), মাগুরার শ্রীপুরের সব্দালপুরে পান্না খাতুন (আওয়ামী লীগ), নড়াইলের লোহাগড়ায় নাজমিন বেগম (আওয়ামী লীগ), মু্ন্সিগঞ্জের সিরাজদীখানের মালখানগরে সানজিদা আক্তার (আওয়ামী লীগ), রাজবাড়ী সদরের বানীবহে মোছা শেফালী আক্তার (আওয়ামী লীগ), গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ার আমতলীতে রাফেজা বেগম (আওয়ামী লীগ), টুঙ্গিপাড়ার বর্নি ইউপিতে মোছ. মিলিয়া আমিনুল (আওয়ামী লীগ) ও ফেনীর সোনাগাজীর সোনাগাজী উম্মে রুমা (আওয়ামী লীগ) চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন।

অন্যদিকে টাঙ্গাইলের গোপালপুরের হাদিরায় বিলকিছ জাহান (আওয়ামী লীগ), ময়মনসিংহের ভালুকার মেদুয়ারীতে মোছা. জেসমিন নাহার রানী (আওয়ামী লীগ), ঢাকার নবাবগঞ্জের আগলায় শিরিন চৌধুরী (আওয়ামী লীগ), জয়কৃষ্ণপুরে একই দলের রেশমা আক্তার, ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জের বৈরচুনায় মোছা. টেলিনা সরকার হিমু (আওয়ামী লীগ), বগুড়ার ধনুটের নিমগাছীতে মোছা. সোনিতা নাসরিন (আওয়ামী লীগ), সিরাজগঞ্জের বেলকুচির রাজাগঞ্জে মোছা. ছনিয়া সবুর (আওয়ামী লীগ), পাবনার চাটমহরের নিমাইচরায় নুরজাহান বেগম (আওয়ামী লীগ), যশোরের শার্শায় লক্ষ্মণপুরে মোছা. আনোয়ারা খাতুন (আওয়ামী লীগ), নড়াইলের কালিয়ার হামিদপুরে পলি বেগম (আওয়ামী লীগ), মাউলীতে রুজি হক (আওয়ামী লীগ), সাতক্ষীরার কালিগঞ্জের কৃষ্ণনগরে মোছা, সাফিয়া পারভীন (জাপা), কক্সবাজারের চকরিয়ার পূর্ব বড়ভেওলায় ফারহানা আফরীন মুন্না (আওয়ামী লীগ) ও খাগড়াছড়ির দীঘিনালার মেরুংয়ে মাহমুদা বেগম (আওয়ামী লীগ)  চেয়ারম্যান পদে জয় পেয়েছেন।

এদিকে বগুড়ার আদমদিঘীর সান্তাহারে মোছা. নাহিদ সুলতানা (আওয়ামী লীগ), যশোর সদরের ইছালীতে মোছা. ফেরদৌসী ইয়াসমিন (আওয়ামী লীগ), ময়মনসিংহের গফরগাঁওয়ের দত্তের বাজারে মোছা. রোকসানা বেগম (আওয়ামী লীগ), নান্দাইলের মোয়াজ্জেমপুরে মোছা. তাছলিমা আক্তার (আওয়ামী লীগ), গাজীপুরের শ্রীপুরের রাজাবাড়ীতে মোছা. হাছিনা মমতাজ (আওয়ামী লীগ), নরসিংদীর বেলাবোর বাজনাবে সুলতানা রাজিয়া স্বপ্না (স্বতন্ত্র), রাজবাড়ীর পাংশার কলিমহরে মোছা. বিলকিছ বানু (আওয়ামী লীগ) ও সুনামগঞ্জের ধর্মপাশায় সুখাইড় রাজাপুর উত্তরে নাসরিন সুলতানা দিপাও (আওয়ামী লীগ)  চেয়াম্যান নির্বাচিত হয়েছেন।

বর্তমানে দেশে মোট ইউপির সংখ্যা ৪ হাজার ৫৭৪টি। এর মধ্যে ৪ হাজার ১৩৭টিতে নির্বাচনের জন্য তফসিল দিয়েছিল ইসি। নানা কারণে বেশকিছু ইউপিতে নির্বাচন স্থগিত থাকায় ভোটগ্রহণ হয়েছে ৪ হাজার ৫৮টিতে। অর্থাৎ আইনি জটিলতা ও অন্যান্য কারণে স্থগিত ৫১৬টি ইউপিতে নির্বাচন হবে পরবর্তীতে।

বাংলাদেশ সময়: ১৯৪০ ঘণ্টা, ৮ মার্চ, ২০২২
ইইউডি/এমএমজেড

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।