ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় ইনিংস নতুনভাবে সাজাচ্ছেন ঢাকাই সিনেমার চিত্রনায়িকা পরীমণি। নব যাত্রায় নতুনভাবে দর্শকদের সামনে নিজেকে মেলে ধরতে চান তিনি।
মাতৃত্বকালীন ছুটি কাটিয়ে পরীমণি সম্প্রতি ফিরেছেন লাইট ক্যামেরা অ্যাকশনের দুনিয়ায়। শুটিং সেটের চিরচেনা মায়া মায়া গন্ধ গায়ে মাখছেন অনেক দিন পর। ইতোমধ্যেই এসেছে তার নতুন কাজের অনেক খবর। নতুন এ অধ্যায়ের যাত্রায় শক্ত পায়েই হাঁটছেন পরী।
মঙ্গলবার (২৪ অক্টোবর) পরীমণির জন্মদিন। প্রতি বছর দিনটি ঘটা করে পালন করলেও এবার হচ্ছে সম্পূর্ণ ব্যতিক্রম। জন্মদিনেও এবার শুটিংয়ে অংশ নিচ্ছেন তিনি। ‘ডোডোর গল্প’ সিনেমার মাধ্যমে দুই বছরের বিরতি পেরিয়ে চেনা ছন্দে ফিরেছেন পরীমণি। এ যেন পুত্র রাজ্যকে সঙ্গে নিয়ে এগিয়ে যাওয়ার যুদ্ধে অভিনেত্রী। দ্বিতীয় ইনিংস, নতুন কর্ম পরিকল্পনা ও সমসাময়িক প্রসঙ্গে অকপটে বলেছেন তিনি।
শুরুতেই জন্মদিন প্রসঙ্গে পরীমণি বলেন, সুবিধাবঞ্চিতদের সঙ্গে থাকতেই আমার ভালো লাগে। যাদের বাবা-মা নেই জন্মদিনের শুরুটা তাদের সঙ্গেই কাটাচ্ছি। আমার এই বিশেষ দিনটি এদের জন্যই। নানা ভাই অসুস্থ তাই এবার জন্মদিন ঘিরে সেরকম আয়োজন করিনি। কারণ প্রতিবছর নানার হাত ধরেই কেক কাটি। এবার সেটা হচ্ছে না। হয়তো সে সুস্থ থাকলে হয়ত কাছের মানুষদের নিয়ে কেক কাটা হতো।
ঘরোয়াভাবেই দিনটি পার করছি। সবচেয়ে মজায় বিষয় হচ্ছে জন্মদিনের মাসে ২০ তারিখের পর কখনো আমার শুটিং ছিল না। এমনও গেছে পুরো মাস শুটিং রাখিনি। কারণ এ মাসটিই আমার জন্য স্পেশাল। জন্মদিনের মাসটা অন্যরকম ভাবে কাটাতাম। যা সারাজীবনই থাকবে। তবে এখন একমাত্র সন্তান রাজ্যেকে নিয়ে সব ভাবনা। এবার জন্মদিনেও শুটিং করছি।
অনেকেই বলছেন, বিবাহবিচ্ছেদের কারণেই কি এবার জন্মদিন পালন না করার সিদ্ধান্ত? এমন প্রশ্নে পরীমণি বলেন, না, ওটা জীবন থেকে ঝেরে ফেলেছি। ওটা আমার জীবনে এখন আর নেই। এর রেষও জীবনে রাখতে চাই না। আমি যেটা ফেলে দেই মানে ফেলে দেই, একদম ঝেরে ফেলে দেই। কখনো এটা আমার জীবনে প্রভাব বিস্তার করবে না। এখন শুধু পদ্ম (পুত্র রাজ্যর ডাক নাম) আর কাজ ছাড়া আমার জীবনে কিছু নেই।
ইতিপূর্বে দেখা গেছে, পদ্ম জন্মের পর থেকেই প্রতি মাসের ১০ তারিখ কেক কাটতে। ধারাবাহিকতা থাকবে? উত্তরে পরীমণি বললেন, আমি খুব করে চাইব। ১৩ মাসের সময় নিজে আয়োজন করেছিলাম। চলতি মাসে না চাইতোও ‘ডোডোর গল্প’ সিনেমার শুটিংয়ে কেক কাটার আয়োজন করা হয়। বিষয়টি আমাকে সারপ্রাইজ করেছে। ১৪ মাসে এভাবেই কেক কাটা। হয়তো সামনে এভাবেই পার হবে। তবে যে জীবনে কোনো কিছুর মূল্যায়নই দিতে পারে না তার কাছে কিছু আশা করাও ঠিক না। প্রতিটি মানুষের জীবনে একটা পার্ট থাকে। চেষ্টা তো কম করিনি। খুব করেই সংসারটি করতে চেয়েছিলাম। সবার জীবনে যে সবকিছু হবে তা নিয়মে নেই। আমার জীবনে সুখের ফুলস্টপ রাজ্যে। আর কিছু চাওয়া-পাওয়া নেই। এখন সব ভাবনা সন্তানকে ঘিরেই।
ক্যারিয়ারে দ্বিতীয় ইনিংস বেশ গুছিয়ে শুরু করেছেন পরীমণি। নতুন করে জীবন সাজানোর বিষয়ে এই অভিনেত্রী বলেন, এটা নিয়ে আর ভাবতেই চাই না। এখন সন্তান ঘিরেই সবকিছু। জীবনে অনেক সময় নষ্ট করেছি আর নয়। ইমোশন যদি কেউ বুঝতেই না পারে সেটা নিয়ে মন খারাপ করেও লাভ নেই। তাকে নিয়ে হায়-হুতাশ করে সময় নষ্ট করা। বিয়ে শব্দটি নিয়ে আর ভাবতে চাই না। সন্তানকে অনেক বড় দেখতে চাই। রাজ্য আর কাজ ছাড়া কিছু ভাবতে চাই না। বাকিটা ভবিষ্যতে দেখা যাবে।
ভবিষৎতে পরীমণি অনেক গোছানো দেখতে চান পরীমণি। তার ভাষ্য, আগে কখনো পরিকল্পনা করে কাজের সিদ্ধান্ত নেইনি। আমার জীবনে লক্ষ ছিল না। এখন আমার জীবনে সুন্দর একটি লক্ষ আছে। আমার সন্তানকে প্রপার মানুষ করতে চাই। আর ক্যারিয়ারের গ্রাফটা সুন্দর করে সাজাতে চাই। রাজ্যের মা এই কাজগুলো করে গেছে, বড় হয়ে এটা যেন গর্ব নিয়ে বলতে পারে। এই জিনিসটা গর্বের জায়গায় নিয়ে যেতে চাই।
দুই বছর শুটিং থেকে বিরতিতে ছিলেন। লাইট-ক্যামেরা আর অ্যাকশনে ফেরার প্রসঙ্গে পরীমণি বলেন, যখন ‘ডোডোর গল্প’র শুটিংয়ের তারিখ নির্ধারণ করা হয় তখন বুকের ভেতর কেমন যেন করছিল। শুটিং শুরু হয় ৮ অক্টোবর। ১ তারিখ আসতেই দিন গুণতে শুরু করি। এমন করতে করতে শুটিং চলে আসল। শুটিংয়ে যেতে যেতে ভাবছিলাম সবকিছু অচেনা হবে। বুকের মধ্যে ধড়ফড় করছিল। শুটিংয়ে যাওয়ার পর মনে হয়েছে আমি দুই বছর দূরে ছিলাম না। সবকিছু চেনা জানাই। আমার বিরতিই ছিল না। যারা বিশ বছর ধরে কাজ থেকে দূরে রয়েছেন তারা ফিরে আসলেও একই উপলব্ধি হবে। শুটিংয়ে থাকলে নিজেকে জীবন্ত ও প্রাণবন্ত লাগে।
বিরতির পর ‘ডোডোর গল্প’ বেছে নেওয়ার কারণ জানিয়ে এক কথায় পরীমণি বললেন, গল্পের কারণে।
বিস্তারিত বললেন এভাবে, এতটাই চমৎকার একটি গল্প যে, না বলার সুযোগ ছিল না। তাছাড়া আমার লুক এবং বর্তমান পরিস্থিতি সবকিছু মিলিয়ে এটা বেছে নেওয়া। আমি চাইলেও ঝুঁকি নিয়ে কাজ করতে পারব না। কিংবা ঢাকার বাহিরে গিয়ে সেভাবে শুটিং করতে পারব না। আমার অনেক পছেন্দের গল্পও হাতে রয়েছে। যা ধারাবাহিকভাবে শুরু করব। অনম (অনম বিশ্বাস) ভাইয়ের কাজটিও চ্যালেঞ্জিং। প্রথমবার হইচই-এর সঙ্গে কাজ করব। কাজটি নিয়ে ভীষণ আশাবাদী। নতুন বছর কাজটি শুরু হবে। ‘খেলা হবে’ শুরু হতে সময় লাগবে।
বিভিন্ন কারণে বিভিন্ন সময় পরীমণিকে অনেক সমালোচনায় পড়তে হয়েছিল। কখনো পরিকল্পনা করে কাজ করেননি। কখনো চিন্তা করে প্রেমে পড়েননি। তবে এখন ভেবে-চিন্তে এগিয়ে যেতে চান পরীমণি। বললেন, এখন কোনো কিছু শুরু করার আগে চিন্তা ভাবনা করে এগোনো উচিত। না হলে এগুলো ক্যারিয়ারে প্রভাব পড়ে। আগে অনেক অনুরোধের ঢেঁকি গিলতে হয়েছে। কেউ একটা গল্প নিয়ে এসে বলত- মা প্লিজ কাজটা করে দেও। এমন অনেক কাজ করেছি, তবে এখন থেকে সে সব বাদ। পুরোপুরি পেশাদার হতে বাধ্য হয়েছি।
যোগ করেন বলেন, জীবনে আর ভুল করতে চাই না। এখন সুন্দর করে ‘না’ বলতে শিখেছি। আগে ‘না’ বলতে পারতাম না। যার কারণে অনেক অনুরোধ ঢেঁকি গিলতে হয়েছিল। যেটা নিজের কাছে মনে হয় কাজটি করা দরকার এখন থেকে সেটাই করব, করছি। আর কখনোই পরীমণিকে নিয়ে সমালোচনা হবে না। আগে যে কাজটি একবার না ভেবেই করে ফেলতাম এখন সেটি করার আগে একশো বার চিন্তা করি। আর আমরা মানুষ তো, সারাদিন যদি একটা মানুষের খুত খুঁজতে থাকেন তাহলে তার ভালো জিনিসটা কখনোই চোখে পড়বে না। আমার অনেক ভালো কাজ আছে সেসব না দেখে সবাই নেতিবাচক দিকটাই খুঁজে।
বর্তমান কাজের ব্যস্ততার বিষয়ে পরীমণি জানান, অনম বিশ্বাসের ওয়েব সিরিজ ‘রঙিলা কিতাব’, রায়হান রাফির একটি সিনেমা ও তানিম রহমান অংশুর ‘খেলা হবে’। শিগগিরই একটি কোম্পানির শুভেচ্ছাদূত হব। তবে জন্মদিনে আর কখনো কাজের খবর দেব না। আমাকে নিয়ে যাদের অনেক মুখস্থ জিনিস জানা আছে এখন থেকে তার বাইরে আমাকে পাবে। সব আলোচনা ছাপিয়ে সবাই নতুন এক পরীকে পাবেন। আমি এখন আর এভেলেবেল না। জেলে যাওয়ার পর তিন-চারটা জামাইয়ের কথা ছড়িয়েছে। যা আমি নিজেও জানি না। এসব নিয়ে শিগগিরই কথা বলব। চুপ থাকলে একটা অসত্য বিষয়ও না জেনেশুনেই মানুষ বিশ্বাস করে ফেলে। তাই এটা নিয়ে কথা বলব। এ ব্যাপারে উকিলের সঙ্গেও কথা হয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৫৫১ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৪, ২০২৩
এনএটি