ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ৫ বৈশাখ ১৪৩১, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫

বিনোদন

অভিনেতা চ্যালেঞ্জারের চিরবিদায়

বিনোদন প্রতিবেদক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০১৩৩ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৩, ২০১০
অভিনেতা চ্যালেঞ্জারের চিরবিদায়

অভিনেতা চ্যালেঞ্জার নেই। প্রিয়জনদের কাঁদিয়ে চলে গেছেন শেষ গন্তব্যে।

একজন চরিত্রাভিনেতা হয়েও তিনি পেয়েছিলেন তুমুল জনপ্রিয়তা।  

১২ অক্টোবর মঙ্গলবার রাত সাড়ে ৯টায় চ্যালেঞ্জার রাজধানীর মোহাম্মদপুরের শেখেরটেকে নিজ বাসভবনে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন (ইন্না লিল্লাহি...রাজিউন)। মৃত্যুকালে গুণী এই অভিনেতার বয়স হয়েছিল ৫২ বছর। দীর্ঘদিন ধরে তিনি ব্রেন ক্যান্সারে ভুগছিলেন।

জনপ্রিয় কথাশিল্পী ও নির্মাতা হুমায়ূন আহমেদের হাত ধরেই চ্যালেঞ্জার অভিনয়ে আসেন। তার আসল নাম এএফএম তোফাজ্জল হোসেন (সাদেক)। চ্যালেঞ্জার নামটি হুমায়ূন আহমেদেরই দেওয়া। এ নামেই তিনি অভিনেতা হিসেবে জনপ্রিয়তা লাভ করেন।

হুমায়ূন আহমেদের ‘হাবলঙ্গের বাজারে’ নাটকের মধ্য দিয়ে চ্যালেঞ্জারের অভিনয় জীবন শুরু হয়। তার অভিনীত উল্লেখযোগ্য নাটক হচ্ছে ‘উড়ে যায় বকপী’, ‘জুতা বাবা’, ‘সাদেক দফাদার’, ‘ওয়ারেন’, ‘ঢোলবাদ্যি’, ‘কালা কইতর’, ‘আমরা তিনজন’, ‘পক্ষীরাজ’, ‘খোয়াবনগর’ প্রভৃতি।

প্রায় দুইশ টিভি নাটকে অভিনয় করেছেন চ্যালেঞ্জার। অভিনয় করেছেন চলচ্চিত্রেও। অভিনীত চলচ্চিত্রের মধ্যে শহীদুল ইসলাম খোকনের ‘লালসবুজ’, হুমায়ূন আহমেদের ‘শ্যামল ছায়া’ ও ‘নয় নম্বর বিপদ সংকেত’, আমজাদ হোসেনের ‘কাল সকালে’ উল্লেখযোগ্য।

গত বছর জুলাই মাসে চ্যালেঞ্জারের ব্রেন ক্যান্সার ধরা পড়ে। চিকিৎসার জন্য তাকে সিঙ্গাপুরের মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে পাঁচ মাস চিকিৎসা শেষে তিনি দেশে ফেরেন। কিন্তু তার শারীরিক অবস্থার উন্নতি না হওয়ায় এক মাস পর আবারও তাকে সিঙ্গাপুরে নেওয়া হয়। সিঙ্গাপুরের মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালের ডাক্তারদের কাছ থেকে তার শারীরিক অবস্থার উন্নতির আশ্বাস না পাওয়ায় তাকে শেষ পর্যন্ত দেশেই ফিরিয়ে আনা হয়। আর তখন থেকেই বিভিন্ন সময়ে তাকে হাসপাতালেই থাকতে হয়েছে। গত ঈদ-উল-ফিতরে তিনি তার পরিবারের সাথে কাটালেও পরদিনই তাকে বাংলাদেশ মেডিকেলে অসুস্থ অবস্থায় ভর্তি হতে হয়। সে সময় তিনি দশ দিন আইসিসিইউতে এবং পরবর্তী দশ দিন সাধারণ কে চিকিৎসাধীন ছিলেন। গত নয় দিন আগে তাকে তার শেখেরটেকের বাসায় নিয়ে আসা হলেও তার শারীরিক অবস্থা ছিল বেশ নাজুক। মঙ্গলবার বিকেল থেকেই তিনি প্রচ- জ্বর অনুভব করেন। এ সময় তাকে ওষুধ সেবন করানো হলেও তিনি অচেতন হয়ে পড়েন এবং রাত সাড়ে নয়টায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।

অভিনেতা চ্যালেঞ্জার ১৯৫৯ সালে ঢাকার খিলগাঁওয়ে জন্মগ্রহণ করেন। তিন ভাই ও দুই বোনের মধ্যে তিনি ছিলেন সবার বড়। মৃত্যুকালে স্ত্রী, এক ছেলে, এক মেয়েসহ বহু গুণগ্রাহী রেখে গেছেন।

১৩ অক্টোবর বুধবার সকাল ১০টায় তার বাসার পার্শ্ববর্তী শেখেরটেক জামে মসজিদে নামাজে জানাজা শেষে অভিনেতা চ্যালেঞ্জারের মৃতদেহ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে নিয়ে যাওয়া হয়। তাকে একনজর দেখার জন্য সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব, শিল্পী, কলাকুশলী ও ভক্ত-অনুরাগীরা জড়ো হন। ফুলে ফুলে এই শক্তিমান অভিনেতা শেষ শ্রদ্ধা জানানো হয়। এরপর বিকেল ৩টার দিকে গ্রামের বাড়ি ধামরাইয়ের পাইকপাড়ায় মায়ের কবরের পাশে তাকে দাফন করা হয়েছে।

প্রিয়জনদের কথা

হুমায়ূন আহমেদ
চ্যালেঞ্জারের মৃত্যুতে শোকাহত বরেণ্য কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদ বাংলানিউজকে বলেন, এই মানুষটা জন্মগতভাবেই অভিনয়প্রতিভা নিয়ে পৃথিবীতে এসেছিলেন। কিন্তু তিনি নিজে তার এই বিশেষ ক্ষমতা সম্পর্কে দীর্ঘদিন অবগত ছিলেন না। তার সঙ্গে খুবই অন্তরঙ্গ সময় কাটানো কিছু স্মৃতি আমার আছে। আমি একজন স্বজনকে হারিয়ে বেদনাহত।
 
ডা. এজাজুল ইসলাম
চ্যালেঞ্জারের সঙ্গে বহু নাটকে পাশাপাশি অভিনয় করেছেন ডা. এজাজুল ইসলাম। চ্যালেঞ্জার সম্পর্কে তিনি বলেন, খুবই প্রাণবন্ত মানুষ ছিলেন চ্যালেঞ্জার ভাই। খুবই আড্ডাবাজ ছিলেন। জমিয়ে আড্ডা দিতে ভালোবাসতেন। কথায় কথায় তিনি চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিতেন। হুমায়ূন স্যার মজা করে তাকে চ্যালেঞ্জার বলে ডাকতেন। ঐ নামের আড়ালেই তার আসল নাম ঢাকা পড়ে যায়। এই প্রাণবন্ত লোকটা যে ভেতরে ভেতরে ব্রেন ক্যান্সারের মতো ভয়াবহ একটা রোগ পুষছেন, অসুস্থ হয়ে শয্যাশায়ী হওয়ার আগে কাউকেই বুঝতে দেননি।

ফারুক আহমেদ
চ্যালেঞ্জারের আরেক সহ-অভিনেতা ফারুক আহমেদ বলেন, ভিতরে-বাইরে একজন ভালো মানুষ বলতে যা বোঝাই তিনি ছিলেন তাই। শুটিংয়ের ফাঁকে মজার মজার গল্প বলে পরিবেশকে মাতিয়ে রাখতে তিনি ছিলেন ওস্তাদ। তার অনেক সরস মন্তব্য আজও আমার কানে ভাসে। প্রায় দেড় বছর ধরে তিনি অসুস্থ ছিলেন। ব্যক্তিগত ব্যস্ততার কারণে তার সঙ্গে বেশিক্ষণ সময় কাটানো সম্ভব হয়নি, এ কারণে নিজেকে আমার অপরাধী মনে হচ্ছে।

মুনিরা মিঠু
অভিনেতা চ্যালেঞ্জারের ছোটবোন অভিনেত্রী মুনিরা মিঠু বাংলানিউজকে বলেন, পরিবারের সবার কাছে তিনি ছিলেন ছায়াবৃক্ষের মতো। প্রত্যেকের প্রতি তার ছিল সমান নজর। নিজে ত্যাগ স্বীকার করে পরিবারের অন্যদের আনন্দে-স্বাচ্ছন্দে রাখতে চাইতেন সব সময়। জীবনের শেষ কয়টা দিন তিনি খুব কষ্ট করে গেছেন। শারীরিক কষ্টের চেয়ে অভিনয় করতে না পারার কষ্টটাই ছিল তার কাছে বড়। আমার অসুস্থ ভাইয়ের চিকিৎসার জন্য অনেকেই নানাভাবে সহযোগিতা করেছেন। তাদের কাছে আমি আজীবন কৃতজ্ঞ হয়ে রইলাম। সবার কাছে এখন আমাদের একটাই অনুরোধ : আমার ভাইয়ের বিদেহী আত্মা যেন শান্তিতে থাকে সে জন্য দোয়া করবেন।

বাংলাদেশ স্থানীয় সময় ১৫২০ অক্টোবর ১৩, ২০১০

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
welcome-ad