ঢাকা, মঙ্গলবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

বিনোদন

‘সোহরাব-রুস্তম’খ্যাত নায়িকা বনশ্রীর ঠাঁই মিলেছে আশ্রয়ণ প্রকল্পে

ইমতিয়াজ আহমেদ, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫২৩ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৩, ২০২৩
‘সোহরাব-রুস্তম’খ্যাত নায়িকা বনশ্রীর ঠাঁই মিলেছে আশ্রয়ণ প্রকল্পে নব্বই দশকের আলোচিত নায়িকা বনশ্রীর ঠাঁই মিলেছে আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরে

মাদারীপুর: একসময় রুপালি পর্দা কাঁপিয়েছেন চিত্রনায়িকা বনশ্রী। ‘সোহরাব-রুস্তম’ ও ‘মহা ভূমিকম্প’সহ আলোচিত কয়েকটি ঢাকাই সিনেমার নায়িকা তিনি।

তবে বেশ কয়েকবছর ধরে সময়টা ভালো কাটছে না একসময়ের জনপ্রিয় নায়িকার। মাথা গোঁজার আশ্রয়ও হারান একপর্যায়ে।  

শহুরে জীবনের নানা চড়াই-উতরাই শেষে তিনি ফিরে এসেছেন নিজ এলাকা মাদারীপুরের শিবচর উপজেলায়। নানা জায়গায় ঘুরে অবশেষে এ চিত্রনায়িকার ঠাঁই মিলেছে আশ্রায়ণ প্রকল্পের একটি ঘরে।  

ছেলে মেহেদী হাসান রোমিওকে নিয়ে থাকছেন সেখানেই। প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে অনুদান হিসেবে পাওয়া ২০ লাখ টাকার সুদ হিসেবে মাসে মাসে যা পাচ্ছেন, তা দিয়েই চলছে তার সংসার।

শিবচরের মাদবরের চর ইউনিয়নের মেয়ে বনশ্রী। ১৯৪৪ সালের ২৩ আগস্ট এই এলাকার শিকদারকান্দি গ্রামে জন্ম তার। বাবা মজিবুর রহমান মজনু শিকদার ও মাতা সবুরজান রিনা বেগমের দুই মেয়ে ও এক ছেলের মধ্যে বনশ্রী বড়। সাত বছর বয়সে পরিবারের সঙ্গে রাজধানী ঢাকায় গিয়ে বসবাস শুরু করেন তিনি।

১৯৯৪ সালে সোহরাব-রুস্তুম সিনেমার মধ্য দিয়ে রূপালি পর্দায় অভিষেক ঘটে বনশ্রীর। নায়ক ইলিয়াস কাঞ্চনের বিপরীতে ব্যবসায় সফল হয় ছবিটি। পরিচিতি পান বনশ্রী। এর পর আরে ৮/১০ টি ছবিতে অভিনয় করেন । নায়ক মান্না, আমিন খান, রুবেলের বিপরীতে নায়িকা হিসেবে অভিনয় করেন বনশ্রী। রূপালী পর্দার মতো জীবনও হয়ে উঠে রঙিন।  

তবে বর্তমানে অভাব-অনটন নিত্যসঙ্গী তার। আর্থিক কষ্টে করোনাকালে ঢাকা ছেড়ে নিজ উপজেলায় ফিরে আসেন। প্রথমে ভাড়া ছিলেন। পরে মাদবরের চর ইউনিয়নের গুচ্ছ গ্রামের আশ্রায়ণ প্রকল্পের একটি ঘর পান তিনি। এখন থাকছেন সেখানেই।

বনশ্রী জানান, একসময় বিটিভিতে আবৃত্তি করতেন তিনি। ছোটবেলা থেকেই সংস্কৃতিমনা ছিলেন। উদীচী গণসাংস্কৃতিক সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। অভিনয় শেখেন সুবচন নাট্য সংসদে। অভিনয় শেখা থেকেই চলচ্চিত্রে কাজের টান তৈরি হয়। এরপর সুযোগ আসে। অভিনয় করেন সোহরাব-রুস্তম সিনেমায়। তখনকার হিট নায়ক ইলিয়াস কাঞ্চন ছিলেন তার নায়ক!

বনশ্রী বলেন, ’৯০ দশকে বাংলা সিনেমার জয়-জয়াকার ছিল। বিনোদনের মধ্যে বিটিভি আর ছিল সিনেমা হল। সে সময় দশটির মতো সিনেমায় কাজ করেছি। নেশা, মহা ভূমিকম্প, প্রেম বিসর্জন, ভাগ্যের পরিহাস ছবি এক টানা কাজ করি। নায়ক মান্না, রুবেলের সঙ্গে অভিনয় করেছি। তবে চলচ্চিত্র ছেড়ে দেওয়ার পরই আর্থিক অনটনে পড়ি। শাহবাগে একসময় ফুলের ব্যবসায়ও করেছি। বাসে বাসে হকারিও করতে হয়েছে তিনবেলা খাবার জুটাতে।

তিনি বলেন, জীবনে দুঃখ-কষ্টের অধ্যায় শুরু হয়। এক ছেলে আর এক মেয়ে ছিল। মেয়েটি যখন সেভেনে পড়ে তখন অডিও কোম্পানি সঙ্গীতার মালিক সেলিম খান আমার মেয়েকে কিডন্যাপ করে নিয়ে যায়। ওকে মডেল বানায় সে সময়। আমার মেয়েকে আর ফেরত দেয়নি। থানা-পুলিশ করেও ফেরত পাইনি।

৯০ দশকের এই চিত্রনায়িকা এখন চান জীবন-জীবিকা চালানোর মতো কোনো আয়ের উৎস। সেলাইয়ের কাজ জানেন তিনি। এই প্রতিভাবে বাণিজ্যিকভাবে কাজে লাগাতে চান। মেয়েদের পোশাক তৈরি ও বিক্রির ব্যবসায় করতে চান তিনি। কিন্তু যেখানে মৌলিক চাহিদা পূরণই দায় সেখানে এই ব্যবসা দেওয়া স্বপ্ন হয়েই আছে।

বনশ্রী বলেন, সহজ শর্তে ঋণ পেলে আমি ব্যবসাটি দাঁড় করাতে পারতাম। এখানে আরও মেয়েরা সেলাইয়ের কাজ করতে পারত। পোশাক তৈরির কাজ করতাম।

স্বামীসহ পারিবারিক বিষয় নিয়ে জানতে চাইলে এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি তিনি। প্রসঙ্গ এড়িয়ে বর্তমানের দুর্দশার চিত্র তুলে ধরেন।  

তিনি জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অনুদানের ২০ লাখ টাকা পেয়েছেন তিনি দুস্থ শিল্পী হিসেবে। ওই টাকা ব্যাংকে রেখে প্রাপ্ত ইন্টারেস্ট দিয়ে এতোদিন ঢাকায় কোনোমতে চলেছেন। বর্তমানে ব্যাংক থেকে প্রাপ্ত টাকায় ঢাকায় সংসার চালাতে ব্যর্থ হয়ে গ্রামে চলে আসেন।

ছেলের সঙ্গে বনশ্রী

বনশ্রী বলেন, গ্রামে এসে একটি টিনের ঘর ভাড়া নিয়ে থাকা শুরু করি। পরে টেলিভিশন দেখি প্রধানমন্ত্রী মানুষকে গুচ্ছগ্রামে ঘর দিচ্ছেন। পরে আমিও একটি ঘর পেয়েছি। এখন এখানেই থাকছি। ছেলেটাকে স্থানীয় একটি স্কুলে ভর্তি করিয়েছি। পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ে এখন।

এক সময়ের রঙিন জীবনে এখন কালো মেঘের ছায়া বলে জানান তিনি। কষ্ট করে দিন কাটছে তার।

স্থানীয়রা বলছেন, আমরা অনেকেই এই নায়িকাকে টিভিতে, সিনেমা হলে দেখেছি। সেই নায়িকার এখন অসহায় জীবন কাটছে। ভাবতে কষ্ট হয়।

শিবচর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. রাজিবুল ইসলাম জানান, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের আশ্রয়ণ প্রকল্প -২ প্রকল্পের আওতায় শিবচর উপজেলার প্রত্যেকটি ভূমিহীন ও গৃহহীন মানুষকে পুনর্বাসিত করা হয়েছে। সেখানে নায়িকা বনশ্রী একটি ঘর পেয়েছেন। তিনি সেখানে এখন বসবাস করছেন।

বাংলাদেশ সময়: ১৫০৯ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৩, ২০২৩
এসএএইচ
 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।