ঢাকা, রবিবার, ৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ১৯ মে ২০২৪, ১০ জিলকদ ১৪৪৫

বিনোদন

নজরুলের গান বিতর্কে প্রকাশ্যে কাজী পরিবারের দ্বন্দ্ব

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১১৭ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৬, ২০২৩
নজরুলের গান বিতর্কে প্রকাশ্যে কাজী পরিবারের দ্বন্দ্ব

কলকাতা: বলিউড সিনেমা ‘পিপ্পা’র নির্মাতারা সামাজিক মাধ্যমে বিবৃতি প্রকাশ করে নজরুল অনুরাগীদের কাছে ক্ষমা চেয়েছেন। একই সঙ্গে দাবি করেছেন ছবিতে ‘কারার ওই লৌহ কপাট’ গানে যা কিছু পরিবর্তন করা হয়েছে, তা চুক্তিপত্র অনুযায়ী করা হয়েছে।

 

এ নিয়ে নজরুল অনুরাগীরা কিছুটা স্থির থাকলেও বিতর্ক থামছে না কাজী পরিবারে। তাদের দাবি, অবিলম্বে গানটি ছবি থেকে সরিয়ে ফেলতে হবে অথবা নতুন করে সুর দিতে হবে। কিন্তু, এ দাবি তোলার মধ্য দিয়েই সীমাবদ্ধ থাকতে হতে পারে কাজী পরিবারের একাংশকে।  

কেননা চুক্তিপত্র অনুযায়ী দেখা যায়, নির্মাতারা আগেই জানিয়েছিলেন কী পন্থায় গানটি ব্যবহার করা হতে পারে। গানটির রয়্যালটি হিসেবে বহু আগেই নজরুলের পুত্রবধূ প্রয়াত সংগীত শিল্পী কল্যাণী কাজীর ব্যাংক অ্যাকাউন্টে দুই লাখ রুপি পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছিল। কল্যাণী কাজীর সইও রয়েছে তাতে। দ্বন্দ্বের শুরু এখান থেকেই। ‘কারার ওই লৌহ কপাট’ গানের স্বত্ব হস্তান্তর চুক্তি নিয়ে কবির পরিবার আপাতত দুভাগে বিভক্ত।

বৃহস্পতিবার (১৬ নভেম্বর) কলকাতা প্রেস ক্লাবে নজরুলপুত্র অনিরুদ্ধ কাজীর সন্তান অরিন্দম কাজী সংবাদ সম্মেলন করেন। সেখানে ছিলেন স্ত্রী সুপর্ণা ভৌমিক এবং তাদের কন্যা ও পুত্র। বাংলাদেশ থেকে উপস্থিত ছিলেন খিলখিল কাজী। তারা সাংবাদিক সম্মেলনে গানের সুর বিকৃতি নিয়ে যতটা না সোচ্চার ছিলেন, এর চেয়ে বেশি ক্ষোভ দেখালেন কল্যাণী কাজীর ছেলে অনির্বাণ কাজী সম্পর্কে।

তারা বলছেন, পরিবারে কে কে আছেন, কতজন আছেন, তা রিসার্চ না করে চুক্তিপত্রে কেন নির্মাতারা সই করালেন? কল্যাণীর সই নিয়েও তাদের সন্দেহ আছে। চুক্তি হয় ২০২১ সালের ৮ সেপ্টেম্বর। তাদের দাবি, চুক্তিপত্রে কল্যাণী সই করলেও কেন নিচে তারিখ দেননি? 

চুক্তিতে দেখা যায়, অনির্বাণ কাজী তাতে সই করেছেন ওই সালের ৪ সেপ্টেম্বর। অর্থাৎ চুক্তিপত্র তৈরির আগে কীভাবে তাতে সই হলো। অতএব চুক্তিপত্র সঠিক নয়। এ চুক্তি তারা মানছেন না। তারা ছবির নির্মাতা ও অনির্বাণ কাজীর বিরুদ্ধে অভিযোগ নিয়ে আইনের দ্বারস্থ হবেন। প্রয়োজনে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে লিখিতভাবে তারা সব জানাবেন।

চুক্তিপত্র অনুযায়ী দেখা যাচ্ছে, পুরো বিষয়টিই প্রথম থেকে জানেন কল্যাণী কাজী। তাদের দাবি, চুক্তির সময় কল্যাণী কাজীর বয়স প্রায় ৮৬ এবং তিনি অসুস্থ ছিলেন। তাই অনির্বাণ মা কল্যাণীকে সামনে রেখে তাদের ঠকিয়েছেন। প্রসঙ্গত নজরুলের সন্তান অনিরুদ্ধ কাজীর দুই পুত্র এক মেয়ে। অনির্বাণ, অরিন্দম ও অনিন্দিতা। অনিন্দিতা থাকেন বিদেশে।

সব্যসাচী কাজীর কন্যা খিলখিল বলেন, এভাবে তো নির্মাতা দায় ঝেড়ে ফেলতে পারে না। রহমানের কোনো গান নিয়ে কেউ এরকমটা করলে তিনি কি ছেড়ে দিতেন? 

খিলখিলরা চান, গানটিকে ছবি থেকে মুছে দেওয়া হোক, আর যদি রাখতেই হয়, তা হলে মূল সুর অনুসরণ করে গানটি তৈরি করা হোক।  

একই সঙ্গে খিলখিল বলেন, পারিবারিক জটিলতার কারণে এ সমস্যা তৈরি হয়েছে। এর চেয়ে বেশি কিছু বললে আমার পরিবারের লোকজনকেই ছোট করা হবে। অনিরুদ্ধর পরিবারের লোকজন কীভাবে কী করেছেন, আমরা সব্যসাচীর পরিবার কিছুই জানতাম না।  

তিনি বলেন, বাংলাদেশে কেউ যদি আমার কাছ থেকে নজরুলের বিষয়ে অনুমতি চায়, আগে আমরা তাদের বলি রেকর্ড করে আমাদের দেখান। ঠিক থাকলে চুক্তি হবে। এক্ষেত্রে ভারতে যারা থাকেন, তাদের এটাই করা উচিত ছিল। কিন্তু তারা তা করেননি। এ কারণে জটিলতা তৈরি হয়েছে।

এরই সঙ্গে তিনি বলেন, চুক্তিপত্রে লেখা রয়েছে কল্যাণী কাজী ও অনির্বাণ নজরুলের একমাত্র উত্তরসূরি। তাহলে আমরা কারা? তারা না জেনে চুক্তি করেছে কেন। আমাদের সবাইকে জানানো প্রয়োজন ছিল। আমাদের সবার কাছ থেকেই অনুমতি নিতে হবে।

তখনই প্রশ্ন ওঠে এটা কী করে সম্ভব? প্রতিবারই গান গাওয়ার জন্য ভারত-বাংলাদেশ ছুটতে হবে? কেন তারা এ বিষয়ে এক হচ্ছেন না? নজরুল একাডেমি গড়ে তোলা হোক। তাতে দুই পরিবার সঙ্গে থাকুক। খিলখিলের উত্তর, আগামীতে এটি করার প্রস্তুতি নিচ্ছি। এ নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতাকে একবার বলেছিলাম। আবার বলব।

সংবাদ সম্মেলনে অনির্বাণ না থাকলেও তার অভিমত ভাই অরিন্দম সবটাই জানেন। চুক্তির বিষয়ে তাকে জানানোও হয়েছিল। আবার অরিন্দমের কথামতো, ‘পিপ্পা’ মুক্তির পর তিনি জেনেছেন একজনের মাধ্যমে। এর আগে তিনি কিছুই জানতেন না। অনির্বাণ জানান, এখন তিনি শহরের বাইরে। পরে কথা হবে।

২০৩৬ সাল পর্যন্ত নজরুলের বিষয়ে অনুমতি দেওয়ার দায়িত্ব পরিবারের। ভারতে প্রধান ছিলেন কল্যাণী কাজী। তিনি থাকতেন অনির্বাণের কাছে। অরিন্দমের কথা অনুযায়ী, মায়ের সঙ্গে আমাকে দেখা করতে দিত না অনির্বাণ। মায়ের সঙ্গে তার প্রবল সখ্য ছিল।  

যদিও এখন বেঁচে নেই কল্যাণী। তার ওপর মেয়াদ অনুযায়ী, হাতে ১৩ বছর সময় রয়েছে। তাহলে এ সময়ে দেখার দায়িত্ব কার ওপর বর্তাবে। অরিন্দম নাকি অনির্বাণ? সমস্যার সূত্র এখানেই। নজরুল পরিবারের অভ্যন্তরীণ মতবিরোধ আগামী দিনে ‘কারার ওই লৌহ কপাট’ বিতর্কে কী মোড় নেয়, তা-ই এখন দেখার বিষয়।

বাংলাদেশ সময়: ২১১২ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৬, ২০২৩ 
ভিএস/আরএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।