ঢাকা: আশির দশকের ঢাকাই সিনেমার জনপ্রিয় চিত্রনায়ক মাহমুদ কলি অংশ নিচ্ছেন বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতি নির্বাচন। তিনি হচ্ছেন চিত্রনায়িকা নিপুণ আক্তারের প্যানেলের সভাপতি।
তার ভাষ্য, আমি সিনেমা করতে আসিনি। শিল্পী ও অন্যান্যদের মাঝে সেতুবন্ধন করতে এসেছি। শিল্পী সমিতিকে এগিয়ে নিয়ে যাব, শিল্পীদের স্বার্থে কাজ করব, চলচ্চিত্র শিল্পের স্বার্থে কাজ করব।
বিগত দিনে শিল্পী সমিতির কর্মকাণ্ড নিয়ে গুণী এই অভিনেতা বলেন, অনেক কিছু দেখেছেন, শুনেছেন কিন্তু আমি মনে করেছি এবং আমি দেখেছি কিন্তু এই সমস্যার মধ্যেও নিপুণ আক্তার বলিষ্ঠ চিত্তে শিল্পীদের স্বার্থে নিজেকে নিবেদন করেছেন। আমি মনে করলাম এই মুহূর্তে আমার প্রয়োজন আছে। সেটা চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির জন্য, চলচ্চিত্র শিল্পের জন্য। আমি আমার দক্ষতা, বিচক্ষণতা, অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে নিপুণ আক্তারকে সাথে নিয়ে এবং পুরো কমিটিকে সাথে নিয়ে একসঙ্গে এগিয়ে যাব। শিল্পীদের জন্য এবং শিল্পের জন্য কাজ করব এই বিশ্বাসে তার সঙ্গে সভাপতি হিসেবে দাঁড়ানোর জন্য সম্মতি দিয়েছি।
এর আগে দুই দফা করে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছেন মাহমুদ কলি। তবে এবারের নির্বাচনে তার প্রতিদ্বন্দ্বী একাধিকবার সমিতির নির্বাচিত সভাপতি মিশা সওদাগর৷ বিষয়টি নিয়ে চিহ্নিত কিংবা চাপ অনুভব করবেন কিনা?
এমন প্রশ্নে মাহমুদ কলি বলেন, মিশা সওদাগর আমার ছোট ভাই। আমি যখন সভাপতি ছিলাম, সাধারণ সম্পাদক ছিলাম, মিশা সবসময় আমার পাশে থেকে শিল্পের জন্য শিল্পীদের জন্য কাজ করেছে। মিশা ভালো মানুষ কিন্তু নির্বাচন নির্বাচনের মত হবে। নির্বাচন যেন সুষ্ঠু হয়, প্রত্যেক সদস্য যেন বিচার-বিবেচনা করে ভোট দেয় সেটিই হবে বড় কথা। মিশা আমার ছোট ভাই, সে ভালো মানুষ, কোন সমস্যা নেই।
তিনি আরও বলেন, একটা কথা বলেছি- আমি নেতৃত্বে এসেছি কিন্তু অভিনয় করতে আসিনি। আমি নেতৃত্বে এসে সকল শিল্পীদের নিয়ে সেতু বন্ধন করার চেষ্টা করব। চলচ্চিত্রের সংগঠনগুলোকে একত্র করে শিল্পের সমস্যা সমাধানের জন্য এগিয়ে যেতে হবে।
বলা প্রয়োজন, মাহমুদ কলি ছিলেন আশি ও নব্বই দশকের নায়ক। তার পারিবারিক নাম মাহমুদুর রহমান উসমানী। তিনি বাংলাদেশের স্বনামধন্য চিত্রনির্মাতা আজিজুর রহমান বুলির ছোট ভাই। মূলত ভাইয়ের হাত ধরেই তিনি চলচ্চিত্রে আসেন। এরপর দেখিয়েছেন অভিনয়ের মুন্সিয়ানা।
মাহমুদ কলির প্রথম চলচ্চিত্র ‘মাস্তান’। তিনি এই চলচ্চিত্রে সহ-অভিনেতার ভূমিকায় ছিলেন। এরপর ১৯৭৮ সালে অশোক ঘোষ নির্মিত ‘তুফান’ চলচ্চিত্রে মূল নায়কের ভুমিকায় অভিনয় করেন।
মাহমুদ কলি ৬১টি চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন। তারমধ্যে ২টি সিনেমা মুক্তির মুখ দেখেনি। তারমধ্যে উল্লেখযোগ্য ‘লাভ ইন সিঙ্গাপুর’, ‘গোলমাল’, ‘নেপালি মেয়ে’, ‘শ্বশুরবাড়ি’, ‘সুপারস্টার’, ‘গ্রেফতার’, ‘খামোশ’, ‘মহান’, ‘দেশ বিদেশ’, ‘মা বাপ’ ইত্যাদি।
শাবানা, ববিতা, রোজিনা, অলিভিয়া, দিতি, চম্পা, অঞ্জনা, সূচরিতা, নূতনসহ অনেক নায়িকার সঙ্গেই তাকে দেখা গেছে সপ্রতিভ। তিনি কলকাতার দেবশ্রী রায়ের বিপরীতে ‘সবার উপরে’ চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন। এর পরিচালক ছিলেন শওকত জামিল।
১৯৯৪ সালে নায়ক হিসেবে মাহমুদ কলি অভিনীত সর্বশেষ মুক্তি পায়। এর নাম ছিল ‘মহাগ্যাঞ্জাম’। তবে ২০০২ সালে তাকে আবারও দেখা গিয়েছিলো ‘আবার একটি যুদ্ধ’ চলচ্চিত্রে। সেখানে তিনি উকিল চরিত্রে অতিথি হিসেবে উপস্থিত হয়েছিলেন।
অভিনয়ের পাশাপাশি দীর্ঘদিন চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির নেতৃত্বের সঙ্গেও জড়িত ছিলেন তিনি। ১৯৯১ সালে তিনি সমিতির সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। তার সঙ্গে সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছিলেন খল অভিনেতা আহমেদ শরীফ। এরপর তিনি একই প্যানেল থেকে নির্বাচিত হয়ে ১৯৯৫-১৯৯৭ সাল পর্যন্ত সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন।
তবে এর পরের বছরে তিনি অভিনেতা মিজু আহমেদকে নিয়ে নতুন প্যানেলে সভাপতি পদে প্রার্থী হন এবং নির্বাচিত হন। ৯৭ সাল থেকে ২০০২ সাল পর্যন্ত টানা দুই মেয়াদে সভাপতি নির্বাচিত হয়ে দায়িত্ব পালন করেন তিনি।
১৯৯৭ সালে তিনি টিভি নাটক নির্মাণেও নাম লেখান। ‘তাদের কথা’ নামি ছিল তার প্রথম নাটকের। এরপর তিনি ‘আলোকিত আঙিনা’ নামে আরও একটি ধারাবাহিক নাটক নির্মাণ করেন।
প্রসঙ্গত, আগামী ১৯ এপ্রিল চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা থাকলেও, তা পরিবর্তন করে ২৭ এপ্রিল ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন। আসন্ন নির্বাচনে মিশা সওদাগর-মনোয়ার হোসেন ডিপজল থাকবেন একটি প্যানেলে। অপর প্যানেলেটি হচ্ছে কলি-নিপুণের।
বাংলাদেশ সময়: ২১৫৮ ঘণ্টা, মার্চ ১৭, ২০২৪
এনএটি