ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৭ রমজান ১৪৪৫

বিনোদন

চাষী নজরুল ইসলাম সম্পর্কে কতটা জানেন?

জনি হক, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২৪০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১১, ২০১৫
চাষী নজরুল ইসলাম সম্পর্কে কতটা জানেন? চাষী নজরুল ইসলাম

দেশীয় চলচ্চিত্রের গুণী পরিচালকদের তালিকায় ওপরের দিকেই থাকবে চাষী নজরুল ইসলামের নাম। পাঁচ দশকেরও বেশি সময় ধরে ক্যামেরার পেছনে সক্রিয় ছিলেন তিনি।

কিন্তু লিভার ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে না ফেরার দেশে চলে গেলেন প্রাণবন্ত এই মানুষটি। ১১ জানুয়ারি রোববার ভোর পাঁচটা ৫৫ মিনিটে এই চলচ্চিত্র নির্মাতা মৃত্যুবরন করেন। তাকে হারিয়ে চলচ্চিত্রাঙ্গনে এখন শোকের ছায়া। তার জীবনের কম জানা কিছু ঘটনা জেনে নিন।

* ১৯৪১ সালের ২৩ অক্টোবর বিক্রমপুর শ্রীনগর থানার সমষপুর গ্রামে জন্মেছিলেন চাষী নজরুল ইসলাম। তিনি ছিলেন মা-বাবার জ্যেষ্ঠপুত্র। বাবা মোসলেহ উদ্দিন আহম্মদ ছিলেন ভারতের বিহারে টাটা আয়রন অ্যান্ড স্টিল কোম্পানির ইঞ্জিনিয়ার। চাষীর পূর্বপুরুষরা ছিলেন লস্কর বংশের।

* চাষীর নাম রেখেছিলেন শেরেবাংলা এ. কে. ফজলুল হক। তার সঙ্গে রাজনীতি করতেন চাষীর মামা চাষী ইমাম উদ্দিন। নবযুগ ও লাঙ্গল পত্রিকার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন তিনি। সেই সূত্রেই একদিন ফজলুল হককে একটা নাম দিতে বলা হলে তিনি চাষী ইমাম উদ্দিনের ‘চাষী’ আর কাজী নজরুল ইসলামের ‘নজরুল ইসলাম’ মিলিয়ে নাম দেন ‘চাষী নজরুল ইসলাম’।

* বাবার চাকরিস্থল জামশেদপুরে চাষী নজরুল ইসলামের শৈশব কেটেছে। বিক্রমপুরে চাষীদের বাড়ির পাশেই ছিলো একটা প্রাথমিক বিদ্যালয়। এর প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন চাষীর মামা চাষী ইমাম উদ্দিন। এখানেই ক্লাস ওয়ানে ভর্তি করা হয় তাকে। এখন এর নাম সমরপুর হাইস্কুল ও কলেজ। ক্লাস টুতে ওঠার পর চাষীর বাবা আবার তাকে নিয়ে গেলেন জামশেদপুরে। ওখানে বাবার প্রতিষ্ঠিত বেঙ্গল মুসলিম স্কুলে ফাইভ পর্যন্ত পড়েন তিনি। তারপর ক্লাস সিক্স-সেভেন পড়েন গোলামুড়ি মাধ্যমিক স্কুলে। তারপর আরডি টাটা হাইস্কুলে এইচএসসি পাস করেন চাষী।

* ১৯৬১ সালে ‘আছিয়া’ ছবির মাধ্যমে খ্যাতিমান পরিচালক ফতেহ লোহানীর সহকারী পরিচালক হিসেবে কাজ শুরু করেছিলেন চাষী নজরুল ইসলাম। এর দুই বছর পর ‘দুই দিগন্ত’ ছবিতে কাজ করেন প্রখ্যাত সাংবাদিক ও চলচ্চিত্রকার ওবায়েদ-উল-হকের সহকারী হিসেবে কাজ করেন। ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধের পর তিনিই প্রথম পরিচালনা করেন মুক্তিযুদ্ধভিক্তিক চলচ্চিত্র ‘ওরা ১১ জন’। এটি মুক্তি পায় ১৯৭২ সালে।

* ১৯৫৭ সালে বাবার মৃত্যুর পর সংসারের বড় ছেলে হিসেবে এজি অফিসের পোস্ট-সর্টার হিসেবে ১৯৬৯ পর্যন্ত চাকরি করেছেন চাষী নজরুল ইসলাম। এফডিসি মাত্র তখন গড়ে উঠছে। চাকরির ফাঁকে ফাঁকে ফতেহ্ লোহানীর প্রধান সহকারী আউয়াল সাহেবের সঙ্গে যোগাযোগ রাখেন তিনি। একই সঙ্গে আলী মনসুর সাহেবের কৃষ্টি সংঘের সঙ্গে মঞ্চে অভিনয় করেনি। ছবির প্রতি তার ভালো লাগার কথা জেনে খালাতো বোনের স্বামী সৈয়দ আওয়াল একদিন চাষীকে পরিচয় করিয়ে দেন পরিচালক-অভিনেতা ফতেহ লোহানীর সঙ্গে। তখন ‘আছিয়া’ ছবির কাজ চলছিলো। এতে স্বল্প উপস্থিতির একটি চরিত্রে অভিনয়ের জন্য চাষীকে নেওয়া হয়। কিন্তু পরদিন তাকে দেওয়া হয় সহকারী পরিচালকের দায়িত্ব। ১৯৬১ সালে জুন মাসে ক্যামেরার পেছনে কাজ শুরু করেন চাষী।

* ১৯৭১ সালে মুক্তিকামী বাঙালিদের সঙ্গে চাষী নজরুল ইসলামও মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেন। স্বাধীনতা অর্জনের পর বাংলাদেশের প্রথম মুক্তিযুদ্ধভিক্তিক চলচ্চিত্র ‘ওরা ১১ জন’ পরিচালনা করেন তিনি। ১৯৭২ সালে এ ছবির মাধ্যমে পরিচালক হিসেবে তার আত্মপ্রকাশ ঘটে। পরিচালনার ফাঁকে ফাঁকে নিয়মিত বেতার ও টেলিভিশনে সান্ধ্যকালীন অভিনয় চালিয়ে যান তিনি।

* চলচ্চিত্র পরিচালনার পাশাপাশি বাংলাদেশ চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতিতে চারবারের মতো সভাপতি হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন। এ ছাড়া চলচ্চিত্র সেন্সর বোর্ডের সদস্য, যৌথ প্রযোজনা কমিটির নির্বাহী সদস্য, চলচ্চিত্র প্রযোজক ও পরিবেশক সমিতির সদস্য, ঢাকা মেট্রোপলিটন ফুটবল লীগ অ্যাসোসিয়েশনের (ডামফা) ফুটবল সম্পাদক, ব্রাদার্স ইউনিয়ন ক্লাবের ভাইস প্রেসিডেন্ট পদে দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি।

* চাষী নজরুল ইসলাম চলচ্চিত্র পরিচালনার জন্য অনেক পুরস্কার পেয়েছেন। ১৯৮৬ সালে ‘শুভদা’ আর ১৯৯৭ সালে ‘হাঙর নদী গ্রেনেড’ ছবির জন্য শ্রেষ্ঠ পরিচালক হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার জেতেন তিনি। ২০০৪ সালে ভূষিত হন একুশে পদকে। অন্যান্য পুরস্কার ও সম্মাননার মধ্যে উল্লেখযোগ্য ‘সংগ্রাম’ ছবির জন্য বাংলাদেশ সিনে জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশন অ্যাওয়ার্ড (১৯৭৪), শের-ই-বাংলা স্মৃতি পুরস্কার (১৯৮৮), স্যার জগদীশচন্দ্র বসু স্বর্ণপদক (১৯৯৫), জহির রায়হাণ স্বর্ণপদক (১৯৯৫) জহির রায়হান আজীবন সন্মাননা, আন্তর্জাতিক কালাকার পুরস্কার (২০০৫) প্রভৃতি।

* ১৯৬৯ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর দেশের অন্যতম বিখ্যাত কাজী পরিবারের কে.জি.আহমেদের মেয়ে জোত্‍স্না কাজীকে বিয়ে করেন চাষী নজরুল ইসলাম।

* চাষী নজরুল ইসলাম পরিচালিত ছবি
ওরা ১১ জন(১৯৭২)
সংগ্রাম (১৯৭৪)
ভালো মানুষ (১৯৭৫)
বাজিমাত (১৯৭৮)
দেবদাস (১৯৮২)
চন্দ্রকথা (১৯৮৫)
শুভদা (১৯৮৬)
লেডি স্মাগলার (১৯৮৬)
মিয়া ভাই (১৯৮৭)
বেহুলা লক্ষিন্দর (১৯৮৭)
বিরহ ব্যথা (১৯৮৮)
মহাযুদ্ধ (১৯৮৮)
বাসনা (১৯৮৯)
দাঙ্গা ফাসাদ (১৯৯০)
পদ্মা মেঘনা যমুনা (১৯৯১)
দেশ জাতি জিয়া (১৯৯৩)
আজকের প্রতিবাদ (১৯৯৫)
শিল্পী (১৯৯৫)
হাঙর নদী গ্রেনেড (১৯৯৫)
হাছন রাজা (২০০১)
কামালপুরের যুদ্ধ (২০০২)
মেঘের পরে মেঘ (২০০৪)
শাস্তি (২০০৫)
সুভা (২০০৫)
ধ্রুবতারা (২০০৬)
দুই পুরুষ (২০১১)
দেবদাস (২০১৩)
অন্তরঙ্গ (মুক্তির অপেক্ষায়)
ভুল যদি হয় (মুক্তির অপেক্ষায়)

বাংলাদেশ সময় : ১২২০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১১, ২০১৫

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।