‘আজ ১ অক্টোবর ২০১৫, এই মুহূর্ত থেকে যে কোনো টিভি চ্যানেলের লাইভ শো এবং দেশ-বিদেশের কোনো অনুষ্ঠানে আমার সুর করা কোনো গান অনুমতি ছাড়া পরিবেশন করা থেকে বিরত থাকতে অনুরোধ করা হচ্ছে’- কথাগুলো আলাউদ্দিন আলীর।
গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে ১০টায় ফেসবুকে এক স্ট্যাটাসে এমন কথা বলেন অসংখ্য কালজয়ী গানের এই সুরকার ও সংগীত পরিচালক।
প্রতিযোগিতামূলক সংগীতানুষ্ঠানগুলোতে প্রতিযোগীরা বেশিরভাগ সময় আলাউদ্দিন আলীর গান গেয়েছেন। দেশের শীর্ষস্থানীয় প্রায় সব শিল্পী তার সুরে গেয়েছেন। তাদের অনেকে টিভিতে সরাসরি সম্প্রচার করা হয় এমন আয়োজনে গান গেয়ে থাকেন। নিজের সুর করা গানগুলোর মূল শিল্পীদের বেলায়ও একই অনুরোধ করেছেন কি-না, তা স্পষ্ট নয় আলাউদ্দিন আলীর স্ট্যাটাসে। ধারণা করা হচ্ছে, রয়্যালটি নিয়ে ক্ষোভ আর অসন্তুষ্টি থাকার কারণে এই স্ট্যাটাস দিয়েছেন তিনি। আলাউদ্দিন আলী ‘এলসিএস’ নামে একটি সংগঠন করেছেন যেটা শিল্পীদের রয়্যালটি এবং অধিকার রক্ষায় কাজ করে।
‘কেউ কোনদিন আমারে তো কথা দিলো না’, ‘শত জনমের স্বপ্ন’, ‘আছেন আমার মোক্তার’, ‘একবার যদি কেউ ভালোবাসতো’, ‘বাড়ির মানুষ কয়’, ‘বন্ধু তিনদিন তোর বাড়িত গেলাম’, ‘ভেঙেছে পিঞ্জর’, ‘এই দুনিয়া এখন তো আর সেই দুনিয়া নাই’- এমন অনেক জনপ্রিয় গানের সুরকার আলাউদ্দিন আলীর শারীরিক অবস্থা ভালো নয়।
আলাউদ্দিন আলী চলচ্চিত্রের সংগীত পরিচালনার পাশাপাশি বেতার এবং টেলিভিশনের জন্য গান সুর করেছেন। বিভিন্ন চলচ্চিত্রের জন্য গানও লিখেছেন তিনি। ১৯৫২ সালের ২৪ ডিসেম্বর তার জন্ম। বাবা ওস্তাদ জাবেদ আলী ও ছোট চাচা সাদেক আলীর কাছে প্রথম সংগীতে তালিম নেন। ১৯৬৮ সালে তিনি যন্ত্রশিল্পী হিসেবে চলচ্চিত্র জগতে আসেন এবং আলতাফ মাহমুদের সহযোগী হিসেবে যোগ দেন। এরপর তিনি প্রখ্যাত সুরকার আনোয়ার পারভেজ বিভিন্ন সুরকারের সহযোগী হিসেবে কাজ করেন।
ছোটবেলায় বেহালা বাজানোর জন্য অল পাকিস্তান চিলড্রেনস প্রতিযোগিতায় পুরস্কার পান আলাউদ্দিন আলী। ক্লাস থ্রি-তে পড়ার সময় ছোট চাচা একদিন তাকে একটি চায়নিজ বেহালা উপহার দেন। ওটা দিয়েই শুরু করেন বেহালা শেখা। ১৯৬৪ সালে তৎকালীন পাকিস্তানে সেরা বেহালাবাদকের পুরস্কার গ্রহণ করেন তিনি। বেহালা বাজাতে গিয়েই তিনি চলচ্চিত্রের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন। তিনি বেতারের শিশুদের অনুষ্ঠানে বেহালাবাদক ছিলেন। ১৬৯৭ সালে ‘বেহুলা’ ছবির যন্ত্রসংগীত দলে বেহালাবাদক হিসেবে বাজানোর সুযোগ পান তিনি।
১৯৭৫ সালে ‘সন্ধিক্ষণ’ চলচ্চিত্রের মাধ্যমে প্রথমবার সংগীত পরিচালক হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন আলাউদ্দিন আলী। ১৯৭৭ সালে একই সঙ্গে ‘গোলাপী এখন ট্রেনে’ এবং ‘ফকির মজনু শাহ’র কাজ করেন। দুটি ছবির গানই জনপ্রিয়তা পায় এবং তাকে বিশেষ পরিচিতি এনে দেয়। প্রায় তিন শতাধিক চলচ্চিত্রের গানে সুরারোপ করেছেন তিনি।
রেডিও, টেলিভিশন এবং চলচ্চিত্র মিলিয়ে প্রায় পাঁচ হাজার গানের সুরকার আলাউদ্দিন আলী। চলচ্চিত্রের গানে অনবদ্য কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ মোট আটবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছেন। এর মধ্যে ১৯৭৯, ১৯৮০ এবং ১৯৮১ সালে পরপর তিন বছর পুরস্কার জিতে হ্যাটট্রিক করেন তিনি।
বাংলাদেশ সময় : ০২৩১ ঘণ্টা, অক্টোবর ০২, ২০১৫
জেএইচ