ঢাকা, শুক্রবার, ৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫

বিনোদন

পঞ্চগড় থেকে জনি হক

আলোছায়া নেই, ছায়াছন্দ আছে না থাকার মতো

জনি হক, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৩১৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৫, ২০১৫
আলোছায়া নেই, ছায়াছন্দ আছে না থাকার মতো ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

পঞ্চগড় থেকে: শহরের অন্যান্য সড়কের মতো সিনেমা হল রোডেও ভোটের হাওয়া বইছে। এখানে বেশ কয়েকটি চা আর পানের দোকান।

চায়ে চুমুক দিতে দিতে কিংবা পান চিবুতে চিবুতে লোকজন আলোচনায় মগ্ন।
 
চারবারের মেয়র তৌহিদুল ইসলামের সঙ্গে আওয়ামী লীগের নতুন প্রার্থী জাকিয়া খাতুন পেরে উঠবেন কি-না তা নিয়ে চলছে বাতচিৎ। একপাশে মসুর ডালের গোডাউন। ভোটের আলোচনা ছাপিয়ে কৌতূহল জাগলো এই গোডাউনের অতীত জেনে।
 
গোডাউনটা একসময় ছিলো সিনেমা হল ‘আলোছায়া’। এর ঠিক উল্টো দিকে আরেকটি সিনেমা হল। এর নাম ‘ছায়াছন্দ’। এজন্যই জায়গাটির নাম সিনেমা হল রোড। জেলার নিম্ন-মধ্যবিত্তদের কাছে এটাই বিনোদনের অন্যতম কেন্দ্র। এটি এখন চলছে খুড়িয়ে খুড়িয়ে। তেমন দর্শানার্থীর দেখা মিলছে না বলা চলে।

ডিজিটাল হওয়ায় সিনেমা হলটি টিকে আছে কোনো রকম। ৮০ হাজার টাকা দিয়ে মেশিন কিনে চালানো হচ্ছে ছবি (ফিল্ম)। মেশিনম্যান ছবি চালিয়ে দিয়ে বাইরে এসে হাওয়া খাচ্ছেন! তার সঙ্গে কথা বলে ভেতরে ঢুকে চোখে পড়লো হাতেগোনা ১০-১৫ জন দর্শক। সবাই ৩০ টাকা করে টিকিট কেটে ঢুকেছেন। মানুষ কম হয় বলে ড্রেস সার্কেল বন্ধ রাখা হয়েছে।

সেখানে যাওয়ার সিঁড়ি থেকে শুরু করে ভেতরটাও হয়ে উঠেছে মাকড়সাদের অভয়ারণ্য!
 
বৃহস্পতিবার (২৪ ডিসেম্বর) এসে দেখা গেলো ‘কাটা রাইফেল’ ছবিটি চলছে। এর পোস্টারটা কুরুচিপূর্ণ। আগাগোড়া অশ্লীল। বিকিনি পরা এক নায়িকার গলা কেটে বসানো হয়েছে চিত্রনায়িকা মুনমুনের ছবি। আরও দু’জন নায়িকার স্বল্পবসনা ছবি। আছেন চিত্রনায়ক রুবেল। বোঝাই যাচ্ছে কাটপিস জুড়ে দেওয়া হয়েছে ছবিতে। সিনেমা হলে কর্মরত দু’জনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেলো, যে পাঁচ-দশজন দর্শক হচ্ছে এখন, কাটপিস না চালালে নাকি তা-ও হতো না। তাদের ভাষ্য, সামাজিক ছবি চলে না। সামাজিক ছবির ভাত নাই এখানে!

ছায়াছন্দের বহিরাঙ্গ দেখলে বুঝতে কষ্ট হবে এটা সিনেমা হল। জীর্ণ-শীর্ণ দেয়াল। ভেঙে যাবে-যাবে অবস্থা! এর চেয়ে বরং গোডাউন বানিয়ে রাখা আলোছায়াকে একটু মজবুত মনে হলো দেখতে। চাইলে উদ্যোক্তা রেজাউল করিম রেজা ছায়াছন্দকেও গোডাউন বা মার্কেট বানিয়ে ফেলতে পারেন। তার কাছে নাকি প্রস্তাবও এসেছে কয়েক জায়গা থেকে। কিন্তু চলচ্চিত্র ব্যবসার প্রতি ভালোবাসা থেকে তিনি তাদের শুনিয়ে দিয়েছেন, নিজের চরকায় তেল দিন!
 
রেজার আরেকটি পরিচয় তিনি জেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি। বোঝা যাচ্ছে, তিনি ব্যবসাটা সত্যিই ভালোবাসেন। কিন্তু কাটপিস চালিয়ে এই ভালোবাসা ধরে রাখাটা গ্রহণযোগ্য নয় কারও কাছে। এতে যে যুবসমাজের অবক্ষয় হচ্ছে, সেদিকটাও তাকে ভেবে দেখতে হবে। শুধু ব্যবসায়ী নন, তিনি যে একজন রাজনীতিবিদও!
 
আসন্ন পৌরসভা নির্বাচনে পঞ্চগড়ে যিনি মেয়র হবেন, তার উচিত হবে বিনোদনকেন্দ্রিক দিকগুলোর ওপর নজরদারির ওপর গুরুত্ব দেওয়া। এমনিতেই শহরটিতে কোনো বিনোদনকেন্দ্র নেই। তাই রাস্তাঘাট মেরামত, পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা উন্নত করা, নদী-নালা সুরক্ষা- এমন জনগুরুত্বপূর্ণ কাজের পাশাপাশি সিনেমা হল নির্মাণের ওপরও মেয়রের গুরুত্ব দেওয়া উচিত বলে মনে করছেন পঞ্চগড়ের সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বরা।
 
বড় বড় বিপণি বিতানের উদ্যোক্তাদের স্বল্প পরিসরে হলেও সিনেপ্লেক্স নির্মাণে উদ্বুদ্ধ করা ও সব বয়সী বিশেষ করে নারী দর্শকদের হলমুখি করার ক্ষেত্রেও মেয়র কিংবা ওয়ার্ড কাউন্সিলরদের ভূমিকা রাখা বাঞ্ছনীয় বলে মনে করছেন ভোটাররা।
 
বাংলাদেশ সময়: ০৩০৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৫, ২০১৫
জেএইচ/এসআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।