ঢাকা, মঙ্গলবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

বিনোদন

টেলিভিশন শিল্পে চলমান আন্দোলন প্রসঙ্গে ফারুকীর দু’চার কথা

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০৫৭ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৫, ২০১৬
টেলিভিশন শিল্পে চলমান আন্দোলন প্রসঙ্গে ফারুকীর দু’চার কথা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী

টিভি সংশ্লিষ্ট কলাকুশলীদের বিভিন্ন সংগঠনের জোট সংগঠন ফেডারেশন অব টেলিভিশন প্রফেশনালস অর্গানাইজেশনের (এফটিপিও) সাত দফা দাবির মধ্যে কয়েকটির সমালোচনা করলেন নির্মাতা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী। তার মতে, এসবের কোনো যুক্তি নেই।

টিভি সংশ্লিষ্ট কলাকুশলীদের বিভিন্ন সংগঠনের জোট সংগঠন ফেডারেশন অব টেলিভিশন প্রফেশনালস অর্গানাইজেশনের (এফটিপিও) সাত দফা দাবির মধ্যে কয়েকটির সমালোচনা করলেন জনপ্রিয় নির্মাতা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী। তার মতে, এসবের কোনো যুক্তি নেই।

সোমবার (৫ ডিসেম্বর) দুপুরের পর ফেসবুকে এক স্ট্যাটাসে দাবিগুলো কেনো অযৌক্তিক সেই ব্যাখ্যা দিয়েছেন ফারুকী। তিনি মনে করেন, বিদেশি সিরিয়াল বন্ধের দাবি একটি অপ্রয়োজনীয় দাবি। এক্ষেত্রে এফটিপিও বলতে পারতো, বিদেশি সিরিয়ালের চাংক এক ঘণ্টার বেশি রাখা যাবে না।

নতুন সাত দফার মধ্যে নাটকের বাজেট দ্বিগুণ করার দাবি প্রসঙ্গে ফারুকীর মন্তব্য- ‘যে প্রোডাকশন চলবে না সেটারও টাকা দ্বিগুণ দিতে হবে? বাজেট নির্ধারণ করবে বাজার। কোনো সংঘশক্তি না। আবার কোনো চ্যানেল তার ব্র্যান্ড ইমেজের জন্য একটা খুব ভালোমানের প্রোডাকশন বানাতে পারে অনেক টাকা দিয়ে, যেটা হয়তো জনপ্রিয় হবে না। সেটাও চ্যানেলের এখতিয়ার, এফটিপিওর না। ’

যোগ্য ব্যক্তিদের দিয়ে প্রিভিউ কমিটি গঠন করার দাবিও জানিয়েছে এফটিপিও। টেলিভিশনগুলোর প্রিভিউ কমিটির বেহাল দশার বিষয়টি মেনে নিয়েছেন ফারুকীও। তবে এটাকেও তিনি মনে করছেন অর্ধসেদ্ধ দাবি। তার প্রশ্ন- কেমন যোগ্য ব্যক্তি চায় এফটিপিও? যোগ্য ব্যক্তির সংজ্ঞা কী? তার মন্তব্য- এফটিপিওর অনেকেই যাদের যোগ্য ব্যক্তি মনে করে, এদেশের অনেক দর্শক তাদের কাজকে যোগ্য মনে করে না। সেক্ষেত্রে করণীয় কী?

ফারুকীর-ব্যাখ্যায়-এফটিপিওর-সাত-দফা-দাবির-সমালোচনাকরণীয় সহজ জানিয়ে ফারুকী বলেন, ‘অডিয়েন্স কাউন্ট জেনুইন হয়ে গেলে অডিয়েন্সই জানাবে তার মতামত। তখন আর আজেবাজে কাজ দিয়ে পার পাওয়া যাবে না। আর অজনপ্রিয় অথচ আর্টিস্টিক্যালি মানম্পন্ন কাজগুলোর ক্ষেত্রে কী হবে? ওটা টিভি চ্যানেল তার ব্র্যান্ড ইমেজ বাড়ানোর জন্যই করবে। তারাই বিচার করবে কাকে দিয়ে কাজ করালে তার ইমেজ বাড়বে। সেখানেও সংঘশক্তির কিছুই করার নেই। ’

এ প্রসঙ্গে সরকারের কয়েকটি প্রতিশ্রুতিতে আশা দেখছেন ফারুকী। ভারতীয় চ্যানেলের ডাউনলিংক ফিতে অতিদ্রুত ভারসাম্য আনার পাশাপাশি পাশাপাশি দর্শকসংখ্যা নিরূপণের বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির ব্যাপারেও সরকার দ্রুত পদক্ষেপ নিচ্ছে বলে শোনা যাচ্ছে।

ফারুকীর-ব্যাখ্যায়-এফটিপিওর-সাত-দফা-দাবির-সমালোচনাদ্রুতই সব টিভি চ্যানেলকে কন্ডিশনাল একসেস সিস্টেম বা সেট টপ বক্সের আওতায় নিয়ে আসা হবে বলে আশাবাদী সবাই। এতে করে এই মাধ্যমের বহু অনিয়ম আর দুর্নীতি দূর হবে বলে মনে করেন ফারুকী। তার ভাষ্য, ‘এর ফলে লড়াই হবে ভালো কনটেন্টের। তখন ভালো কনটেন্টের দামও বাড়বে। আমি বিশ্বাস করি, এই লড়াইয়ে জেতার মতো তরুণ প্রতিভা আমাদের আছে এবং সামনে আরো প্রতিভার উদয় ঘটবে। ’

তবে এফটিপিও’র একটি দাবিকে ভয়াবহ বলে উল্লেখ করেছেন ফারুকী। তা হলো- টেলিভিশনের জন্য কোনো প্রোডাকশন বানাতে হলে অবশ্যই এফটিপিওর তালিকাভুক্ত সদস্য হতে হবে। তার মন্তব্য, ‘এরকম নিয়মের আওতায় পান্ডাগিরি করার ক্ষমতা কাউকেই দেওয়ার কোনো কারণ নেই। কারণ এফটিপিওর নেতৃস্থানীয় অনেকেই অতীতে প্রমাণ করেছেন নানারকম রুচির কাজকে প্রশংসা করার ক্ষমতা তাদের নেই। কেউ উচ্চ আসনে বসে বসে তাদের রুচি দিয়ে তরুণ অনাগত নির্মাতাদের আর্টিস্টিক এক্সপ্রেশন নিয়ন্ত্রণ করবেন, এই দিন আর নেই। ’

এফটিপিও’র প্রবীণ নেতাদের সমালোচনা করে ফারুকী বলেছেন, ‘আপনাদের মধ্যে অনেকে এই নির্ধারণী ক্ষমতায় থাকলে, আজকের বাংলাদেশের বহু তরুণ নির্মাতা ছবি বানানো দূরের কথা, ইন্ডাস্ট্রিতেই ঢুকতে পারতো না। আজকে বাংলাদেশের নাম যে বারবার ভ্যারাইটি, হলিউড রিপোর্টার, স্ক্রিন ডেইলিতে আসছে তার আশিভাগই বন্ধ হয়ে যেতো। ইটিভি বাংলাদেশে বড় বিপ্লব করেছিলো এই মোগল কালচার ভেঙে দিয়ে অজস্র তরুণ প্রতিভাকে খুঁজে বের করার মধ্য দিয়ে। এই মোগলামির প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়ার চেষ্টা আজকে এতো পরে এসে করা যাবে না। ’

যে বা যারাই টিভির জন্য কাজ করবে, তাদের একটা কাজ প্রচারিত হলেই তাদেরকে ট্রেড বডির সদস্য করে এই বডিকে শক্তিশালী করার আহ্বান জানিয়েছেন ফারুকী। যদিও তিনি মনে করেন, টেলিভিশন শিল্পে ট্রেড বডি না থাকার অসুবিধা যেমন আছে, তেমনি সুবিধাও রয়েছে। তার দৃষ্টিতে খারাপ দিক হলো- ‘ইন্ডাস্ট্রি বিপদে পড়লে কোনো সাংগঠনিক জায়গা থেকে প্রতিবাদ করা যায় না। ’ আর ভালো দিক হলো- ‘কোনো ধরনের দাদাগিরির বাইরে নতুন প্রতিভা বিকাশে লাভ করতে পারে। ’

অনেকে কানাঘুষা করছেন, টেলিভিশন শিল্পে বাণিজ্যিকভাবে সুবিধাজনক অবস্থানে নেই তারেই যার যার ব্যক্তিগত ঝাল এবং হতাশা মেটানোর চেষ্টা করছেন। কথাটা কিছু কিছু ক্ষেত্রে সত্য বলে ফারুকীর মনে হচ্ছে। তবে তিনি বললেন, ‘এফটিপিও একটা কার্যকর বডি হওয়ার চেষ্টা করে দেখতে পারে। তবে সেজন্য তাদেরকে দূরদর্শী, উদার ও বাস্তববোধসম্পন্ন হতে হবে। ’

এদিকে বিদেশি চ্যানেলে প্রতারণার মাধ্যমে বিজ্ঞাপন ব্যবসা দ্রুততা ও সততার সঙ্গে বন্ধ করার জন্য সরকারের প্রশংসা করেছেন ফারুকী। তিনি মনে করেন, এটা অবিস্মরণীয় হয়ে থাকবে। আগামীতেও সরকারের কাছে দেশের স্বার্থে সবসময় এমন দায়িত্বপূর্ণ পদক্ষেপ দেখার প্রত্যাশা তার।

বাংলাদেশ সময়: ১৬৪৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০৫, ২০১৬
জেএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।